মোবাইল ফোন বা স্মার্টফোনের উপকারিতা ও অপকারিতা: স্মার্টফোন বর্তমান যুগের অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি ডিভাইস। এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাকে অনেক সহজ করেছে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি স্মার্টফোন ব্যবহারের উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে?
এই পোস্টে আমরা স্মার্টফোনের সুবিধা ও অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
স্মার্টফোনের উপকারিতা
১. দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা
স্মার্টফোনের মাধ্যমে আমরা দ্রুত এবং সহজে যোগাযোগ করতে পারি। যেমন-
কল, টেক্সট মেসেজ, ভিডিও কল এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের সারা বিশ্বের সঙ্গে সংযুক্ত করে রাখে।
আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনার প্রিয়জনদের সাথে সংযুক্ত থাকা এখন আরও সহজ হয়ে উঠেছে।
২. তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি
ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার দিক দিয়ে ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে মাত্র কয়েক মিনিটেই দুরের যেকোনো তথ্য সহজেই পেতে পারি।
সেটি হতে পারে যেকোন শিক্ষা বিষয়ক তথ্য কিংবা ব্যবসা, বিনোদন, খেলা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক অজানা তথ্য সহ বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জানার সহজ উপায়।
৩. বিনোদনের উৎস
বর্তমানে বাজারের যেকোন স্মার্টফোন কেনার পর বাড়তি সুবিধার জন্য বিভিন্ন ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করাই থাকে, যেমন- গেম, মুভি, মিউজিক এবং ফেসবুক, টুইটার এর মত বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাপ্লিকেশন থাকে। আর সেই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহার করামাত্র আমাদের বিনোদন দেয়।
আমারা মোবাইল ফোনের সেই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ইন্টারনেট কিংবা ওয়াইফাই ব্যবহার এর মাধ্যমে যেকোনো জায়গায় বসে সহজেই বিনোদন মূলক ভিডিও উপভোগ করতে পারি।
৪. স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ট্র্যাকিং
অনেক স্মার্টফোনে স্বাস্থ্য ও ফিটনেস ট্র্যাক করার জন্য অ্যাপ্লিকেশন থাকে। এগুলো আমাদের দৈনন্দিন শারীরিক কার্যকলাপ, খাওয়া-দাওয়ার তথ্য এবং ঘুমের গুণগত মান পর্যবেক্ষণ করে। এই ধরনের অ্যাপ্লিকেশনগুলো স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধি করে।
৫. শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ
অনলাইন শিক্ষার জন্য স্মার্টফোন খুবই উপকারী। বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, ভিডিও টিউটোরিয়াল এবং ই-বুকের মাধ্যমে স্মার্টফোন আমাদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ করে দেয়।
আমরা যে কোনো জায়গা থেকে নতুন কিছু শিখতে পারি, যা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৬. ডিজিটাল লেনদেন
মোবাইল ব্যাংকিং এবং ডিজিটাল পেমেন্ট সেবা স্মার্টফোনের মাধ্যমে আরও সহজ হয়েছে। যেমন
বিকাশ, নগদ, রকেট এর মতো অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করে দ্রুত এবং নিরাপদে লেনদেন করা যায়, যা আমাদের দৈনন্দিন আর্থিক কাজকর্মকে সহজ করেছে।
স্মার্টফোনের অপকারিতা
১. আসক্তি এবং সময় অপচয়
স্মার্টফোনে আসক্তি আমাদের জীবনে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনেক সময় আমরা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ইউটিউব শর্ট ভিডিও, সোশ্যাল মিডিয়া, গেমিং অ্যাপসে সময় অপচয় করি। যা আমাদের দৈনন্দিন কাজকে প্রভাবিত করতে পারে।
এই সমস্ত শর্ট ভিডিও এবং গেমগুলি আমাদের প্রয়োজনীয় কাজের মনোযোগ সরিয়ে দিতে পারে।
২. স্বাস্থ্যের ক্ষতি
বিনা করণে দীর্ঘ সময় স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে আমাদের চোখের দৃষ্টি সমস্যা, মাথাব্যথা, ঘাড় ও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
বিশেষ করে স্ক্রিনের দিকে দীর্ঘক্ষণ তাকিয়ে থাকলে চোখের ক্ষতি এবং ঘুমের সমস্যা হতে পারে।
এছাড়া অতিরিক্ত মোবাইলের স্ক্রিনের রেডিয়েশন এক্সপোজার দীর্ঘমেয়াদে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
৩. ব্যক্তিগত তথ্যের নিরাপত্তা ঝুঁকি
ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা পেতে আমাদের হাতে থাকা স্মার্টফোন বেঁচে নেই। যেমন ব্যাংকিং তথ্য, ব্যক্তিগত ছবি, এবং ব্যক্তিগত মেসেজ।
আমাদের এই ব্যক্তিগত তথ্যের সুরক্ষা সঠিকভাবে না নিলে এই তথ্যগুলো হ্যাক হওয়া বা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যা কিনা ভবিষ্যতের জন্য আমাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৪. সামাজিক জীবনে প্রভাব
অতিরিক্ত স্মার্টফোনের ব্যবহার এর ফলে আমরা অনেক সময় বাস্তব জীবনের সম্পর্ক এবং সামাজিকতা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি।
নিয়মিত আমরা ভার্চুয়াল যোগাযোগে ব্যস্ত থাকি, যা আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলতে পারে এবং সামাজিক সম্পর্কগুলো দুর্বল করতে পারে।
৫. শারীরিক কার্যকলাপ
স্মার্টফোন ব্যবহারের হার এর ফলে অনেক সময় আমরা শারীরিক কার্যকলাপ কমিয়ে দেই।
বিভিন্ন কাজ স্মার্টফোনের মাধ্যমে হওয়াতে আমাদের শারীরিক কমিয়ে দেই, যা কিনা দীর্ঘমেয়াদে আমাদের শরীরের জন্য ক্ষতিকর হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
৬. অর্থের অপচয়
বিনা কারণে আমাদের স্মার্টফোনে নতুন নতুন অ্যাপ্লিকেশন ইনস্টল করে সেটির প্রতি আরো আসক্তি হয়ে পড়ি।
কেননা এই অ্যাপ্লিকেশনগুলি ব্যবহারের জন্য দিনের পর দিন অপ্রয়োজনীয়ভাবে অর্থ ব্যয় করি।
নতুন মডেলের স্মার্টফোন কেনা এবং পেইড অ্যাপ্লিকেশন বা সাবস্ক্রিপশন (Subscription) কেনার ফলে আমাদের অর্থের অপচয় হয়।
পরিশেষে
আমাদের জীবনে স্মার্টফোন যেমন সুবিধা এনে দিয়েছে, তেমনি কিছু অসুবিধার উপরো প্রভাব এনেছে।
আমাদের প্রয়োজন অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমরা এর সুবিধাগুলো উপভোগ করতে পারি, তেমনি এটির অপকারিতাগুলো এড়াতে পারি।
বর্তমানে স্মার্টফোনের উপকারিতা পাওয়ার জন্য অবশ্যই আমাদের সময় নির্ধারণ করা জরুরী। সঠিক সময় নিরাপত্তা ব্যবস্থা না নিলে আমাদের শারীরিক কার্যকলাপের উপর প্রভাব পড়তে পারে।
সূত্র: Right News BD