সুন্দরবনের এক অপরূপ সৌন্দর্য দেখতে দেশ–বিদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসু পর্যটকেরা। এই বন ঘিরে মানুষের যত আগ্রহ, কিছু অসুবিধা ও সীমাবদ্ধতার কারণে সেটা মেটাতে পারছেন না সাধারণ পর্যটকেরা। এগুলোর বিষয়ে উদ্যোগ নিলে পর্যটকদের কাছে সুন্দরবন ভ্রমণ আরও আনন্দের হবে।
সুন্দরবনের করমজল পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজাদ কবির হাওলাদার বলেন, এ বছরের প্রথম দিন থেকে ১৬ তারিখ পর্যন্ত দেশি–বিদেশি মোট পর্যটকের সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। করোনা অতিমারি ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের কারণে গত দুই বছর পর্যটক আগমনে ভাটা পড়েছিল এখানে। এই সংকট পুরোপুরি কেটে গেলে আরও অনেক দর্শনার্থী সুন্দরবন ভ্রমণে আসবেন বলে মনে করছেন তিনি।
কথা হয় শরীয়তপুর থেকে সুন্দরবনে আসা কবির মোল্যার সঙ্গে। তিনি বলেন, ১২ জানুয়ারি রাত ১১টার দিকে বাসে করে ৩৮ জনের একটি দল সুন্দরবন ভ্রমণে মোংলার উদ্দেশে রওনা দেন। পরদিন ভোর পাঁচটার দিকে পৌঁছান মোংলার পিকনিক কর্নারে। তারপর সেখান থেকে ট্রলারে করে সুন্দরবনে যান। এটা তাঁদের প্রথম সুন্দরবন ভ্রমণ।
এখানে ঘুরে তাঁরা সবাই আনন্দিত। তাঁরা সুন্দরবনের করমজল এবং হাড়বাড়িয়া পর্যটন ও বন্য প্রাণী প্রজনন কেন্দ্র ঘুরে এসেছেন। এখানকার গাছগুলো এতটাই দুষ্প্রাপ্য যে সেগুলো সুন্দরবন ছাড়া অন্য কোথাও দেখেননি।
অপরূপ সুন্দরবণের সৌন্দর্য
সুন্দরবন ভ্রমণ একজন মানুষকে নানাভাবে সমৃদ্ধ করে। এখানকার নদী ও বনের নানা রকম পশুপাখি সরাসরি দেখা ও সেগুলো সম্পর্কে জানার বিশাল সুযোগ আছে। এখান থেকে সুউচ্চ ওয়াচ টাওয়ারে চড়ে একজন দর্শনার্থী অনেক দূর পর্যন্ত সুন্দরবনের অপার সৌন্দর্য দেখতে পান। এ ছাড়া বনের সংরক্ষিত এলাকার মধ্যে হেঁটে ঘুরে দেখার জন্য প্রতিটি পর্যটনকেন্দ্রে আছে কাঠ ও কংক্রিটের পাটাতন।
দর্শনার্থীদের কেউ কেউ বলেন, দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা পর্যটকদের বিশ্রামের জন্য বিশ্রামাগার বা স্থানে স্থানে গোলচত্বর থাকলে ভালো হতো। সুপেয় পানির সংকটের কারণে বেশি দাম দিয়ে বোতলজাত পানি কিনে পান করতে হয়। বোতল এখানে–সেখানে ফেলার কারণে পরিবেশদূষণও হয়। পরিচ্ছন্ন ও মানসম্পন্ন শৌচাগারের খুবই অভাব এখানে।
ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত তাঁদের ব্যবসা মোটামুটি ভালোই চলে। নানা রকম মুখরোচক খাবার, মধু ও খেলনা বেশি বিক্রি হয় এই সময়। একটা উৎসবমুখর পরিবেশ থাকে তখন।
পর্যটকদের আরও কিছু সমস্যা প্রসঙ্গে মোংলা বন্দর জালি বোট মালিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি এইচ এম দুলাল বলেন, মোংলা থেকে সুন্দরবনের সৌন্দর্য দেখতে যাওয়ার একমাত্র সহজলভ্য মাধ্যম জালি বোট (ইঞ্চিনচালিত একধরনের ছোট ট্রলার), ক্ষেত্রবিশেষে লঞ্চ। কিন্তু সেগুলোয় পর্যটকদের ওঠানোর জন্য নির্দিষ্ট কোনো ঘাটের ব্যবস্থা নেই। ফলে এখানে আগত পর্যটকদের জালি বোটে তুলতে বিপাকে পড়তে হয় মাঝিদের। পর্যটকেরা এসব অসুবিধার কারণে দ্বিতীয়বার এখানে আসতে চান না।
পর্যটকদের ভোগান্তির বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয় মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (প্রশাসন) মো. শাহীনুর আলমের সঙ্গে। তিনি বলেন, বন্দর কর্তৃপক্ষ এসব সমস্যা সমাধানে নানা রকম পরিকল্পনা নিয়েছে।
সূত্র: রাইট নিউজ বিডি