আজ মঙ্গলবার ১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও পাইকারি ও খুচরা বিদ্যুতের নতুন দাম বৃদ্ধির বিষয়ে জানতে চাইলে বেসরকারি ব্যাংকে কর্মরত রায়হানুল আলম জানান। গ্যাস ও বিদ্যুৎ উভয়ই মানুষের জীবনের সাথে সরাসরি জড়িত।
তাদের দাম বৃদ্ধি মানে সবকিছুর দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যায়। বেতন লাফিয়ে বাড়ছে না। রায়হানুল জানান, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বছরে অন্তত দু’বার ঢাকার বাইরে যেতেন।
গত বছরের প্রথম দিকে গিয়েছিল। কিন্তু বাড়তি খরচের কারণে এ বছরের শেষে আর যাইনি। বিদ্যুৎ বিভাগ আজ দাম বাড়িয়েছে, যা আগামীকাল অর্থাৎ ১ ফেব্রুয়ারি (বুধবার) থেকে কার্যকর হবে। নতুন দাম অনুযায়ী গ্রাহক পর্যায়ে সর্বনিম্ন বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী ইউনিট প্রতি ২০ পয়সা দাম বাড়িয়েছে।
গ্রাহক পর্যায়ে দাম ৩ টাকা ৯৪ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৪ টাকা ১৪ পয়সা করা হয়েছে। এদিকে পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ৬ টাকা ২০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ১০ পয়সা করা হয়েছে।
পাইকারি পর্যায়ে দাম বেশি হওয়ার কারণে খুচরা পর্যায়ে সরবরাহকারী কোম্পানিগুলো দাম বাড়াতে পারে। খুচরা বাজারে দাম আরও বাড়ানো হলে সাধারণ মানুষের ওপর আরো চাপ বাড়বে। এর পূর্বে গত নভেম্বরে বিইআরসি পাইকারি পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম ১৯ দশমিক ৯২ শতাংশ বাড়িয়েছিল। এটি ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়।
শুধু গ্যাস, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি নয়, এর সাথে বেড়েছে সারের দামও, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) ৫১টি সেবার দাম, ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ভর্তুকি মূল্যে বিক্রয় হওয়া পণ্যের দাম, খাদ্য বান্ধব প্রোগ্রামের চালের দামও। গত ১৪ বছরে ১৪ বার পানির দাম বাড়িয়েছে ঢাকা ওয়াসা।
পূর্বের বিদ্যুতের দাম নির্ধারণ
গত ১৪ বছরে মোট ১১ বার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে। এর পূর্বে গত বছর রেকর্ড হারে বেড়েছে জ্বালানি তেলেরও দাম। গত জুন মাসে গ্যাসের দাম গড়ে ২৩ শতাংশ বাড়ানো হয়েছিল। ১৮ জানুয়ারী (বুধবার) এটি রেকর্ড অনুযায়ী ৮২ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়।
গ্যাস, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দাম বাড়ানো হচ্ছে এমন সময়ে যখন মানুষ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের উচ্চমূল্য নিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এদিকে কমেছে ব্যবসার গতি। এতে কোন প্রকার বাড়তি কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে না বলে সংশ্লিষ্টরা বলছেন।
বিশ্ববাজারে মূল্যবৃদ্ধি এবং গত মে মাস থেকে ডলারের দাম ৮৬ টাকা থেকে ১০৫ টাকায় বৃদ্ধি পাওয়ায় সব আমদানি পণ্য ও শিল্পের কাঁচামালের দাম বেড়ে যাওয়াতে নিত্যপণ্যের দামও বেড়েছে।
বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) গত অক্টোবর মাসে এক প্রতিবেদনে বলেছেন, দেশের ৬৮ শতাংশ মানুষ খাদ্য কিনতে হিমশিম খাচ্ছে। জরিপবিভাগ, মানুষকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে গত ছয় মাসে তাদের সবচেয়ে বড় ধাক্কা কী ছিল? উত্তরে, ৮৮ শতাংশ মানুষ উচ্চ খাদ্য মূল্যকে একটি বড় ধাক্কা হিসাবে উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য তিনটি কারণ প্রধান আঘাত হিসাবে আবির্ভূত হয়েছিল – রোগ এবং চিকিৎসা ব্যয়, তেলের দাম ও পরিবহন খরচ এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এদিকে সরকার বারবার বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের দাম বাড়াচ্ছে।
১ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়াতে ভোক্তাদের জন্য বোঝা মনে হচ্ছে। এখন প্রশ্ন হল তাদের হতাশা প্রকাশ করা ছাড়া আর কী করার আছে। এগুলো গ্রাহকের ভোগান্তি বাড়ানো ছাড়া আর কিছুই নয়। কিছুদিন আগেই গ্যাসের দাম বেড়েছে। এরপর আবারও বিদ্যুতের দাম বেড়ে যাওয়ায় জীবন চালাতে হিমশিম খেতে হবে মানুষকে।
সবকিছু বিদ্যুতের সাথে সংযুক্ত। দাম বাড়ার প্রভাব সবকিছুর উপেই পড়বে। বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর জন্য গণশুনানির কোন রকম প্রয়োজন নেই। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনকে (বিইআরসি) বাইপাস করে নির্বাহী আদেশে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে।
কারওয়ান বাজারের একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, বিদ্যুৎ বিল ও গ্যাসের বিল বাড়লে দোকান ভাড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জিনিসপত্রের দামও বাড়বে। তখন তাকে ক্রেতার কাছ থেকে অতিরিক্ত মূল্য সমন্বয় করতে হবে।
সেক্ষেত্রে ক্রেতারা হতাশ হচ্ছেন। এ অবস্থায় কারো কিছু করার নেই। সবাই অসহায়।
সূত্র:- Right News BD