মানবদেহে পুষ্টির ঘাটতি দেখা দিলে বেল খেলে পুষ্টিগুণে ভরপুর চাহিদা পূরণ করতে সাহায্য করে। বেল আমাদের দেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ফল, যা বিশেষ করে শরবতের জন্য পরিচিত। বেলের শরবত যেমন স্বাদে অনন্য, তেমনই এটি স্বাস্থ্যের জন্যও ভীষণ উপকারী। শুধু শরবত নয়, পাকা বেল সরাসরিও খাওয়া যায় এবং কাঁচা বেল বিভিন্নভাবে খেলে স্বাস্থ্যর জন্য বেশ উপকারিতা মেলে।
যদিও অনেকেই আছেন এই ফলটি খেতে খুব একটা পছন্দ করেন না, তবে এই ফলে উপকারিতা আর পুষ্টিগুণে ভরপুর সম্পর্কে জানলে নিশ্চয়ই তারা বেল খেতে আগ্রহী হবেন।
পুষ্টিবিদ নুসরাত জাহান জানিয়েছেন, ‘বেল খাওয়া শরীরের জন্য পুষ্টিগুণে পরিপূর্ণ। সুস্বাস্থ্যের জন্য বেল খাওয়া খুবই জরুরি। এতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম সহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ উপাদান রয়েছে।’
পুষ্টিগুণে ভরপুর পেতে বেল খেলে যেসব উপকারিতা পাবেন
বেল খাওয়ার ফলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এতে থাকা ফেনোলিক কম্পাউন্ড একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা শরীর থেকে ক্ষতিকর ফ্রি-রেডিকেল দূর করে এবং বার্ধক্যের প্রভাবকে প্রতিরোধ করে।
কাঁচা বেল সেদ্ধ করে বা পাকা বেলের শরবত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। বেলে থাকা ফাইবার খাবার হজমে সহায়ক, যা হজমশক্তি বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পেটের সমস্যা কমাতে কার্যকর।
পাকা বেলে আলসার উপশমকারী উপাদান রয়েছে, যা আলসারের সমস্যায় ভোগা ব্যক্তিদের জন্য উপকারী। যারা এ সমস্যায় ভুগছেন, তারা বেলের শরবত খেলে উপকার পাবেন।
যাদের পাইলস, এনাল ফিস্টুলা বা অন্যান্য মলদ্বারের রোগ আছে, তাদের জন্য বেল অত্যন্ত উপকারী।
পাকা বেলে মেথানল নামক একটি উপাদান থাকে, যা রক্তের সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া, বেলের শরবত ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং রক্ত শুদ্ধ করতে সহায়ক।
বেল একটি ভালো ভিটামিন সি উৎস, যা স্কার্ভি সহ ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। বেলের অ্যান্টি-মাইক্রোবিয়াল উপাদান যক্ষা নিরাময়ে সাহায্য করে। ক্লান্ত শরীরে কর্মশক্তি ফিরিয়ে আনতে পাকা বেলের শরবত কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
বেল খেলে শরীরের বিভিন্ন ধরনের ব্যথা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়, কারণ এতে এন্টি-ইনফ্লামেটরি উপাদান থাকে।
বেলে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-প্রলিফেরেটিভ এবং অ্যান্টি-মিউটাজেন উপাদান ক্যানসারের ঝুঁকি হ্রাস করতে সহায়ক।
বেলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে, যা চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। লিভারের স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য বেলে থাকা থিয়ামিন এবং রিবোফ্লাভিন কার্যকর। কাঁচা বেল রোদে শুকিয়ে গুঁড়ো করে পানিতে মিশিয়ে খেলে ডায়রিয়া সমস্যার উপশম হতে পারে, তবে পাকা বেল ডায়রিয়ার ক্ষেত্রে খাওয়া উচিত নয়।
কাঁচা বেল কেটে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি খেলে আমাশয়ের সমস্যার উপশম হতে পারে।
ম্যালেরিয়া হলে কাঁচা বেলের শরবত বা ভিজিয়ে রাখা পানি খেলে উপকার পাওয়া যায়। কাঁচা ও পাকা বেল পেটের বিভিন্ন সমস্যা দূর করতে সহায়ক।
বেল খাওয়ার অপকারিতা
বেল শরীরের জন্য পুষ্টিগুণে ভরপুর হলেও অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়া উচিত নয়। অতিরিক্ত বেল খেলে শরীরের ওজন বৃদ্ধি পেতে পারে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
সূত্র: Right News BD