শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নিবেন: শুরু হয়েছে শীতকালের ঠান্ডা বাতাস, আর সেই বাতাসই বলে দিচ্ছে শীত আসছে! বাহারি পিঠা, হাঁসের মাংস আর বিবাহ সহ অনেকের কাছে শীতকাল একটি প্রিয় ঋতু। আর এই শীতে অনেকেই স্টাইলিশ ড্রেসআপ পছন্দ করেন, তাদের কাছেই মূলত শীতকাল খুবই প্রিয়। কিন্তু শীতের ঠান্ডা বাতাস ত্বকের জন্য আরামদায়ক নয়! শীতের শুষ্কতা আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা কেড়ে নেয়। শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ত্বকের সমস্যাও বাড়তে থাকে।
তাই এই সময়ে ত্বকের বাড়তি যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। ত্বক সুন্দর ও কোমল রাখতে ত্বকের যত্ন একান্ত প্রয়োজন। নিয়মিত ত্বকের যত্ন আপনার ত্বককে রাখবে মসৃণ ও কোমল। আজকের এই নিবন্ধে শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে যে পদক্ষেপগুলি নিচে দেওয়া আছে সেই পদক্ষেপগুলি আপনার জন্য অনেকটাই হেলফুল হতে চলেছে।
শীতের সময় ত্বকের যত্ন
লিপস এক্সফোলিয়েশন
আমরা সবাই কমবেশি ত্বক এক্সফোলিয়েট করে থকি। তবে শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার পাশাপাশি ঠোঁটও এক্সফোলিয়েট করা দরকার। শীতকালিন সময়ে ঠোঁট আরও রুক্ষ ও শুষ্ক হয়ে যায়। এক্সফোলিয়েশন ত্বকের মৃত কোষগুলো অপসারণ করতে সাহায্য করে, ত্বককে শ্বাস নিতে দেয়। এছাড়া এটি রুক্ষ ত্বককে নরম করে, ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে পলিশ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়া এটি ত্বকের উপরিভাগের ময়লা ও দূষণও দূর করে। এক্ষেত্রে লিপ স্ক্রাব ক্রয় করতে পারেন, আপনি চাইলেও ফেইস স্ক্রাব দিয়েও কাজটি করতে পারেন।
নিয়মিত ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার
শীতকালে ত্বকের যত্নে ময়েশ্চারাইজার অপরিহার্য। শুষ্ক বা তৈলাক্ত সব ধরনের ত্বকেই ময়েশ্চারাইজরের প্রয়োজন পড়ে। ঠিক এই সময় একটি জেল বা ক্রিম ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করা উচিত। এছাড়াও ক্লিনজার ব্যবহার করার নিয়ম অনুযয়ী ব্যবহার করে মুখ ধোয়ার পর ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন। জেল ময়েশ্চারাইজার সব ধরনের ত্বকের জন্য উপযুক্ত, বিশেষ করে তৈলাক্ত ত্বক। অনেকেই ভারী ক্রিমি ফর্মুলার থেকে হালকা ওজনের জেল ভিত্তিক ময়েশ্চারাইজার পছন্দ করেন। জেল ময়েশ্চারাইজার ত্বককে পুরোপুরী হাইড্রেটেড রাখে এবং রুক্ষ্মতা দূর করতে সাহায্য করে।
সানস্ক্রিনের ব্যবহার
শীতে অনেকেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করাটা খুব একটা পচ্ছন্দ করেন না। অনেকেই মনে করেন, শীতকালে রোদের তাপমাত্রা কম থাকে, সে কারণেই সানস্ক্রিন ব্যবহারের প্রয়োজন বলে মনে করেন না। তবে শীতকালেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। এ সময় সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থাকে! তাহলে সানস্ক্রিন ব্যবহার করা এড়িয়ে যাবেন কেন? ত্বককে সুরক্ষিত রাখতে হলে ঘর থেকে বেরোনোর ঠিক ১৫ মিনিট আগেই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
হাইড্রেটেড থাকা
শীতকালের সময় অনেকেই পানি খাওয়া কমিয়ে দেন। এই অভ্যাসটি কিন্তু ত্বকের জন্য বেশ ক্ষতিকর। কারণ শীতের সময় শরীরে পানিশূন্যতা থাকলে ত্বক খসখসে ও রুক্ষতা দেখা দেয়। ত্বক ও শরীর সুস্থ রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খেতে হবে।
