অনেকে আছেন রাতে বা দিনের বেলায় নিজের অজান্তে ঘুমের সময় নাক ডাকার শব্দ করে থাকেন। ঘুম যাওয়ার সময় এই শব্দকে সাধারণ নাসিকা গর্জন বা নাক ডাকা বলা হয়। ঘুমের মধ্যে নাক ডাকার অভিজ্ঞতা কম-বেশী আমাদের সবারই আছে। এছাড়াও ঘুমের মধ্যে নিজের অজান্তেই অনেক সময় এই শব্দের ব্যাঘাত ঘটাই। কিন্তু নিজের অজান্তে নাক ডাকার কথা বলতে পারিনা বলে অস্বীকার করে থাকি। ঘুমের সময় নাক ডাকার কারণ ও সমাধান নিয়ে নীচে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করা হয়েছে।
ঘুমের মধ্যে নাক ডাকে কেন?
সারাদিন কঠোর পরিশ্রমের পর শরীর অনেক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ক্লান্ত শরীর ঘুমের সময় নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে বাধাপ্রাপ্তি হওয়ার কারণে নাক ডাকার সমস্যা সৃষ্টি হয়। এচাড়াও নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মতে ‘‘ ঘুমের সময় নাক ডাকার শব্দটা নাক থেকে আসে বললে ভুল হবে। মূলত ঘুমের সময় এই শব্দটা গলা আর নাকের মধ্য স্থান থেকে আসে। সেখানে নিঃশ্বাসের গতিবিধি কোনও ভাবে বাধা গ্রস্থ হলেই এই শব্দের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও চিকিৎসা পরিভাষায় এর নাম বলাহয় ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’।
স্লিপ অ্যাপনিয়া মানেই নাক-ডাকা সেটি কিন্তু নয়। বলা যায় সব নাক-ডাকাই ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ নয়। অর্থাৎ অনেকের ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ থাকলে ঘুমের সময় নাক ডাকার সমস্যা হবেই। এছাড়াও ‘অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া’র কারণে ঘুমের মধ্যে মৃত্যু হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
নাক ডাকার কারণ?
- ঘুমের মধ্যে নাকের ভিতরে বায়ু চলাচলের বাধা প্রাপ্তি।
- গলার পিছনে আল-জিভ অথবা সফ্ট প্যালেটের দিকে টিস্যু ঢিলে হলে ভাইব্রেশনের জন্য।
- জিভের নীচের অংশ (টাং বেস) থেকেও এই শব্দের সৃষ্টি হতে পারে।
- বয়সের কারণেও অর্থাৎ সাধারণত ৩৫ হওয়ার পর এই সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়াও অনেকের ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হতে পারে।
- সাইনুসাইটিস বা পিলিপাসের (নাকের ভিতরের অংশে মিউকাস পর্দায়) সমস্যা।
- নাসিকাগহ্বরের নাকের ভিতরের অংশ ফুলে ওঠা থেকেও।
- শ্বাসকষ্ট জনিত সমস্যা থাকলেও।
নাক ডাকার সমস্যা সমাধান
- শরীরের অতিরিক্ত ওজন কমাতে হবে।
- শরীরের অল্প সমস্যা হলেই জীবনযাপন পরিবর্তন করা দরকার। যেমন, এক পাশ ফিরে শুয়ে থাকলে
- নাক ডাকার সমস্যা অনেকটাই কমে যায়। সেক্ষেত্রে চিত হয়ে শুয়ে থাকার অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে।
- রাতের বেলায় ঘুমনোর আগে ভারী খাবার খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করতে হবে। রাতে খাওয়া শেষ হলেই সঙ্গে সঙ্গে শুতে যাবেন না। ঘুমানোর পূর্বে কমপক্ষে ১ থেকে ২ ঘন্টা সময় হাতে রেখে রাতের খাওয়া সেরে ফেলেন। এছাড়াও প্রত্যেক রাতে সঠিক সময়ে বিছানায় যাওয়ার অভ্যাস করুন। প্রত্যেকদিন স্লিপ হাইজিন রক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন।
- মাদক নিয়ন্ত্রণ ,ঘুমের ওষুধ সহ সম্পুর্ণরুপে ধুমপান বন্ধ করতে হবে।
- এছাড়াও মুখ এবং গলার পেশীর ব্যায়াম করেও ভালো ফলাফল পাওয়া যেতে পারে।
আমরা সাধারণত শরীরের অতিরিক্ত মেদ বলতে হাত, পা বা পেটের মেদ ভুঁড়ি বুঝি এবং এগুলো কমানোর জন্য নিয়মিত ব্যায়াম করে থাকি। এছাড়াও মূলত শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রতঙ্গকে সুস্থ রাখতে আলাদা আলাদা ব্যায়াম করার প্রয়োজন হয়। চলুন তাহলে দেখে নেই মুখের কিছু ব্যায়াম:
- জিহ্বাকে তালুর উপরে দিকে ধাক্কা দিন এবং ধীরে ধীরে পেছনের দিকে টানুন।
- জিহ্বাকে উপরের দিকে চুষুন এবং ধীরে ধীরে পুরো জিহ্বা উপরের তালুতে চেপে ধরুন।
- জিহ্বার পেছনের অংশকে মুখের নিচের দিকে চেপে ধরুন। তার সঙ্গে জিহ্বার অগ্রভাগ নিচের দাঁতে পাটির সামনের চেপে রাখুন।
- আলাজিহ্বা ও নরম তালু (মুখের ভেতরের নরম অংশ) চেপে ধরে “আ-আ-আ” শব্দ করুন।
বিশেষ করে প্রতিদিন এই ব্যায়ামগুলো মুখের পেশীকে সুস্থ রাখে এবং রাতে নিঃশ্বাসের জায়গা রাখতে অনেক সাহায্য করে।
এছাড়াও স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে সচেতন থাকার চেষ্টা করবেন। ‘ধন্যবাদ’
সূত্র:- Right News BD
One thought on “ঘুমের সময় নাক ডাকার কারণ ও সমাধান”
Comments are closed.