আঁচিল দূর করার ক্রিম: আপনার সুন্দর ত্বকে যদি ছোট ছোট কালো বা বাদামি আঁচিল দেখা যায় তাহলে দেখতে খুবই খারাপ দেখায় যায়। আর আঁচিলের কারণেই মূলত সুন্দর ত্বকের সৌন্দর্য নষ্ট হয়।
এমন অনেকেই আছেন যারা আঁচিল দূর করার বিভিন্ন ক্রিম ব্যবহার করেও ভালো ফলাফল পাচ্ছেন না। তাদের জন্য আজকের পোস্টের প্রথমেই থাকছে আঁচিল দূর করার বেস্ট কয়েকটি ক্রিম নাম সম্পর্কে। তারপর থাকছে-
- আঁচিল কেন হয়?
- আঁচিল কত প্রকার?
- আঁচিল দূর করার হোমিও ঔষধ কি?
- আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায় কি?
- আঁচিল দূর করার ক্রিম ব্যবহারের সঠিক নিয়ম কি?
এখানে বেশ কয়েকটি উপায় রয়েছে যেগুলো সঠিকভাবে ব্যবহার করলে আপনার সুন্দর ত্বকের আঁচিল নিমেষেই খুব অল্প সময়ের মধ্যেই দূর হবে।
চলুন আর দেরি না করে জেনে নেওয়া যাক আঁচিল দূর করার উপায় সম্পর্কে-
আঁচিল দূর করার ক্রিম
ক্রায়োথেরাপি ভিত্তিক ক্রিম
কিছু কিছু ক্রিম ক্রায়োথেরাপি ব্যবহার করে, যার মধ্যে তরল নাইট্রোজেনের মতো ঠান্ডা পদার্থ থাকে। যা ত্বকের সেই ছোট ছোট আঁচিলে জমাট বেঁধে থাকে। এই ক্রিমগুলি প্রয়োগ করে আঁচিলের টিস্যুকে ধ্বংস করে।
স্যালিসিলিক অ্যাসিড ভিত্তিক ক্রিম
স্যালিসিলিক অ্যাসিড ওটিসি আঁচিল অপসারণ ক্রিমের একটি সাধারণ উপাদান। এটি ত্বকের ছোট ছোট আঁচিলের স্তরগুলিকে নরম করতে কাজ করে। স্যালিসিলিক অ্যাসিড ক্রিম ব্যবহারের ফলে আঁচিল ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত বা জীর্ণ হতে থাকে।
আঁচিল কেন হয়
বিশেষ করে আঁচিল প্রাথমিকভাবে হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস (এইচ পি ভি) দ্বারা সৃষ্ট হয়। প্রতিটি স্ট্রেইনের ফলে শরীরের নির্দিষ্ট অংশে আঁচিলের সৃষ্টি হয়। কাটা, আঁচড় বা অন্যান্য ত্বকের ঘর্ষণের মাধ্যমে এই ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করে থাকে।
এটি ত্বকের উপরের স্তরকে সংক্রামিত করে, যার ফলে কোষগুলি দ্রুত বৃদ্ধি পায়, যার ফলে আঁচিলের সৃষ্টি হয়। এটা নারী-পুরুষ যে কারো শরীরের মাথা থেকে পা পর্যন্ত যে কোন স্থানে হতে পারে।
আঁচিল কত প্রকার
আপনি হয়তো প্রথমে শুনে অবাক হবেন, এই হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের প্রায় ১০০’র বেশি প্রকারের হয়ে থাকে। আঁচিল বিভিন্ন ধরণের হয়, তাছাড়া শরীরের যেকোন স্থানে বিভিন্ন ধরণের আঁচিলের সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া মানুষের শরীরে তৈরি হওয়া কিছু ধরণের আঁচিলের কথা নিচে উল্লেখ করা হয়েছে।
- সাধারণ আঁচিল: এগুলি বিশেষ করে হাত এবং আঙ্গুলের পৃষ্ঠ হয়ে থাকে।
- ফ্ল্যাট ওয়ার্টস বা আঁচিল: এই আঁচিলগুলি সাধারণ আঁচিলের চেয়ে ছোট মুখ হয়। এগুলি মূলত বাহু বা পায়ে ক্লাস্টারে উপস্থিত হয়।
- প্ল্যান্টার ওয়ার্টস বা আঁচিল: পায়ের তলায় কিংবা প্ল্যান্টার ওয়ার্ট হাঁটা বা দাঁড়ানোর চাপের কারণে বেদনাদায়ক হতে পারে।
- জেনিটাল ওয়ার্টস বা আঁচিল: এই ওয়ার্টগুলি যৌন সংক্রামিত হয় এবং যৌনাঙ্গকে প্রভাবিত করে। যৌনাঙ্গের আঁচিলের চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া অপরিহার্য।
আঁচিল দূর করার হোমিও ঔষধ
আঁচিলের চিকিৎসার জন্য অধিকাংশ মানুষ সহজ ও নিরাপদ প্রকৃতির চিকিৎসা হিসেবে প্রথমেই হোমিওপ্যাথির কথা চিন্তা করে থাকেন। কারণ, হোমিওপ্যাথিতে আঁচিলের জন্য বেশ কিছু কার্যকরী ওষুধ রয়েছে যা খাওয়ার মাধ্যমে কয়েকদিনের মধ্যে ম্যাজিকের মতো আঁচিল দূর হয়ে যায়। আঁচিল দূর করার ঔষধ গুলো হলোঃ
- থুজা অক্সিডেন্টালিস
- নাইট্রিকাম অ্যাসিডাম
- ন্যাট্রাম মুর
- কস্টিকাম
- গ্রাফাইটস
- স্ট্যাফিসাগ্রিয়া
- ফেরাম পিক্রিকাম
- এন্টিমোনিয়াম অশোধিত
- সিলিসিয়া টেরা
আঁচিল দূর করার ঘরোয়া উপায়
