মাথার টাকে চুল গজানোর উপায়

অনেকেই দেখা যায় বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে প্রশ্ন করেছেন মাথার টাকে চুল গজানোর উপয় কী? এই প্রশ্নে উপর ভিত্তি করে এই পোস্টে এমন দশটি খাবারের নাম বলা হবে যা খেলে স্বাস্থ্য সহ চুল ঘন ও মজবুত করতে সাহায্য করবে। এছাড়াও আরো কিছু জানতে পারবেন কোন তেল ও ভিটামিন ট্যাবলেট খেলে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।

আর পোষ্টের শেষ পর্যায়ে মাথার টাকে চুল গজানোর সঠিক উপায় ও আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতির পরামর্শ। এখনই ১০টি খাবারের কথা জানতে আরো পড়ুন।

বাদাম

বাদাম

বাদাম, কাজুবাদাম, পেস্তা এবং বাদামে স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, বিশেষ করে ওমেগা সিক্স প্যাক। যা চুলের গোড়া সতেজ ও চুল লম্বা রাখতে সাহায্য করে। আমাদের শরীর নিজে থেকে এই ওমেগা সিক্স ফ্যাট তৈরি করতে পারে না। এটা খাবার থেকে নিতে হবে। এর অভাবে চুল পড়ে এবং চুলের রং হালকা হয়ে যায়। তাই প্রতিদিনের নাস্তায় কিছু বাদাম রাখতে পারেন কিন্তু বেশি খাবেন না তাহলে আপনার শরীরের ওজন বাড়তে পারে।

কমলা রঙ্গেল ফল

কমলা রঙ্গেল ফল

কমলা সবজি এবং ফল যেমন মিষ্টি আলু, গাজর, আম, পেঁপে এবং মিষ্টি কুমড়া ভিটামিন এ সমৃদ্ধ। হেয়ার ফলিকল রোল মানে চুলের গোড়া যেখান থেকে চুল গজায় তা সঠিকভাবে কাজ করার জন্য ভিটামিন এ প্রয়োজন। আর এর একটি খুব ভালো উৎস হল এই হলুদ এবং কমলা রঙের ফল ও সবজি। আধা কাপ গাজর প্রতিদিনের ভিটামিন এ এর চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি জোগান দেয়। তাই প্রতিদিন কিছু হলুদ শাকসবজি খাওয়ার চেষ্টা করুন।

তৈলাক্ত মা

তৈলাক্ত মাছ

একটি প্রচলিত আছে সামুদ্রিক মাছ যেমন টুনা, স্যামন থেকে ওমেগা-৩ ফ্যাট খাওয়া উচিত, তবে আমাদের দেশি মাছ যেমন ইলিশ, কই, মলা এবং চাপিলাতেও ওমেগা-৩ ফ্যাট থাকে। আপনার জন্য সুবিধাজনক মাছ খান। এগুলো চুল ঘন করতে সাহায্য করে এবং প্রোটিনের উৎস।

ডিম

ডিম

কেন ডিম সুন্দর চুলের জন্য আপনার সেরা সেরা হতে পারে তা ব্যাখ্যা করি। আমাদের চুল শর্করা বা চর্বি দিয়ে তৈরি নয়, চুল প্রায় সম্পূর্ণ প্রোটিন দিয়ে তৈরি। এবং আমরা গবেষণা থেকে নিশ্চিতভাবে জানি যে খাবারে প্রোটিনের অভাবে চুল পড়ে। কিন্তু আমাদের অনেকেরই খাবারে পর্যাপ্ত প্রোটিন নেই কারণ আমরা সাধারণত অনেক বেশি ভাত খাই।

তাই মাথার টাকে চুল গজানোর জন্য খাদ্য তালিকায় ডিম রাখুন। এছাড়াও আরও কিছু রয়েছে যেমন বায়োটিন, সেলেনিয়াম, ভিটামিন বি ১২ ইত্যাদি। এগুলো চুলকে ঘন ও সুন্দর রাখতে যথেষ্ট সাহায্য করে।

পালং শাক

পালং শাক

চুলের উপকারিতা পালংশাক একটি সুন্দর খাবার যাতে চারটি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা চুলের ভেতর থেকে পুষ্টি যোগায়: ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, আয়রন, ফ্লোরাইড। মাথার টাকে চুল গজানোর ক্ষেত্রে এ সব ভিটামিন চুলের জন্য অনেক প্রয়োজন।

