কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা করতে কি কি যোগ্যতা লাগে, কানাডা যেতে কত টাকা লাগে

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা যোগ্যতা: বর্তমান বিশ্বের যেকোন দেশের প্রথম সারির দেশ হিসেবে মানসম্মত শিক্ষার ক্ষেত্রে কানাডা অন্যতম। সে কারণে আপনি উন্নত শিক্ষার জন্যই কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সেখানে পড়াশোনা করতে যাবেন। কিন্তু সবথেকে বড় বিষয় হচ্ছে সেখানে পড়াশোনার জন্য সেই দেশে স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার কোন অনুমোদন নেই বললেই চলে। সে জন্য আপনাকে কানাডা যেতে হলে স্টাডি পারমিট ভিসার নিয়ে যেতে হবে। স্টাডি পারমিট ভিসা আর স্টুডেন্ট ভিসা মূলত একই রকম বোঝায়।

আপনি কানাডার স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চার বছর মেয়াদ পেতে পারেন। আপনার স্টাডি পারমিট কোর্স ৬ মাস হলে কোন ভিসার জন্য আপনাকে অনুমোদন দেয়া হবে না।

আজকের এই পোস্টের আলোচনায় থাকবে কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতা, কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার জন্য কি কি কাগজপত্র লাগবে এবং কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা খরচ সম্পর্কে।

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা পেতে যেসব যোগ্যতা লাগে

আপনাকে কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য প্রথমে অনলাইনে আবেদন করতে হবে। অনলাইনে আবেদন করার জন্য তাদের কানাডার অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে ভিজিট করতে পারেন। কানাডা সিটিজেনশীপ এন্ড ইমিগ্রেশনে আবেদন করতে হবে। আপনি চাইলেও কানাডা এজেন্সিতে আবেদন করতে পারবেন।

অনেকে আছেন কানাডা গিয়ে পড়াশোনা করতে চায়, এ বিষয়ে কিন্তু তাদের মনে প্রশ্ন আসতে পারে, কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতা লাগে। তাদের স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতার নির্দেশনা অনুযায়ী আপনার যোগ্যতা অনুযায়ী কি কি অমিল রয়েছে। তাদের যোগ্যতার সাথে আপনার যোগ্যতার অমিল থাকলে কখনোই আপনি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সেখানে যেতে পারবেন না।

বিশেষ করে কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার নিতে হলে আলাদা যোগ্যতার প্রয়োজন হয়। আপনার যদি সেই আলাদা যোগ্যতা থাকে তাহলে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য অনলাইনে আবেদন করতে পারবেন। আসুন তাহলে জেনে নেই, কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা পেতে হলে কি কি যোগ্যতা লাগে: 

  • আপনাকে অবশ্যই ইংরেজি ভাষার উপর ভালো দক্ষতার জন্য IELTS স্কোর দিতে হবে। 
  • পাসপোর্ট থাকতে হবে।
  • অনলাইন জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্রের সনদপত্র।
  • এসএসসি (SSC) ও এইচএসসি (HSC) পরীক্ষার সার্টিফিকেট।
  • শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রশংসাপত্র।
  • কানাডার যে বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টাডি করবেন, সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুমোদন পত্র লাগবে।
  • কানাডা গিয়ে থাকা খাওয়া সহ পড়াশোনা করার মত অর্থ কি রকম আছে, তার প্রমাণস্বরূপ কাগজপত্র থাকতে হবে।
  • কোন প্রকার আইন বিরোধী কর্মকান্ড বা মামলায় জড়িত থাকা যাবে না।
  • শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য মেডিকেল চেকআপ করার সার্টিফিকেট।

এছাড়াও আপনার কোন প্রকার কাগজপত্রের প্রয়োজন হলে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট ভিজিট করে জেনে নিবেন। কানাডার স্টুডেন্ট ভিসার যোগ্যতার জন্য সবচেয়ে IELTS স্কোর গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনার IELTS স্কোর ৫.০০ পয়েন্টের নিচে থাকে, তারপরেও আপনি স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কানাডা যেতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনার একটি বৈধ পাসপোর্ট লাগবে।