হ্যান্ড ক্রিমের ব্যবহার
আবার অনেকেই আছেন মুখের ত্বকের যত্ন নিতে গিয়ে হাতের যত্নের কথা ভুলে যান। তবে শীতে মুখের ত্বকের যত্নের পাশাপাশি হাতেরও যত্নের প্রয়োজন। তাই হাতের যত্ন নেওয়ার জন্য নিয়মিত হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করুন। বিশেষ করে জামাকাপড়, থালা-বাসন ধোয়ার পর পরই হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করার পর হ্যান্ড ক্রিম ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
স্কিন কেয়ার প্রোডাক্ট রেঞ্জে পরিবর্তন
ত্বকের যত্নে সারা বছরেই ক্রিম কিংবা স্কিন কেয়ার ব্যবহার করা হয়। কিন্তু শীতকালিন সময়ে তা পরিবর্তনের প্রয়োজন হতে পারে। শীতকালে ত্বক খুব রুক্ষ হয়ে যায়। শীতকালে ত্বকের যত্নে পুষ্টিকর এবং ময়েশ্চারাইজিং পণ্য ব্যবহার করা উচিত, যাতে ত্বকের শুষ্কতা না বাড়ে। শীতে শরীরের ত্বকের জন্য ময়েশ্চারাইজিং শাওয়ার জেল বা বডি বাটার ব্যবহার করতে পারেন।
পায়ের জন্যও দরকার বাড়তি যত্ন
হাতের যত্নের পাশাপাশি পায়েরও যত্ন নিতে হবে। শীতকালে পায়ে মোজা পরা উচিত। এর জন্য প্রথমে আপনার পা ভালোভাবে পরিষ্কার করুন তারপর পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন দিয়ে পায়ের তলায় সুন্দরভাবে ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে অন্তত্য ১বার এক্সফোলিয়েট করুন। অতপর পা ফাটা রোধ করতে নিয়মিত পেট্রোলিয়াম জেলি বা গ্লিসারিন ব্যবহার করুন। আপনার যদি পা ফাটার সমস্যা থাককে তাহলে অনেকটাই কমে যাবে।
শীতকালে ত্বকের যত্ন নিতে ফেইস প্যাক
গরমের তুলনায় শীতকালে ত্বকের আর্দ্রতা অনেকটাই হারিয়ে যায়। শীতে ফেসপ্যাক লাগালে কিছুটা ঝামেলা হতে পারে। তবে সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন গোসলের আগে কিছু সময় দেওয়া যেতে পারে। এছাড়াও ফেস প্যাকগুলিতে এমন উপাদান থাকা উচিত যা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ রাখে এবং আপনার ত্বককে নরম করে। ঠিক তেমনই একটি প্যাক হল মধু ও গোলাপ জলের প্যাক। প্যাকটি তৈরি করতে প্রথমে এক টেবিল চামচ মধু ও এক টেবিল চামচ গোলাপ জল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন। মেশানো হয়ে গেলে মিশ্রণটি মুখে, ঘাড়ে ভালোভাবে লাগান। তারপর ১০ মিনিট পর হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাক ব্যবহারের ফলে ত্বকের অতিরিক্ত শুষ্কতা দূর করতে সাহায্য করে।
সুস্থ থাকার জন্য ত্বকের যত্নের পাশাপাশি স্বাস্থ্যের দিকেও নজর দেওয়া দরকার। শীতের মৌসুমে অনেকেই নিয়মিত গোসল করেন না, এটা অভ্যাসটা কিন্তু ভালো নয়। আবার অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পছন্দ করেন। এ সময় অনেকেই নিজের গায়ে গরম পানি ঢালতে পচ্ছন্দ করেন। এটি করার ফলে ত্বক আরও শুষ্ক ও রুক্ষ যায়।
তাই হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন তাতে ত্বক রুক্ষ হবে না। এতক্ষণ জেনে নিলেন শীতকালে ত্বকের যত্ন নেওয়ার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সম্পর্কে। একটু যত্ন শীতকালে আপনার ত্বককে রাখতে পারে কোমল ও সুস্থ।
সূত্র:- Right News BD
One thought on “শীতকালে ত্বকের যত্ন কিভাবে নেব”
Comments are closed.