ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ, সেহেতু ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার পদক্ষেপ দ্রুত নেয়াও জরুরী। ডেঙ্গু মূলত এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশাগুলোর প্রজনন স্থল হলো পরিষ্কার পানি। বাংলাদেশে প্রতিবছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, বিশেষ করে বর্ষাকালে।
ডেঙ্গুর সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে আমাদের সঠিক পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। চলুন ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার ক্ষেত্রে করণীয় ও সতর্কতা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক-
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয়
১. মশার প্রজনন স্থল নির্মূল করুন
ডেঙ্গু প্রতিরোধের প্রথম পদক্ষেপ হলো মশার প্রজনন স্থল নির্মূল করা। এডিস মশা সাধারণত পরিষ্কার পানি জমে থাকা স্থানে প্রজনন করে। তাই নিচের পদক্ষেপগুলো অনুসরণ করুন:
পানির ট্যাংক: পানির ট্যাংকগুলোকে সঠিকভাবে ঢেকে রাখুন যাতে মশা প্রবেশ করতে না পারে।
ফুলের টব: ফুলের টবে যদি পানি জমে থাকে, তবে তা নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
কচুরিপানা: কচুরিপানার পুকুরে বা জলাশয়ে পানি জমে থাকলে তা পরিষ্কার করুন।
সিঙ্ক ও ড্রেন: সিঙ্ক ও ড্রেনে জমে থাকা পানি নিয়মিত পরিষ্কার করুন।
২. মশারির ব্যবহার
যেহেতু এডিস মশা দিনের বেলায় কামড়ায়, তাই দিনের বেলায় ঘুমানোর সময় ঘরে মশারি বা কয়েল ব্যবহার করা উচিত। ঘরের অন্ধকার ও কোণায় মশা তাড়ানোর জন্য স্প্রে বা মশার ওষুধ প্রয়োগ করুন।
সুরক্ষিত থাকতে দিনে যতটা সম্ভব লম্বা পোশাক পরিধান করা ভালো।
৩. মশা তাড়ানোর উপকরণ ব্যবহার করুন
মশা তাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ধরনের উপকরণ বাজারে পাওয়া যায়। কিছু উপকারী পণ্য হলো:
স্প্রে: মশা তাড়ানোর স্প্রে ব্যবহার করুন, বিশেষ করে যেখানে মশার উপদ্রব বেশি।
ক্যান্ডেল: মশা তাড়ানোর ক্যান্ডেল ব্যবহার করলে পরিবেশেও ভালোভাবে কাজ করে।
অয়েল: মশা তাড়ানোর জন্য অলিভ অয়েল বা ইথানল সমৃদ্ধ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন।
৪. সঠিক পোশাক পরিধান করুন
ডেঙ্গু প্রতিরোধে পোশাকেরও গুরুত্ব রয়েছে। সকাল ও সন্ধ্যার সময়ে যখন মশার উপদ্রব বেশি, তখন দীর্ঘ হাতা এবং প্যান্ট পরিধান করুন।
সম্ভব হলে, উজ্জ্বল রঙের পোশাক পরা উচিত, কারণ অন্ধকার রঙের পোশাক মশাকে আকর্ষণ করে।
৫. খাদ্য ও পানির সুরক্ষা
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ এবং পরিচ্ছন্ন পানি পান করা ডেঙ্গু প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিশ্চিত করুন যে আপনার খাবার সঠিকভাবে রান্না করা এবং পানির উৎস পরিষ্কার।
রাস্তার খাবার থেকে দূরে থাকুন, কারণ সেগুলো স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে।
৬. স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করুন
বিশেষ করে ডেঙ্গুর মৌসুমে স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করা জরুরি। হাত নিয়মিত ধোয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। যদি কোনো লক্ষণ দেখা দেয়, যেমন: উচ্চ তাপমাত্রা, মাথাব্যথা, বা পেশীতে ব্যথা, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।
৭. পরিবার ও প্রতিবেশীদের সচেতন করুন
ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিবারের সবাইকে সচেতন করা প্রয়োজন। নিজের পরিবার ছাড়াও প্রতিবেশীদের সচেতন করুন। সবাই মিলে সতর্কতা অবলম্বন করলে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমাতে পারবেন।
৮. স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগে যোগাযোগ করুন
ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাবের সময় স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। তারা আপনাকে সঠিক তথ্য এবং নির্দেশনা দিতে পারবে। জরুরি পরিস্থিতিতে তাদের হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
লক্ষণ এবং চিকিৎসা
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো সাধারণত ভাইরাসের সংক্রমণের ৪-১০ দিন পর প্রকাশ পায়। লক্ষণগুলো হলো:
- উচ্চ তাপমাত্রা
- মাথাব্যথা
- পেশীতে ব্যথা
- চোখের পিছনে ব্যথা
- ত্বকে ফুসকুড়ি
যদি আপনি ডেঙ্গুর লক্ষণ অনুভব করেন, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। ডেঙ্গুর কোনও বিশেষ চিকিৎসা নেই, তবে লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করা হয়।
পরিশেষে
অবশ্যই ডেঙ্গু প্রতিরোধ করার জন্য সচেতনতা ও দায়িত্বশীলতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সামান্য সতর্কতা নিলেই বড় রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। নিজের এবং পরিবারের সুরক্ষায় সচেষ্ট থাকুন, এবং স্বাস্থ্যবান থাকার চেষ্টা করুন।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা ও সচেতনতা বৃদ্ধি করলেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব কমানো সম্ভব।
সূত্র: Right News BD