অনলাইনে কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার আবেদন

আপনি কানাডা পড়াশোনা করার যাওয়ার আগে অনলাইনে স্টুডেন্ট ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। আপনি কত বছরের জন্য কানাডা যেতে চাচ্ছেন, সেখানে গিয়ে কি কি কোর্স করতে চাচ্ছেন আর কত দিনের জন্য কোর্স করবেন সেই বিষয়ে উল্লেখ করতে হবে।

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কাজ

প্রতিবছর আমাদের দেশের অনেকে শিক্ষার্থী কানাডায় পড়াশোনার জন্য যাচ্ছে। সেই শিক্ষার্থীদের মধ্যে অনেক শিক্ষার্থী কানাডায় পার্ট টাইম হিসেবে জব করছে। তাদের মত আপনিও সেখানে গিয়ে পড়াশোনার পাশাপাশি পার্টটাইম হিসেবে চাকরি করতে পারবেন। অনেক মেধাবী স্টুডেন্টরা কানাডা গিয়ে পার্টটাইম হিসেবে চাকরি করে।

তাদের মত পার্ট টাইম হিসেবে আপনিও যদি চাকরি করতে চান তাহলে নির্ধারণ সময় করতে হবে। এর কারণ হচ্ছে আপনার পড়াশোনার ক্ষতি করে শুধুমাত্র পার্ট টাইম চাকরি করলে চলবে না। সে জন্য আপনাকে প্রতিদিন কাজের জন্য একটি রুটিন করতে হবে। আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ করার পর, যদি হাতে সময় থাকে সেক্ষেত্রে সেই সময়টা আপনি কাজে লাগাতে পারেন।

এছাড়াও আপনি কানাডা গিয়ে বিভিন্ন মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোতেও চাকরি করতে পারবেন। তবে পার্টটাইম চাকরি করার জন্য সেখানে বিভিন্ন হোটেলের রেস্টুরেন্টেগুলোতেও কাজ করতে পারবেন। আপনার যদি গাড়ী চালানোর অভিজ্ঞতা থাকে, তাহলেও আপনি ড্রাইভিং এর কাজও করতে পারেন। পড়াশোনার পাশাপাশি কানাডায় পার্ট টাইম চাকরি করেও টাকা ইনকাম করার এইটাই সহজ উপায়।

কানাডা ভিসা পাওয়ার সহজ উপায়

আপনাকে কানাডা যেতে হলে অবশ্যই বৈধভাবে যেতে হবে। সেজন্য আপনাকে একটি বৈধ পাসপোর্ট করতে হবে। আপনি যদি সরকারিভাবে কানাডা যান তাহলে অনেক সুবিধা পাবেন। সেজন্য আপনাকে সরকারিভাবে কানাডা যেতে হলে বাংলাদেশ প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সাহায্য নিতে হবে।

আপনি কানাডাতে কয়েক ধরণের ক্যাটাগরির ভিসা পাবেন। কানাডায় আপনি যদি পড়াশোনা জন্য যান, তাহলে আপনাকে কানাডার স্টাডি পারমিট ভিসার প্রয়োজন হবে।

আপনি কখনো দালালদের সহযোগিতা নিয়ে কানাডা ভিসার জন্য আবেদন করবেন না। কানাডায় বর্তমানে আপনি কোন প্রকার অবৈধভাবে যেতে পারবেন না। দালালের খপ্পরে পড়ে অবৈধভাবে আপনি যদি কানাডা যান, তাহলে আপনার সম্পূর্ণ টাকা নষ্ট হয়ে যাবে।