ডাল

ডাল

সুন্দর চুলের জন্য ডাল খুবই উপকারী। ডালে প্রোটিন এবং ভালো পরিমাণে আয়রণ থাকে। আয়রণ আমাদের মাথার ত্বকে রক্ত চলাচল করতে সাহায্য করে এবং অক্সিজেন চুলের গোড়ায় পৌঁছায়। গবেষণা থেকে নিশ্চিতভাবে দেখা গেছে যে আয়রণের অভাবেজনিত সম্যসার কারণে চুল পড়ে। জিঙ্ক, ফোলেট সুন্দর চুলের জন্য ডালে আরও কিছু উপাদান রয়েছে। যেমন খুব পাতলা বা ঘন করে রান্না করা ডাল খেলে পুষ্টিগুণ বেশি পাওয়া যায়।

বিভিন্ন ধরনের বীজ

বিভিন্ন ধরনের বীজ

যেমন চিয়া বীজ, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখী বীজ এবং তিশির বীজ সুন্দর চুলের জন্য অনেক মূল্যবান উপাদান রয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, চিয়া বীজে এক ধরনের ওমেগা-৩ ফ্যাট থাকে। মিষ্টি কুমড়ার বীজে জিঙ্ক, সূর্যমুখীর বীজে বায়োটিন, তিশির বীজে সেলেনিয়াম থাকে। গবেষণায় চুল পড়া এবং চুল পড়ার মধ্যে একটি যোগসূত্র পাওয়া গেছে। কিভাবে বীজ খাবেন আপনি ভাত খাওয়ার সময় তরকারিতে সামান্য বীজ ছিটিয়ে দিতে পারেন। রাতে, আপনি চিয়া বীজের সাথে সামান্য দুধ মিশিয়ে ফ্রিজে রাখতে পারেন। সকালে কিছু ফল দিয়ে খান।

ছোলা

ছোলা

চুলের জন্য তিনটি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে অর্থাৎ আয়রন, জিঙ্ক এবং প্রোটিন এই তিনটির ঘাটতি হলে চুল পড়তে পারে। তাই চুল সুন্দর করতে মাঝে মাঝে ছোলা রাখতে পারেন।

টক দই

টক দই

এটি অন্যান্য উপাদানের সাথে প্রোটিনের আরেকটি উৎস যা চুলের জন্য উপকারী। মুরগির মাংস প্রোটিনের জন্য ভালো। সুন্দর চুলের জন্য ভিটামিন সি অতন্ত্য গুরুত্বপূর্ণ। ভিটামিন সি-এর অভাবে চুল বাঁকানো ও পিছিয়ে পড়াকে চিকিৎসার ভাষায় বলা হয় কটসকো হেয়ার। ভিটামিন সি-এর অভাব হলে শরীর আয়রণ শোষণ করতে পারে না, ফলে চুল পড়ে।

টক ফল

শরীর নিজে থেকে ভিটামিন সি তৈরি করতে পারে না, তবে টক ফল খেলে সেখান থেকে সহজেই ভিটামিন সি নেওয়া যায়। উদাহরণস্বরূপ, একটি কমলা দৈনিক চাহিদার প্রায় ৮০% পূরণ করে। যারা টক কম খান তাদের জন্য টমেটো, পেয়ারা ফল হতে পারে ভিটামিন সি এর ভালো উৎস। এই দশ ধরনের খাবার চুলের ভিতর থেকে পুষ্টি দিবে।

এখন জেনে নিন বাইরে থেকে পুষ্টি দিতে আপনি কী ব্যবহার করতে পারেন। পাম্প কিংসেড অয়েল বা কদুর তেল ব্যবহার করে চুল পড়ার সমস্যা অনুভব করা রোগীদের উপর পরিচালিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে এই তেলটি ব্যবহার করার তিন মাস পরে, তাদের চুল আগের চেয়ে পুনঃবৃদ্ধি এবং ঘন বা মোট হয়ে যাবে। তাই আপনি কদুর তেল ব্যবহারের জন্য চেষ্টা করতে পারেন। যেকোনো ভালো ব্র্যান্ডের কদুর তেল আপনি ব্যবহার করতে পারেন চুল পড়া রোধ করতে।

ভিটামিন ট্যাবলেট

ভিটামিন ট্যাবলেট

এবার আসা যাক কোন ভিটামিন ট্যাবলেট চুল পড়া রোধ করতে কার্যকর হবে। বাজারে বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ট্যাবলেট পাওয়া যায়। তাদের মধ্যে অনেক আশ্চর্যজনক গল্প লেখা আছে কিন্তু বেশিরভাগেরই কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই এটি শুধুমাত্র অর্থের অপচয়। চুলের জন্য বেশিরভাগ পুষ্টিকর সহায়ক আসলে একটি স্বাস্থ্যকর খাদ্যের চেয়ে ভাল। কিন্তু একটি  ভিন্নতা আছে, তা হলো খাবার থেকে পর্যাপ্ত ভিটামিন ডি পাওয়া খুবই কঠিন। ভিটামিন ডি পাওয়ার সবচেয়ে সাধারণ উপায় হল রোদে কিছুক্ষণ সময় কাটানো। কিন্তু যারা এটা করতে পারেন না, তারা আলাদাভাবে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট খেতে পারেন।

