আশাবাদী ভারত সফরে বাংলাদেশ: নাজমুল হোসেন কাল চেন্নাইয়ের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার আগে ভারতের বিপক্ষে সিরিজ নিয়ে মন্তব্য করেছেন, “ভালো ফল সম্ভব, তবে চ্যালেঞ্জিং।” অনেকের মনে হতে পারে, ভারত বিরুদ্ধে দুই টেস্টের সিরিজের জন্য বাংলাদেশ অধিনায়কের আত্মবিশ্বাসের অভাব ছিল। পাকিস্তানকে তাদের মাটিতে ধবলধোলাই করার পর, কথা থেকে আত্মবিশ্বাস আরও স্পষ্ট হওয়া উচিত ছিল।
এবার ভারত প্রতিপক্ষ হওয়ায় এই আত্মবিশ্বাসের অভাবের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রোহিত শর্মার নেতৃত্বাধীন ভারতীয় দল শুধু টেস্ট র্যাঙ্কিংয়ে দ্বিতীয় নয়, ঘরের মাঠে তারা প্রায় অজেয়। বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বশেষ সিরিজে দুই টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে জয় তাদের আগের রেকর্ডকে স্পষ্টভাবে তুলে ধরে। এই পারিপার্শ্বিকতায় বাংলাদেশের সিরিজ নিয়ে আশার জায়গা সীমিত মনে হতে পারে। তবে সবকিছু হতাশার নয়—আশাবাদী হওয়ার কিছু কারণও রয়েছে।
ভারত সফরে বাংলাদেশ উন্নতির সম্ভবনা
ভারতের মাটিতে ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতির সম্ভাবনা যথেষ্ট। সাম্প্রতিক সময়ে প্রতিপক্ষের মাঠে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের উন্নতির গ্রাফ সেই আশাবাদকে সমর্থন করছে। তাছাড়া, ঘরের মাঠে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মাদের পারফরম্যান্স ধীরে ধীরে নিম্নমুখী হচ্ছে।
২০২১ সাল থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের ১ থেকে ৭ নম্বর পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের অ্যাওয়ে গড় পূর্ববর্তী চার বছরের (২০১৬-২০) তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বশেষ চার বছরে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের অ্যাওয়ে গড় তাদের নিজস্ব মাঠের গড়কেও অতিক্রম করেছে।
২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে চলতি সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশ দল ১১টি অ্যাওয়ে টেস্ট খেলেছে। এসব ম্যাচে বাংলাদেশের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের গড় ছিল ৩৩.৩৬, যা ২০১৬-২০ সময়ে ছিল ২৭.৬৭। একই সময়ে, ঘরের মাঠে খেলা ১৪ টেস্টে প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের গড় ছিল ৩২.০৩।
অ্যাওয়ে ম্যাচের গড়
অর্থাৎ, সর্বশেষ চার বছরে বাংলার টাইগাররা ঘরের মাঠের তুলনায় অ্যাওয়ে ম্যাচগুলোতে বেশি গড়ে রান তুলেছেন। এই গড় বৃদ্ধির পেছনে তিন ব্যাটসম্যানের অবদান সবচেয়ে বেশি। তামিম ইকবাল ৫টি অ্যাওয়ে ম্যাচে ৪৯ গড় নিয়ে ৪৪১ রান করেছেন। তবে, তিনি ২০২২ সালের পর অ্যাওয়ে টেস্টে খেলেননি। এদিকে গড় বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন মুশফিকুর রহিম, যিনি ৮টি অ্যাওয়ে ম্যাচে ৪৫.১০ গড়ে ৪৫১ রান করেছেন এবং সর্বশেষ পাকিস্তান সিরিজেও সেঞ্চুরি করেছেন। রাওয়ালপিন্ডিতে সেঞ্চুরি করা লিটন দাস ১১টি অ্যাওয়ে ম্যাচে ৭৪২ রান করেছেন, গড় ৪৩.৬৪।
ভারতের সিরিজের দলে থাকা অন্যান্য ব্যাটসম্যানদের মধ্যে মুমিনুল হক ১০ ম্যাচে ৩৩.৮১ গড়ে ৫৪১ রান, সাদমান ইসলাম ৬ ম্যাচে ৩৩.৬০ গড়ে ৩৩৬ রান এবং নাজমুল হোসেন ১১ ম্যাচে ৩৩.৪৫ গড়ে ৬৬৯ রান করেছেন।
ভারতের বিপক্ষে সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে ১ থেকে ৭ নম্বরের মধ্যে ব্যাট করতে নামবেন সাকিব আল হাসান ও জাকির হাসান। অ্যাওয়ে ম্যাচে তাদের গত চার বছরের গড় অবশ্য ৩০-এর নিচে (সাকিব ২৫.৫৭ এবং জাকির ২২.৬৬)। তবে, জাকির শুধুমাত্র সর্বশেষ পাকিস্তান সফরেই দেশের বাইরে টেস্ট খেলেছেন।
অ্যাওয়ে বাদ দিলে, মোটের ওপর বাংলাদেশের ১ থেকে ৭ নম্বরে খেলা ব্যাটসম্যানদের গড় বেড়েছে। ২০১৬-২০ সময়ে এই গড় ছিল ৩২.৫, যা গত চার বছরে বেড়ে ৩৪.০-এ দাঁড়িয়েছে।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, অ্যাওয়ে ব্যাটিংয়ে উন্নতি হলে কি বাংলাদেশ ভালো করবে, এবং ভারতের ঘরের মাঠে ব্যাটিংয়ে কি উন্নতি হয়নি? সত্যি হলো, ভারতের ব্যাটসম্যানদের গড় গত আট বছরে কমেছে। ২০১৬-২০ সময়ে ভারতের প্রথম সাত ব্যাটসম্যানের গড় ছিল ৫৪.৪৩, যা ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে এখন পর্যন্ত ৩৮.৩০-এ নেমে এসেছে—যার পার্থক্য ১৬.১৩।
এই সময়ে অন্তত ১০টি টেস্ট খেলানো দলের মধ্যে ভারতের মতো এত বেশি হোম গড় কমেনি আর কোনো দলের। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গড় কমেছে দক্ষিণ আফ্রিকার (৬.২২)।
বিরাট কোহলির গড়
ভারতের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে যাদের নিয়ে বাংলাদেশের আতঙ্ক বেশি, তাদের গড়ও অনেক কমেছে। ২০১৬-২০ সময়ে ঘরের মাঠে বিরাট কোহলির গড় ছিল ৮৬.১৭ এবং সেঞ্চুরি ছিল ১০টি।
২০২১-২৪ সময়ে ১১ টেস্টে তার গড় কমে দাঁড়িয়েছে ৩৪.৪৭ এবং সেঞ্চুরি মাত্র ১টি। ভারত অধিনায়ক রোহিত শর্মারও ঘরের মাঠে গড় উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। আগের চার বছরে ১০ টেস্টে তার গড় ছিল ১০১.১০, যা গত চার বছরে ১৫ টেস্টে ৪৪.৮৭-এ নেমে এসেছে।
সব মিলিয়ে, ফলাফল যাই হোক, ভারত সফরে বাংলাদেশ দল তাদের ব্যাটিং এবং ভারতের কোহলি-রোহিতের হুমকির বিষয়ে কিছুটা আশাবাদী হতে পারে।
সূত্র: Right News BD