কানাডা স্টুডেন্ট ভিসার খরচ

প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী কানাডায় পড়তে আসেন। আবার অনেকে আছেন সেখানে পড়তে যাওয়ার আগেই খরচের কথা চিন্তা না করেই বসে থাকেন। আপনি যদি কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে সেখানে পড়াশুনা করতে চান, অবশ্যই আগে থেকেই খরচের কথা চিন্তা করবেন। এ বিষয়ে আপনি যদি চিন্ত না করেন পরে দেখা গেল আপনি খরচের কারণেই হয়তো মাঝ পথে থেমে যাবেন। সেই জন্যে কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা পাওয়ার পর খরচ কি রকম হয় তা জেনে নিব।

আগেই বলে রাখছি বর্তমান ডলার রেট ওঠা নামার কারণে খরচ কম বেশি হতে পারে:

০১. পাসপোর্ট

প্রথমমত একটি পাসপোর্ট বানানো। আপনি যদি একজন বাংলাদেশি হন, তাহলে আবেদনকারী হিসেবে আপনাকে ৪৮ পৃষ্ঠার পাঁচ বছর মেয়াদি পাসপোর্টের ক্ষেত্রে সাধারণ (২১ কর্মদিবস)-এর জন্য ফি লাগবে ৪ হাজার ২৫ টাকা, জরুরিভাবে (১০ কর্মদিবস) ফি লাগবে ৬ হাজার ৩২৫ টাকা আর জরুরিভাবে নিতে গেলে (২ কর্মদিবস) ফি লাগবে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি লাগবে ৫ হাজার ৭৫০ টাকা, জরুরি ফি লাগবে ৮ হাজার ৫০ টাকা ও জরুরিভাবে ফি লাগবে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা পর্যন্ত।

এছাড়াও ৬৪ পৃষ্ঠার ৫ বছর মেয়াদি পাসপোর্টে করতে সাধারণ ফি লাগবে-৬ হাজার ৩২৫ টাকা, জরুরিভাবে ফি লাগবে ৮ হাজার ৬২৫ টাকা থেকে ১২ হাজার ৭৫ টাকা এবং ১০ বছর মেয়াদি সাধারণ ফি লাগবে ৮ হাজার ৫০ টাকা থেকে ১০ হাজার ৩৫০ টাকা ও ১৩ হাজার ৮০০ টাকা পর্য।ন্ত সব ফি একসাথে মিলে ১৫ শতাংশ ভ্যাট লাগবে।

০২. আইইএলটিএস পরীক্ষার ফি

বর্তমান বাংলাদেশ থেকে আইইএলটিএস পরীক্ষার জন্য ফি লাগবে ২০ হাজার টাকারও বেশি। এটি হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে ডলারের দাম ওঠা নামার কারণেই এই ফি’র কমবেশি হয়।

০৩. কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন

একটি কানাডিয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ে আবেদন করার জন্য ফি লাগে ১০০-১৫০ কানাডিয়ান ডলার। এই আবেদনের ক্ষেত্রে আপনার খরচ হবে ৪০ হাজার টাকা। তবে ডলারের রেট অনুযায়ী খরচ হয়তো কমবেশি হওয়ার সম্ভবনা থাকতে পারে।

০৪. পুলিশ ক্লিয়ারেন্স

আপনি বাংলাদেশী হলে সেখানকার নিজ থানার একটি পুলিশ ক্লিয়ান্সের লাগবে। এছাড়াও সোনালী ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকে গিয়ে ৫০০ টাকার চালান জমা দিতে হয়।

০৫. সার্টিফিকেট ট্রান্সক্রিপ্ট ও কুরিয়ার খরচ

সার্টিফিকেটের জন্য ট্রান্সকিপ্টের প্রয়োজন হবে সেটি আবার কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠাতে হবে। এ মিলে আপনার খরচ হবে ৪ হাজার টাকা।

০৬. নোটারি ও অ্যাসেট ভ্যালুশন খরচ

আপনার অধিকাংশ ডকুমেন্টগুলি অবশ্যই নোটারি করতে হবে। এছাড়াও পাশাপাশি আপনার অভিভাবকের সম্পদের মূল্য ইভল্যুশন করতে হবে। এই বাবদ আপনার খরচ হতে পারে ১৫ হাজার টাকার মত।