ভিটামিন বি ট্যাবলেটের সমস্যার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করুন কারণ অনেক বেশি ট্যাবলেট খেলেও চুল পড়ে যায়, ঠিক তেমনই অনেক বেশি ভিটামিন এ ট্যাবলেট খেলে চুল পড়ে যেতে পারে। তবে আপনি হলুদ শাকসবজি খান বা না খান তাতে কোন প্রকার ক্ষতি নেই।

কন্ডিশনার ব্যবহার

কন্ডিশনার ব্যবহার

এবার চুলের যত্নে কিছু সাধারণ ভুলের কথা বলা যাক, অনেকেই শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করেন না যা চুলের জন্য ক্ষতিকর। কারণ ব্যাখ্যা করা যাক, চুল সুস্থ থাকার জন্য কিছু তেলের প্রয়োজন হয় যা মাথার ত্বক থেকে আসে কিন্তু শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুলে সেই তেলও ধুয়ে যায়। কন্ডিশনার এর কাজ হল চুলে তেল ফিরিয়ে দেওয়া। তাই প্রতিবার শ্যাম্পুর পর কন্ডিশনার লাগান।

ভেজা চুল আঁচড়াবেন না। আমরা অনেকেই গোসল করি এবং চুল মুছতে তোয়ালে দিয়ে চুল ঘষি। ভেজা চুল আঁচড়াবেন না কারণ এতে চুলের ক্ষতি হবে। চুল কোঁকড়া না হলে একটু শুকানোর পর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুল আঁচড়ান।

ব্লো ড্রায়ার

ব্লো ড্রায়ার

ব্লো ড্রায়ার কার্লিং আয়রন দিয়ে চুল শুকাবেন না। বাতাসে শুকানো সবচেয়ে ভাল। যাইহোক, যদি আপনি অবশ্যই একটি ব্লো ড্রাই বা কার্লিং আয়রন ব্যবহার করেন তবে এটি যতটা সম্ভব কম সময়ের জন্য সর্বনিম্ন তাপে ব্যবহার করুন। সপ্তাহে একবারের বেশি ব্যবহার না করার চেষ্টা করুন। চুল বেশি আঁটসাঁট করে বেঁধে রাখবেন না যারা চুল খুব শক্ত করে বেঁধে রাখেন তাদের টানের কারণে চুল পড়তে পারে। একে ট্র্যাকশন এ্যালজেসিয়াম বলে।

ছেলেদের মাথায় টাক

ছেলেদের মাথায় টাক

সবশেষে, চুল পড়ার চিকিৎসায় কিছু রোগের কারণে চুল পড়া হতে পারে, যেমন থাইরয়েড রোগ, রক্তশূন্যতা, আপনি যদি ভালো করে খান, চুলের ঠিকমতো যত্ন নেন, তার পরেও চুল পড়ে। তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি কোন রোগের কারণে তা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন এবং রোগ নির্ণয় হলে সে অনুযায়ী চিকিৎসা করা যেতে পারে। অ্যানড্রোজেনিক অ্যালোপিসিয়ার চুল পড়ার অন্যতম কারণ। এ রোগে সাধারণত ছেলেদের মাথায় টাক পড়তে থাকে এবং কপালের দুই পাশ থেকে চুল পড়ে মাথায় টাক হতে পারে।

মেয়েদের মাথার ত্বক

মেয়েদের মাথার ত্বক

মেয়েদের সাধারণত টাক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না তবে চুল পাতলা হয়ে যায় এবং মেয়েদের মাথার ত্বক বা সীতি দেখা যায়। এই দুটি ক্ষেত্রে, দুটি ওষুধ রয়েছে যা খুব ভাল কাজ করে, ওষুধের নাম মিনোক্সিডিল, ফিনাস্টারাইড।

আপনার এই রোগ আছে কিনা এবং কোন ওষুধটি ভাল হতে পারে তা দেখতে একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ওষুধের পাশাপাশি, দেশে আরও কিছু উন্নত চিকিৎসা রয়েছে যেমন হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট, অর্থাৎ মাথার পেছন থেকে সামনের দিকে চুল রাখা। তারপর পিআরপি থেরাপিতে কিছু মানুষ উপকার পাচ্ছেন অর্থাৎ চুল পড়ার অনেক ধরনের চিকিৎসা আছে, চিকিৎসকের কাছে গিয়ে চিকিৎসা নিতে পারেন।

সূত্র:- Right News BD

bn_BDBengali