সরিষা ছেড়ে সয়াবিন তেল আসায় বাড়ছে হৃদরোগ

সম্প্রতি সময়ে সরিষা ছেড়ে সয়াবিন তেল ব্যবহারে দ্বিগুণ বেড়ে গেছে হৃদরোগের। একসময় বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের সব চাহিদা মেটানো হতো সরিষা সহ দেশে উৎপন্ন অন্যান্য তেলবীজ থেকে। শুধু যে রান্নার কাজে সরিষার তেল ব্যবহার করা হতো তা কিন্তু নয়। সর্দি-কাশি সহ শরীরের নানা ধরণের রোগের উপশম হিসেবেও ব্যবহৃত হতো। কিন্তু বহুজাতিক তেল কোম্পানি সরিষা তেলের বিরুদ্ধে নানা ধরণের বিরূপ প্রচারণা চালানোর কারণে মানুষ ধীরে ধীরে সরিষা ছেড়ে সয়াবিন তেল আমদানি করে।

এতে মানুষ নিত্যদিনের ভোজ্যতেলে সয়াবিন তেলের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। বাংলাদেশে এখনো বেশ কিছু দেশীয় কোম্পানি সরিষার তেল বিক্রি করে, কিন্তু তারা কেউ এর মৌলিক গবেষণায় কাজ করে না বা পরিকল্পিতভাবে সরিষার তেল ব্যবহারের জন্য কখনো প্রচারণা চালায় না।

হৃদরোগ ঠেকাতে পারে সরিষার তেল

হৃদরোগ ঠেকাতে পারে সরিষার তেল

একটি সূত্র থেকে জানা যায়, স্বাস্থ্য রক্ষার্থে উচ্চ রক্তচাপ ও চর্বি কমিয়ে দিতে পারে সরিষার তেল। কার্ডিওভাস্কুলার রোগসমূহ কমিয়ে যেতে পারে। কারণ সরিষার তেলে রয়েছে মনোআনস্যাচুরেটেড ও পলিস্যাচুরেটেড ফ্যাট সমৃদ্ধ বলে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে। এর ফলে ব্যবহাকারীর কার্ডিওস্কুলার রোগের ঝুঁকি কমে যায়। গবেষণা রিপোর্ট থেকে দেখা যায়, সরিষার তেলে অসম্পৃক্ত একক ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ ৬৫ শতাংশ থেকে ৭২ শতাংশ ফ্যাটি সম্পৃক্ত (স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর) এসিডের পরিমাণ ৬ থেকে ১০ শতাংশ। সরিষার তেলে আরো কিছু অসম্পৃক্ত একক ফ্যাটি এসিড রয়েছে, যেগুলোর পরিমাণ বাংলাদেশে এখন বহুল ব্যবহৃত সয়াবিন তেলের মনোআনস্যাচুরেটেড বা অসম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ থেকে অনেক বেশি।

গবেষণার তথ্য অনুসারে, সয়াবিন তেলে সম্পৃক্ত ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ প্রায় ১৫ শতাংশ। সয়াবিন তেলের চেয়ে সরিষার তেল স্বাস্থ্যকর। কারণ এতে কেমিক্যাল প্রসেস করতে হয় না। যা সয়াবিনে অবশ্যম্ভাবী। পূর্বে কাঠের ঘানিতে তেল ভাঙ্গানো হতো। কিন্তু এখন মেশিনের সাহায্যে ভাঙ্গায়, কিন্তু কোনো ধরণের রাসায়কি প্রসেস করতে হয় না। তবে অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার লোভে বাজারের সস্তা পামওয়েল অথবা মেশিন অয়েল ব্যবহার করে সরিষার তেলের পরিমাণ বাড়ায় এবং এতে গন্ধ যোগ করার জন্য কেমিক্যাল মেশানো হয়। এ ধরণের সরিষার তেল স্বাস্থ্যে জন্য ক্ষতিকর।

অপরদিকে সয়াবিন তেল অবশ্যই কেমিক্যাল প্রসেস করতে হয় এর দুর্গন্ধ দুর করার জন্য। অর্গানিক সয়াবিন তেল বাজারে প্রাপ্ত তেলের মতো পাতলা নয়, ভারী। সয়াবিন বীজ থেকে প্রাপ্ত এ ভারী তেলকে অবশ্যই কেমিক্যাল মিশিয়ে পাতলা এবং দূর্গন্ধ দুর করতে হয়। সেই কেমিক্যাল থেকেই সয়াবিনের ক্ষতিকর দিকটা চলে আসে। সয়াবিন তেলকে আবার সোনালি রং দিয়ে আরো কিছু কেমিক্যাল যোগ করতে হয়।

ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় সরিষার তেল

ঔষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায় সরিষার তেল

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও ডাক্তারদের পরীক্ষামতে সরিষার তেল ঘন হয় এবং এতে উচ্চমাত্রার ভিটামিন ‘ই’ থাকে। সে কারণে এই তেল ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি থাকে এবং অন্যান্য দুষিত পদার্থ থেকে ত্বককে সুরক্ষা করে। স্কিন সহ ক্যান্সারও প্রতিরোধ করতে পারে সরিষার তেল। ভিটামিন ‘ই’ মুখের বলি রেখা ও বয়সের ছাপ দুর করে। সে কারণে সরিষার তেল সানস্ক্রিন হিসেবে লোশনের মতো ব্যবহার করে অনেকে।

শুস্কে ঠোঁটের যন্তে সরিষার তেল চমৎকার প্রতিকার হিসেবে কাজ করে। সরিষার তেল চুল বৃদ্ধিতে সাহায্য করে, অকালে চুল সাদা হওয়া রোধ করে ও চুল পড়া কমায়। সরিষার তেলে ভিটামিন ও খনিজে পরিপূর্ণ। উচ্চমাত্রার ‘বিটা ক্যারোটিন’ থাকে। বিটা ক্যারোটিন ভিটামিন এতে রূপান্তরিত হয়ে চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এছাড়া এতে আয়রণ, ক্যালসিয়াম, ফ্যাটি এসিড ও ম্যাগনেসিয়াম থাকে, যা চুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পরিপাকতন্ত্র, রক্ত সংবহনতন্ত্র ও রেচনতন্ত্রের শক্তিশালী উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে। সরিষার তেল খাওয়ার পাশাপাশি বাহ্যিকভাবে শরীরে ম্যাসাজ করলে রক্ত সঞ্চালন এবং শরীরের তাপমাত্রা কমে। সরিষার তেলে গ্লুকোসিনোলেট নামক উপাদান থাকে, যা অ্যান্টিকারসিনোজেনিক (ক্যান্সাররোধী) উপাদান হিসেবে পরিচিত।

এছাড়া ও সাইনুসাইটিসের প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে সরিষার তেল অত্যন্ত কার্যকরী, ঠান্ডায় কাশি নিরাময়েও চমৎকার কাজ করে। ব্যাকটেরিয়ার ইনফেকশনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারে। এতে অ্যালাইল আইসোথায়োসায়ানেট নামক অ্যান্টিফাঙ্গাল উপাদান থাকে বলে ছত্রাকের ইনফেকশন নিরাময়ে কাজ করে।

বাংলাদেশে হাজার বছর আগে থেকে সরিষার তেলকে ভোজ্যতেল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল। যাতের বয়স ৭০ বছর অথবা ৮০ বছর তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করলে তারা এখনো বলেন, তাদের ছেলে বেলায় ভোজ্য তেল হিসেবে সরিষার তেল খাওয়া ছাড়াও নানা ধরণের ঔষূধ হিসেবে ব্যবহার করা হতো। কিন্তু স্বাধীনতার পর হঠাৎ করে সরিষার ব্যবহার কমে যায়।

চলতি শতকের শুরু থকেই বাংলাদেশে যে হারে হৃদরোগী ও উচ্চ রক্তচাপের রোগী বেড়েছে, পূর্বে এত বেশি মানুষের এরকম রোগ হতো না। অসত কিছু প্রচারণার কারণে বাংলাদেশের সরিষার তেলের উৎপাদনে ধবস নামে এবং তেলে চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানি হতে থাকে সয়াবিন তেল। ফলে বাংলাদেশের কার্ডিওলজির রোগী বাড়তে থাকে। কার্ডিওলজির রোগীর পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়েছে বলে দেশে শত শত কার্ডিওলজির চিকিৎসকও বেড়েছে। একবার কেউ কার্ডিওলজি সমস্যায় ভুগলে তা থেকে স্থায়ীভাবে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে। কারণ সারা জীবনই ঔষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে যেতে হয় বেচে থাকা কালিন।

সূত্র:- Right News BD

en_USEnglish