রুবেলের কথা মনে হলে আজও আমার হাসি পায়

ছুটির দিনে একটি ভালোবাসা নিয়ে গল্প। রুবেলের কথা মনে হলে আজও আমার হাসি পায়। আজব একটা নিয়ম আছে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে। ১ম বর্ষের সকল শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসের কোনো দোকানে খেতে দেওয়া হয় না। ক্যাম্পাস সিনিয়রদের উপর আরোপিত অপর বিধিনিষেধের মধ্যে ছিল, যে কোন ১ম বর্ষের শিক্ষার্থী কোন প্রেমিক বা বান্ধবীর সাথে ক্যাম্পাসে হাঁটতে পারবে না।

ফেব্রুয়ারির সকালে ক্যাফেটেরিয়ার বাইরে বন্ধুদের সাথে হাঁটা, যখন র‌্যাগ নামক একটি অদৃশ্য শৃঙ্খলে আবদ্ধ। খুব সকালে ক্লাস। এত সকালে অনেকে নাস্তা করে আসতে পারেনি। এই মুহুর্তে আমরা ক্যাফেতে কোনভাবে প্রবেশ করতে পারব না। তাহলে ক্যাফেতে একজন ওয়েটারের মাধ্যমে খাবার এনে মাঠে খেতে দেবে?

‘নন্দিতা, বেশি সাহস কোরো না, বিপদে পড়বে। সবাই তোমার জন্য র‌্যাগ খাবে’, কমেন্ট করে ক্লাসে চলে গেল রাজু। তার পিছু নিল আরও কয়েকজন। অন্যরা ক্যাফের সামনে দাঁড়াল।

রুবেলের কথা মনে হলে আজও আমার হাসি পায়

ঠিক তখনই, রুবেল ক্যাফের ভিতর থেকে একটা বাংলা টিস্যু (পুরানো খবরের কাগজের টুকরো) দিয়ে হাত মুছতে মুছতে আমাদের দিকে এলো। আমি একটু চমকে উঠলাম কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম। কারণ ছেলেটি নিজে ছাড়া আর কেউ নয়; আমার সঙ্গীর সাথে প্রথম বর্ষে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হাঁটা বারণ! বারণ থাকার স্বত্বেও আমি তাকে ক্যাম্পাসে আসতে নিষেধ করেছি, তাই সে আমার নতুন বন্ধুদের সাথেও দেখা করেনি।

‘তোমার কি কিছু লাগবে আপু?’ রুবেল আমার দিকে কৌতূহলী দৃষ্টিতে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল।

সে কিছু বলতে পারার আগেই তার সাথে থাকা খালি পেটের বন্ধুরা অর্ডার দিতে শুরু করল, তারা ক্যাফে বয়কে ডেকে, স্যান্ডউইচ, চা, নুডুলস, চিকেন চপ ইত্যাদি।

এই ক্যাম্পাসের ছাত্র নয় রুবেল। সে জন্য কোনো রকম চেষ্টা না করেই ক্যাফেতে নাস্তা করতে বেরিয়ে পড়লেন। সেই অবস্থায় আমিও কিছু বলতে পারছি না, কোনোমতে নিজের হাসি চেপে ওদের দেখছি। অদক্ষ ওয়েটারের বাজে হাল অবস্থা যে কেউ হাসবে। তার অবস্থা আরও খারাপ, যখন আমার বন্ধুরা তাকে সত্যিকারের ওয়েটার ভেবে টিপস দেওয়ার চেষ্টা করেছিল!

আজও আমার হাসি পায় সেদিনের কথা মনে পড়লে। তবে জানি না রুবেলের হাসি পায় কি না। যেহেতু, জীবনানন্দ দাশের কবিতার অনেকটা আজ আমরা একই নক্ষত্রের তলে, পৃথিবীর একই প্রান্তে, তবু কেউ কাউকে খুঁজছে না বহুদিন। হয়তো এভাবেই ভালোবাসা অনুজ্জল হয়ে যায়’।

সূত্র:- Right News BD

en_USEnglish