একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন বাবা ও ছেলে

বগুড়ায় একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে নৈশপ্রহরী বাবা ও তাঁর ছেলে। ছেলেবেলা থেকেই পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল তাঁর। সংসারে অভাবের কারণে অষ্টম শ্রেণি পড়ার পর উপরের ক্লাসে যাওয়া হয়নি। সংসারে অভাবের কারণেই হাল ধরতে চাকরি নেন বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরীর। বিবাহ, সংসার, সন্তান সন্তানাদি নিয়েই নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারের বয়স পঞ্চাশ এর কাছাকাছি। তিনি শিক্ষা গ্রহণের ইচ্ছা মন থেকে মুছে ফেলতে পারেননি। সে জন্য এবার এসএসসি পরীক্ষা ২০২৩ সালে অংশ গ্রহণ করেছেন তিনি। তাঁর ছেলে আসিফ তালুকদারও তাঁর সাথে একই পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে।

বগুড়ার ধুনট উপজেলার গোপালনগর ইউনিয়নের বিশাড়দিয়াড় গ্রামে এবারের এসএসসি পরীক্ষা জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি। তাঁর ছেলে আসিফ তালুকদার বগুড়ার এমপিএসটি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র। জাহাঙ্গীর আলমও একই উচ্চ বিদ্যালয়ের কারিগরি শাখার ছাত্র হিসেবে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। তিনি সেই উচ্চ বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি করেন। নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর আলমের পরীক্ষাকেন্দ্র বগুড়ার চিকাশি টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিএম ইনস্টিটিউট। তাঁর ছেলে আসিফ তালুকদার ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে।

এ বিষয়ে এমপিএসটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক মো: গোলাম মোস্তফা বলেন, যেকোন বয়সেই মানুষ শিক্ষা অর্জন করা মৌলিক অধিকার। এ ধরনের মন মানসিকতা সমাজের জন্য খুবই ইতিবাচক। বর্তমান প্রজন্মকে আলোকিত করবে। নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর আলম তালুকদারকে দেখে সাধারণ মানুষ শিক্ষা গ্রহণ করার জন্য আরও অনুপ্রাণিত হবে বলেও তিনি মনে করছেন।

তাঁর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জাহাঙ্গীর আলমের ১৩ বছর তখন তাঁর মা-বাবা মারা যান। তখন তিনি অষ্টম শ্রেণিতে লেখাপড়া করত। মা-বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারে অভাবের কারণে তাঁর আর লেখাপড়া করার সুযোগ হয়ে ওঠেনি। হালকা বয়সে সংসারের হাল ধরেন তিনি। তারপর কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি ২০ বছর বয়সেই বিয়ে করেন। পরে এমপিএসটি উচ্চবিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি নেন।

এছাড়াও জাহাঙ্গীর আলমের বড় মেয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। বড় ছেলে আসিফ তালুকদার এবার ২০২৩ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করেছে। আর তাঁর ছোট ছেলে প্লে গ্রুপে লেখাপড়া করছে।

নিজের বিষয়ে নৈশপ্রহরী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘ছোটবেলা থেকে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হওয়ার অনেক আশা ছিল আমার। কিন্তু আমি পারিনি। অভাবী সংসার চালাতে বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরীর চাকরি নিয়েছি। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ছেলের কাছ থেকে বই নিয়ে পড়ালেখা করছি। সমাজে আর দশজনের মতো নিজেকেও একজন শিক্ষিত মানুষের পরিচয় দিতে লেখাপড়া শুরু করেছি।

জাহাঙ্গীর আলম তালুকদার আরও বলেন, মানুষের শিক্ষার কোনো বয়স লাগে না। নিজের ইচ্ছাশক্তি, মনোবল আর নিজের প্রচেষ্টা পৌঁছে দেবে গন্তব্যে। এই লক্ষ্য পৌঁছার জন্য তিনি নিজেকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করতে পড়াশোনা করার পথ বেছে নিয়েছেন।

তাঁর ছেলে আসিফ তালুকদার বলে, আমি আমার বাবা সহ একসঙ্গে এসএসসি পরীক্ষা দিতে পেরে নিজেকে গর্বিত মনে করছি। তবে পড়াশোনা শেষ করে সরকারি চাকরিজীবী হওয়ার ইচ্ছা আছে আমার।

এদিকে ধুনট পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজ কেন্দ্রের সচিব বিকাশ চন্দ্র সাহা বলেছেন, শিক্ষার আসলে কোনো বয়স নেই। জাহাঙ্গীর আলম সেটা বুঝতে পেরে লেখাপড়া শুরু করেছেন, সে জন্য তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত।

সূত্র:- Right News BD

en_USEnglish