দৈনন্দিন জীবন যাপনে আমাদের শরীর ঠিকমতো কাজ করতে হলে সঠিক সময়ে সঠিক খাবার খাওয়া উচিত। বিশেষত ব্যায়ামের আগে কী খাওয়া উচিত, তা জানলে আপনার শরীরের জন্য আরও কার্যকর হতে পারে। এই পোস্টে আমি শেয়ার করব ব্যায়াম করার আগে কী খাওয়া উচিত এবং কেন তা গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও গবেষণার ওপর ভিত্তি করে তৈরি।
কেন ব্যায়ামের আগে খাবার গুরুত্বপূর্ণ?
ব্যায়ামের সময় আমাদের শরীর প্রচুর পরিমাণে শক্তি খরচ করে।
যদিও আমরা পর্যাপ্ত পুষ্টি না নেই, সেক্ষেত্রে দ্রুত ক্লান্তি অনুভব করতে পারি, আমাদের কর্ম দক্ষতা কমে যেতে পারে এবং পেশি সহ হাড় দুর্বল হতে পারে।
আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলি, যখন আমি ব্যায়ামের পূর্বে কিছু খাই না, তখন আমার ব্যায়ামের সময় শক্তি কমে যায় এবং কাজ সম্পন্ন করতে পারি না।
একদিন সকালে খালি পেটে ব্যায়াম শুরু করেছিলাম, কিন্তু ১৫ মিনিটের মধ্যেই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। সেই অভিজ্ঞতা থেকেই আমি শিখেছি, ব্যায়াম করার আগে খাবার খাওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
ব্যায়ামের আগে খাওয়ার সময় ও পুষ্টি গঠন
প্রতিদিন ব্যায়াম করার আগে খাবারের সঠিক সময় এবং পুষ্টি গ্রহণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
সাধারণত, ব্যায়াম এর ১ থেকে ৩ ঘণ্টা আগে খাবার খাওয়া উচিত। তবে সময়ের ব্যবধান নির্ভর করে আপনার শরীরের প্রয়োজন এবং খাবারের ধরণ অনুযায়ী।
খাবারের পুষ্টিগুণে যা থাকা উচিত:
- কার্বোহাইড্রেট: এটি আপনার শরীরের প্রধান শক্তির উৎস। এটি দ্রুত শক্তি যোগায় এবং ক্লান্তি দূর করে।
- প্রোটিন: পেশি গঠনে সাহায্য করে এবং পেশির ক্ষয় প্রতিরোধ করে।
- স্বল্প পরিমাণে ফ্যাট: এটি দীর্ঘস্থায়ী শক্তি সরবরাহ করতে সাহায্য করে। তবে অতিরিক্ত ফ্যাট এড়িয়ে চলুন।
প্রতিদিন ব্যায়ামের পূর্বে যেসব খাবার খাওয়া উচিত
ওটমিল এবং কলা
ওটমিল ধীরে ধীরে শক্তি ছেড়ে দেয়, যা দীর্ঘ সময় ধরে আপনাকে কর্মক্ষম রাখে।
কলাতে প্রাকৃতিক চিনি এবং পটাশিয়াম থাকে, যা পেশির কার্যকারিতা বাড়ায়। যখন সকালে ব্যায়াম করতে যাই, তখন এটি আমার প্রিয় ব্রেকফাস্ট।
ব্রাউন ব্রেড এবং পিনাট বাটার
ব্রাউন ব্রেড কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস। এর সাথে পিনাট বাটার যোগ করলে আপনি প্রোটিন এবং হালকা ফ্যাট পাবেন, যা দীর্ঘ সময় শক্তি সরবরাহ করবে।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলি, এটি খাওয়ার পর আমার ব্যায়ামের সময় একদম শক্তি কমে না।
দই এবং ফল
দই প্রোটিন সমৃদ্ধ এবং সহজেই হজম হয়। এর সাথে ফল যোগ করলে কার্বোহাইড্রেট ও প্রাকৃতিক চিনির মিশ্রণ পাওয়া যায়।
আমি যখন ব্যায়ামের আগে দই খাই, তখন ব্যায়াম করার সময় অনেক হালকা অনুভব করি।
চিকেন ও মিষ্টি আলু
যদি আপনি দুপুর বা সন্ধ্যায় ব্যায়াম করেন, তাহলে চিকেন এবং মিষ্টি আলু হতে পারে একটি আদর্শ খাবার।
এটি প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেটের মিশ্রণ যা আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত শক্তি সহ পুষ্টি দেয়।
স্মুদি
একটি স্মুদি হতে পারে একটি দুর্দান্ত বিকল্প। আপনি যদি তাড়াহুড়ো করেন, তাহলে দই, কলা, স্ট্রবেরি এবং চিয়া সিড মিশিয়ে একটি স্মুদি বানিয়ে নিন।
এটি দ্রুত হজম শক্তি বাড়ায় এবং প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
এই স্মুদিটি খাওয়ার সময় আমি সবসময় অনুভব করি, এটি আমাকে ব্যায়ামের সময় ফোকাস রাখতে সাহায্য করে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমি যখন ব্যায়াম শুরু করি, তখন খাবারের বিষয়ে খুব একটা গুরুত্ব দিতাম না। যার ফলে মাঝেমধ্যে ক্লান্তি অনুভব করতাম।
পরে যখন ব্যায়াম করার আগে উপযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলাম, তখন পারফরম্যান্স এবং সহনশীলতা বেড়ে গেল।
আমি লক্ষ্য করেছি, সঠিক খাবার খেলে ব্যায়ামের প্রতি আগ্রহও বেড়ে যায়।
ব্যায়েমের আগে যেসব খাবার এড়ানো উচিত
ব্যায়ামের পূর্বে ভারী বা তেলযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এটি হজমে সমস্যা তৈরি করতে পারে এবং ব্যায়ামের সময় অস্বস্তি বাড়ায়।
অতিরিক্ত চিনি এড়িয়ে চলা উচিত, কারণ এটি শরীরকে ডিহাইড্রেট করতে পারে।
সঠিক সময়ে সঠিক খাবার খাওয়া আপনার ব্যায়াম কার্যক্রমকে আরও উন্নত করতে পারে। ব্যায়ামের আগে ওটমিল, কলা, দই বা স্মুদি খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং ফলাফল দেখুন।
আমি নিজে এই অভ্যাস করে অনেক উপকার পেয়েছি এবং আশা করি, আপনিও পাবেন। আজই এই টিপসগুলো চেষ্টা করুন এবং আপনার পরবর্তী ওয়ার্কআউট আরও কার্যকর করুন।
“ব্যায়ামের আগে” উপযুক্ত খাবার খাওয়া শুরু করলে আপনি নিজেই পার্থক্য অনুভব করবেন।
সূত্র: Right News BD