ভূমিকম্পের পর পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার তুরস্কের, উদ্ধার চায় সিরিয়া

ভূমিকম্পের পর পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার তুরস্কের উদ্ধারে সিরিয়া। দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতায় প্রদেশের প্রায় অর্ধেক ভবন ধসে বসবাসের বাইরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তুর্কি সরকার গত সপ্তাহের শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ভেঙে দ্রুত বড় ধরনের পুনর্গঠন শুরু করার অঙ্গীকার করেছে।

তুরস্কের দক্ষিণাঞ্চলীয় হাতা প্রদেশের প্রায় অর্ধেক ভবন ভূমিকম্পে ভেঙে পড়ে এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে সেগুলো আর বাসযোগ্য ছিল না। তুর্কি সরকার দ্রুত ক্ষতিগ্রস্ত ভবনগুলো ভেঙে পুনর্নির্মাণ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

দেশটির পরিবেশ ও নগরায়ন মন্ত্রী মুরাত কুরুম এক টুইট বার্তায় বলেছেন, “আমরা দ্রুত যে ভবনগুলো ভেঙে ফেলতে হবে এবং নিরাপদ বাড়ী নির্মাণ শুরু করব।”

স্থানীয় সময় ৬ ফেব্রুয়ারির ভোরে, দক্ষিণ তুর্কি শহর গাজিয়ানটেপের কাছে ৭.৮-মাত্রার ভূমিকম্প তুরস্ক এবং সিরিয়ার অনেক শহরকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। বুধবার পর্যন্ত, উভয় দেশে মৃতের সংখ্যা ৪১,০০০ ছাড়িয়েছে। আহত হয় লাখ লাখ মানুষ। যারা বেঁচে গেছে তারা প্রচণ্ড ঠান্ডায় গৃহহীন হয়ে পড়েছে।

ভূমিকম্পের পর পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার তুরস্কের, উদ্ধার চায় সিরিয়া

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান বলেন, তুরস্কে মৃতের সংখ্যা ৩৫ হাজার ৪ শত ১৮ জন এ পৌঁছেছে। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা আর জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা ৫,৮১৪।

এই দিনে তুরস্কে একটি ভবনের ধ্বংসস্তূপ থেকে একটি নারীকে জীবিত উদ্ধার করা হয়। তিনি প্রায় ২২২ ঘন্টা ধরে ধসে পড়া ভবনের নীচে আটকে ছিলেন।

কিন্তু উদ্ধার কাজ শেষের পথে। তুরস্কে যাওয়া বিভিন্ন দেশের উদ্ধারকর্মীরা নিজ নিজ দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।

কর্তৃপক্ষ তাদের বাড়িঘর নিরাপদ ঘোষণা করলে তুর্কি সরকারও লোকজনকে তাদের বাড়িতে ফিরে যেতে উৎসাহিত করেছে। প্রতিবেশী সিরিয়ার অবস্থা তুরস্কের চেয়েও খারাপ। দেশটি ইতিমধ্যেই দীর্ঘ ১১ বছরের গৃহযুদ্ধে বিধ্বস্ত হয়েছিল। এখন ভূমিকম্প এসেছে মৃতদের ওপর ঘা।

গৃহযুদ্ধের কারণে দেশটি দুই ভাগে বিভক্ত। সিরিয়ার বেশিরভাগ অংশ প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকলেও একটি অংশ এখনও বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।

ভূমিকম্পের পর পুনর্নির্মাণের অঙ্গীকার তুরস্কের, উদ্ধার চায় সিরিয়া

ফলে সেখানে ত্রাণ পাঠাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বিপাকে পড়তে হচ্ছে। মুখ্যভাবে তুরস্কের সাথে একক সীমান্ত দিয়ে সিরিয়ায় সহায়তা যাচ্ছিল। কিন্তু ত্রাণ তৎপরতা যথাযথভাবে পরিচালিত হচ্ছে না বলে অভিযোগ করে বেশ কয়েকদিন ধরে। সেখানে ত্রাণ পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে জাতিসংঘ।

আলেপ্পো থেকে পালিয়ে ইদলিবে আশ্রয় নেওয়া আব্দুর রহমান মুহাম্মদ রয়টার্সকে বলেছেন, এখানে পরিস্থিতি খুবই দুঃখজনক।

এখানে একজন শ্রমিক হিসাবে কাজ করে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়েছেন। তার প্রতিদিনের খরচ মেটাতে প্রতিদিন ১০ ডলার প্রয়োজন। আপনি খুব কমই তা উপার্জন করতে পারেন। অন্যথায় আপনি এখানে কিভাবে পুনর্নির্মাণ করবেন?”

রয়টার্স জানিয়েছে যে প্রেসিডেন্ট আসাদ ভূমিকম্পের ৮ দিন পর মঙ্গলবার সাহায্যের জন্য দ্বিতীয় সীমান্ত ক্রসিংয়ের অনুমতি দিয়েছেন।

হোয়াইট হেলমেট দানশীল সংস্থা সিরিয়ার বিদ্রোহী নিয়ন্ত্রিত অংশে উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছে। এর প্রধান রায়েদ সালেহ বলেছেন, “আমাদের সাথে কী ঘটছে, বিশ্বে এই প্রথম এটি ঘটছে।” কোথাও ভয়াবহ ভূমিকম্প হলে সেখানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আর জাতিসংঘ কোনো প্রকার সাহায্য পাঠাচ্ছে না।

“আমরা একের পর এক পাথর সরিয়ে নিচ্ছি কিন্তু নীচে কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। যাইহোক, কংক্রিটের নীচে চাপা পড়ে থাকা লোকেরা আমাদের বের করে নাও! চিৎকার করে। কিন্তু আমরা সেখান থেকে খালি হাতে ফিরে যাচ্ছি। এক্ষেত্রে আপনার একা হাতের জন্য যথেষ্ট নয়।

সূত্র:- Right News BD

en_USEnglish