আপনি যদি চান কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন না আবার আপনার সুন্দর শরীরে আঁচিল থাকুক সেটাও পছন্দ করেন না। সেক্ষেত্রে আপনার জন্য কিছু কার্যকরী কিছু ঘরোয়া উপায় নিতে পারেন। যেমনঃ
ক্যাস্টর অয়েল ও বেকিং সোডা: ক্যাস্টর অয়েল ও বেকিং সোডার মিশ্রণ ত্বককে ব্যাকটেরিয়া এবং ভাইরাসের আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ১ চা চামচ ক্যাস্টর অয়েল এবং ১ চা চামচ বেকিং সোডা মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এরপর এই পেস্ট আঁচিলের ওপর লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। সম্পূর্ণ শুকানোর পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। আঁচিল চলে না যাওয়া পর্যন্ত প্রতিদিন ১ বার করে এই পেস্টটি ব্যবহার করতে থাকুন।
পেঁয়াজ এবং লেবুর রস: ৩ চা চামচ পেঁয়াজের রস এবং ১ টেবিল চামচ লেবুর রস একসাথে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। তুলা দিয়ে মিশ্রণটি রাতে ঘুমানোর আগে আঁচিলে লাগান। সকালে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন মিশ্রণটি ব্যবহার করলে ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।
এলোভেরা এবং মধু: ভেষজ চিকিৎসা শাস্ত্রে, এলোভেরার ব্যবহার পাওয়া যায় সেই খৃষ্টপূর্ব যুগ থেকেই। মুখ এবং ত্বকের দাগ দূর করতে এলোভেরা ও মধু বাহ্যিক এবং আভ্যন্তরীন দুইভাবেই কাজ করে। এলোভেরা ও মধু ত্বককে মসৃণ রাখে এবং ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ থেকে রক্ষা করে। ১ টেবিল চামচ এলোভেরা জেল এবং ১ টেবিল চামচ মধু একসাথে মিশ্রণ তৈরি করুন। অতঃপর, তুলার সাহায্যে মিশ্রণটি আঁচিলে লাগান। ভালো ফলাফলের জন্য দিনে ৩ বার মিশ্রণটি ব্যবহার করুন।
রসুন: রান্নার কাজে হলেও এটির ভেষজ উপাদান যা শরীরের নানাবিধ সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। তেমনিভাবে, আঁচিলের জন্য রসুন পিষে লাগাতে পারেন। রসুনের মধ্যে সালফারের কিছু বিশেষ যৌগ রয়েছে যা আঁচিল দূর করতে সহায়তা করে।
ভিটামিন সি: এর ব্যবহার আঁচিল দূর করতে সাহায্য করে। সে জন্য আপনাকে লেবু, মালটা অথবা কমলার খোসার প্রয়োজন হবে। কারণ, এগুলোতে প্রচুর ভিটামিন সি থাকে তা আঁচিলে লাগানো অনেকটাই সুবিধাজনক হয়। এটি ব্যবহার করার জন্য প্রথমে খোসা পিষে সুন্দরভাবে পেস্ট করে আঁচিলের উপরে লাগান যা নিরাপদ অথচ কার্যকরী ভূমিকা রাখবে।
আঁচিল দূর করার উপায়
আপনার শরীরে আঁচিল হয়েছে সে জন্য তাড়া হুড়ো করে চিকিৎসা গ্রহণ করবেন তা কিন্তু নয়। কিছু আঁচিল রয়েছে যেগুলো হওয়ার কিছু দিনের মাথায় এমনিতেই ভালো হয়ে যায়। এর জন্য আপনাকে ধৈর্য ধরতে হবে।
বিশেষ ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ দেড় বছর পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে। আঁচিল মূলত শারীরের কোনো সমস্যা সৃষ্টি করে না। শুধুমাত্র আপনার শরীরের একটু সৌন্দর্য কমিয়ে ফেলে।
আঁচিল দূর করার ক্রিম ব্যবহারের নিয়ম
আঁচিল দূর করার ক্রিম ব্যবহারের সঠিক কিছু নিয়ম আছে। আঁচিল এর সাইট অনুযায়ী পরিমাণ মত ক্রিম নিয়ে আঁচিলের উপরে ২৪ ঘন্টা লাগিয়ে অপেক্ষা করতে হবে। ২৪ ঘন্টা পেরোনোর পর আবার লাগাতে হবে।
নিয়মিত ব্যবহারের ফলে যদি আঁচিল দূর হয়ে যায় সেক্ষে আর লাগানোর প্রয়োজন নেই।
অবশ্যই মনে রাখতে হবে, কোনো ক্রমেই আঁচিল এর ক্রিম চোখে লাগানো যাবে না। অনেকেরই কিন্তু চোখের পাতায় আঁচিল হয়, সেক্ষেত্রে চোখ শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে ধরা হয় সে জন্য এই ক্রিম লাগানো নিরাপদ নয়।
পরিশেষে:
আঁচিল দূর করার জন্য উপরে থাকা বিভিন্ন ক্রিম এবং উপায় রয়েছে যেগুলো ধারাবাহিক ভাবে ব্যবহার করলে আপনার শরীর থেকে আঁচিল দূর হয়ে যাবে।
সূত্র:- Right News BD