যেসব খাবার খেলে হাড় দ্রুত শক্তিশালী হয়: মানুষের বয়স বৃদ্ধি সাথে সাথে হাড়ের শক্তি কমতে থাকে। অনেকেরই আবার কম বয়সেও হাড় দুর্বল হয়ে যায়। তাদের ক্ষেত্রে মজবুত হাড় সুস্থ শরীরের প্রধান ভিত।
শুরু থেকেই বলা যায় সঠিক যত্ন নিলে হাড় ক্ষয়ের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। হাড়কে শক্তিশালী রাখতে সুষম খাদ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
হাড়ের সুস্থতার জন্য পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি অপরিহার্য। তাই, সুষম খাদ্য গ্রহণ করে এই প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানগুলি নিশ্চিত করা যায়।
হাড়কে মজবুত এবং কর্মক্ষম রাখতে নিয়মিত কোন কোন খাবার খাওয়া উচিত তা এখানে দেওয়া হল।
হাড় দ্রুত শক্তিশালী করার খাবার
দই হাড় মজবুত রাখে
দই প্রোবায়োটিক, ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, এবং ভিটামিন ডি, এ ও ফোলেটের চমৎকার উৎস। গবেষণা অনুযায়ী, নিয়মিত দই খেলে হাড়ের ফ্র্যাকচার প্রতিরোধ সম্ভব। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ দই হাড়ের দুর্বলতা কমাতে কার্যকর।
দুধ হাড় মজবুত করে
ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, পটাসিয়াম, এবং ভিটামিন এ ও ডি সমৃদ্ধ দুধ হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নিয়মিত দুধ পান করলে হাড় মজবুত হয় এবং অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করা যায়। তবে ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু ব্যক্তিদের জন্য দুধ এড়ানো উচিত।
সবুজ শাক হাড়কে শক্তিশালী করে
পালং শাক, পাতা কপি, এবং লেটুসের মতো সবুজ শাক ক্যালসিয়াম, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, ভিটামিন সি ও ভিটামিন কে সমৃদ্ধ। দৈনিক তিন ধরনের শাক খেলে হাড় মজবুত হয় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।
পনির হাড়ের ভঙ্গুরতা রোধ করে
পনিরে রয়েছে প্রচুর ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ, বি১২, জিঙ্ক, এবং ফসফরাস। এটি হাড়কে শক্তিশালী করে ও ভঙ্গুর হওয়া থেকে রক্ষা করে। ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু ব্যক্তিরা ল্যাকটোজমুক্ত চেডার পনির খেতে পারেন।
সামুদ্রিক মাছ হাড়কে সুরক্ষিত রাখে
সার্ডিন, টুনা, ক্যাটফিশ, এবং স্যামনের মতো মাছ ভিটামিন ডি-এর চমৎকার উৎস। ভিটামিন ডি হাড়ের খনিজকরণে সহায়তা করে এবং শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণ নিশ্চিত করে, যা হাড়ের সুরক্ষায় অপরিহার্য।
ডিম হাড় মজবুত করে
ডিমের কুসুমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, এ, ই, এবং কে থাকে, যা হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। ভিটামিন ডি হাড়ে ক্যালসিয়াম শোষণে সহায়তা করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। প্রতিদিন একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির জন্য দুটি ডিম খাওয়া উপকারী।
আমন্ড বাটার হাড়ের শক্তি বাড়ায়
আমন্ড বাটার প্রোটিন এবং ক্যালসিয়ামের সমৃদ্ধ উৎস। এটি কোলেস্টেরল কমাতে সহায়ক এবং স্বাদের পাশাপাশি হাড়ের যত্নে কার্যকর। প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ আমন্ড বাটার খাওয়া হৃদপিণ্ড এবং হাড়ের জন্য উপকারী।
ব্রোকলি হাড়কে মজবুত রাখে
ব্রোকলি ক্যালসিয়াম, ভিটামিন সি, ফসফরাস, ফোলেট এবং ভিটামিন কে-তে সমৃদ্ধ। প্রতিদিন ব্রোকলি খেলে হাড় এবং দাঁত মজবুত হয়। এছাড়া, এটি ওজন কমানো, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ এবং ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়ক।
বীজ হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষা করে
তিল, চিয়া, সূর্যমুখী এবং কুমড়ার বীজ প্রোটিন, ফাইবার, এবং ক্যালসিয়ামের চমৎকার উৎস। নাস্তা, স্মুদি, সালাদ বা ডিমের সাথে বীজ খেলে হাড়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়।
বাদাম হাড় মজবুত রাখে
বাদামে রয়েছে স্বাস্থ্যকর চর্বি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড এবং প্রোটিন, যা হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক। প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের বাদাম খাওয়া সামগ্রিক স্বাস্থ্যের উন্নতি করে এবং হাড়ের শক্তি বাড়ায়।
এখন তাহলে বলা যায় হাড় দ্রুত শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে এই সমস্ত খাবারগুলি অত্যন্ত প্রয়োজন।
ওজন ও হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষায় যেসব খাবার এড়িয়ে চলবেন
ওজন কমানো এবং হাড়ের স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে, কিছু খাবার এবং পানীয় থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। এই ধরনের খাবারগুলো আপনার শরীরের ক্ষতি করতে পারে। নিচে এমন কয়েকটি খাবারের তালিকা দেওয়া হলো, যেগুলো এড়িয়ে চলা উচিত:
১. কম ক্যালোরির ডায়েট
ওজন কমানোর জন্য অনেকে কম ক্যালোরির ডায়েট মেনে চলেন। কিন্তু অত্যন্ত কম ক্যালোরি গ্রহণ করলে শরীর প্রয়োজনীয় পুষ্টি হারায়, যা হাড় এবং পেশী দুর্বল করে ফেলে। তাই সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করে ক্যালোরি গ্রহণ করতে হবে।
২. অতিরিক্ত লবণযুক্ত খাবার
অস্টিওপোরোসিস বা হাড়ের ক্ষয় প্রতিরোধে উচ্চ লবণযুক্ত খাবার, যেমন চিপস, ফ্রাইড চিকেন, সসেজ এড়িয়ে চলা উচিত। বেশি লবণ খেলে হাড়ের স্বাস্থ্য খারাপ হতে পারে।
৩. অতিরিক্ত অ্যালকোহল
অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দেয় এবং অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকি বাড়ায়। গবেষণায় দেখা গেছে, মদ্যপানকারীদের হাড়ের দুর্বলতা বেশি থাকে।
৪. অত্যাধিক ক্যাফেইন
চা, কফি এবং এনার্জি ড্রিংকে পাওয়া ক্যাফেইন বেশি পরিমাণে গ্রহণ করা হলে হাড়ের ক্ষয় হতে পারে এবং হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ে।
৫. কোমল পানীয়
কোমল পানীয়, বিশেষ করে কোলা, হাড়ের জন্য ক্ষতিকর। এসব পানীয় হাড়ের ঘনত্ব কমিয়ে দিতে পারে এবং কিডনির সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পরিশেষে: এই খাবারগুলো থেকে দূরে থাকলে আপনার হাড় ও শরীর সুস্থ থাকবে।
সূত্র: Right News BD