০৭. ট্যাক্স ফাইল

আপনার ১৮ বছর হলেই কানাডা ভিসার জন্য আবেদন করতে হলে ট্যাক্স ফাইল জমা দিতে হয়। এ বাবদ খরচ হবে প্রায় ৫ হাজার টাকা।

০৮. বায়োমেট্রিক

কানাডা পড়তে আসলে আপনাকে অবশ্যই বায়োমেট্রিক লাগবে। এটির জন্য খরচ হবে ৮৫ কানাডিয়ান ডলার (১ কানাডা ডলার সমান ৮০ টাকা), যা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করলে প্রায় ৬ হাজার ৮৭৯ টাকা।

০৯. ভিসা অ্যাপ্লিকেশন ফি

কানাডা ভিসা আবেদন ফি লাগবে ১৫০ ডলার, যা বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করলে ১২ হাজার ১৪০ টাকা।

১০. মেডিকেল ফি

বাংলাদেশে থেকে কানাডায় আসার জন্য কানাডিয়ান সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বেশ কয়েকটি মেডিকেল সেন্টার আছে । সেই জায়গাগুলো থেকে আপনার মেডিকেল করতে হবে। সেখানে মেডিকেল ফি লাগবে ১৭০ কানাডিয়ান ডলার, বাংলাদেশী টাকায় দাঁড়াবে ১৩ হাজার ৭৫৯ টাকা।

১১. বিমান ভাড়া

কানাডা যাওয়ার জন্য কানাডার বিমান ভাড়া ১ লাখ টাকা লাগবে।

১২. কেনাকাটা

কানাডা আপনার জন্য একটি নতুন দেশ। এখানে উষ্ণ বা গরম কাপড় সঙ্গে করে আনতে হবে। আবার প্রয়োজনের করণেও অনেক কিছুই কেনাকাটাও করতে হয় নতুন একটি দেশে আসলে। এসব কেনাকাটা খরচের জন্য আপনাকে ৫৫ হাজার লাগবে।

১৩. টিউশন ফি

কানাডায় পড়াশুনার জন্য আসলে টিউশন ফি আগেই দিতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে ফি কমবেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশি টাকায় সেমিস্টার প্রতি খরচ হয় কমপক্ষে ৩ লাখ টাকা।

১৪. প্রথম কয়েক মাস চলার খরচ

কানাডায় আসার আগে কয়েক মাস চলার মতো টাকা আনতে হবে। এখানে লিভিং এক্সপেন্স পৃথিবীর অনেক দেশের চেয়ে বেশি। আন্ডার গ্রেডের শিক্ষার্থীদের কাজের অনুমতি থাকে না। তার ওপরের গ্রেডের শিক্ষার্থীরা কাজ করতে পারেন। এসেই যে কাজ পাওয়া যাবে, তার নিশ্চয়তা নেই। তাই কমপক্ষে পাঁচ হাজার কানাডিয়ান ডলারের কমবেশি হাতে আনা ভালো, যা বাংলাদেশি টাকায় চার লাখ টাকা। যাঁরা সেলফ ফান্ডে পড়তে আসবেন, তাঁদের জন্য এই খরচ ১০ লাখ টাকা। ব্যক্তিভেদে কমবেশি হতে পারে খরচ। যাঁরা বৃত্তি নিয়ে আসবেন, তাঁদের জন্য খরচ বেশ কম হবে।

“শেষ কথা“

আজকে আমরা দেখলাম, শিখলাম ও জানলাম, কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা, যোগ্যতা, আবেদন ও খরচ সম্পর্কে। কানাডা খুব উন্নতশীল একটি দেশ। তবে সবার মনে ইচ্ছা থাকে একবার হলেও কানাডা গিয়ে পড়াশোনা করার। আপনারও তেমনই নিশ্চয়ই ইচ্ছে আছে কানাডা গিয়ে পড়াশোনা করার। সে জন্যই কানাডা স্টুডেন্ট ভিসা যোগ্যতা ও খরচ সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে দিয়েছি।

সূত্র:- Right News BD

en_USEnglish