বর্তমান সময়ে বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি থেকে বের করবেন যেভাবে সে বিষয়ে জেনে দিব। আগের দিনে আমরা টিভির সামনে বসে খেতাম। কিন্তু বর্তমান সময়ের শিশুরা আমাদের থেকে আরএক ধাপ উপরে।
যেসব কারণে বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি প্রভাব ফেলছে
যেকোন সময় শিশুর হাতে মোবাইল না দিলেও খাওয়ার সময়ে কিন্তু আমার বা আপনার শিশুর হাতে অবশ্যই মোবাইল ফোনটি দিতেই হয়। ফেসবুকের রিলস ভিডিও না দেখে খেতেই চায় না বাচ্চারা। ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী সন্তানরা ফেসবুক কিংবা ইউটিউব-এ মোবাইলে রিলস ভিডিও দেখা নিয়ে একজন মা মন্তব্য করেছেন।
অনেক বাচ্চাদের দেখা যায় তারা খেলাধুলা করার কোনো আগ্রহ নেই। তারা নিয়মিত খেলাধুলা ফেলে রেখে মোবাইল আসক্তি হয়ে পড়ে রয়েছে সারাদিন। এতে করে অনেক মা বাবারা ভাবেন তাদের বাচ্চাদের দুষ্টুমি করে না বলে এই ভালো। আবার অনেকে মা বাবারা ভাবেন তাদের শিশু মোবাইল চালানো পারদর্শী তাহলে সে বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সমবয়সীদের থেকে খুব তাড়াতাড়ি এগিয়ে যাবে।
এ ছাড়াও এমন কিছু অভিভাবকদের ভাবনা তাদের শিশু বাড়িতেই মোবাইল আসক্তি হয়েই অনেক নিরাপদে রয়েছে। তাই সন্তানরা মোবাইল আসক্তি হয়ে স্ক্রিনটাইম মাত্রা ছাড়িয়ে গেলেও মা-বাবা বারণ করেন না। বিশেষ করে এখানেই তারা বড় ভুলটা করে বসেন।
একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মোবাইল আসক্তি হয়ে পড়লে অত্যধিক স্ক্রিণের দিকে তাকিয়ে থাকলে শিশুদের ঘুম ক্রমেই কমে যায়। তারা মোবাইল আসক্তি হওয়ার কারণে যেকোন কিছু ভালোভাবে মনে রাখতে পারছে না আর অল্পতেই রেগে যাচ্ছে। বিশেষ করে শিশুরা আগে যেসব কাজে অনেক আনন্দ উপভোগ করতে সেগুলো কাজে তাদের অনীহা তৈরি হয়ে গেছে। সব ফেলে শিশুরা মোবাইল আসক্তি হয়ে অনেক বেশি আনন্দ পাচ্ছে। আর স্ক্রিন টাইম বেড়ে যাওয়ায় শিশুদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপর দ্রুত প্রভাব ফেলছে।
অপরদিকে নিয়মিত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ শিশুদের সুস্থভাবে বেড়ে ওঠার জন্য অত্যন্ত জরুরি। এটি তাদের শক্তি, নমনীয়তা, হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধির পাশাপাশি সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখতেও সাহায্য করে।
তাই শিশুদের ডিজিটাল ডিভাইসগুলো থেকে দূরে রাখা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব মনে হলেও অভিভাবকদের উচিত শিশুদের টেকনোলজির বাইরের জগতটা সম্পর্কে জানানো। তারা যাতে দৌড় – ঝাপ, হাঁটা – চলার পর্যাপ্ত সুযোগ পায় তা নিশ্চিত করা। শিশুদের মাঝে তাই মোবাইল আসক্তি কমিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। মোবাইলের মত যেকোন ডিজিটাল ডিভাইসগুলোর পরিবর্তে বাচ্চারা আনন্দ পায় এমন কিছু খেলা বা কাজ সম্পর্কে বোঝাতে হবে।
যে ৫ উপায় শিশুদের মোবাইল আসক্তি কমাতে সাহায্য করবে
আপনি কি নিজেই মোবাইল আসক্ত?
বড়দের যেকোনো আচরণ দেখলে শিশুরাও তাদের ব্যবহার রপ্ত করার চেষ্টা করে। আপনার শিশু যদি নিয়মিত দেখে আপনি নিজেই সারাক্ষণ মোবাইল আসক্তি হয়ে পড়ে আছেন কিংবা কি কাজ করছেন তখন তারাও আপনার এগুলো দেখে সরে যেতে চাইবে না। এমনকি নিষেধ করলেও শুনতে চাইবে না। তাদের মোবাইল ফোন বা যেকোন কাজের ক্ষেত্রে বড়দের থেকে আলাদা করার জন্য প্রথম ধাপ হলো আপনার মোবাইল ফোনের স্ক্রিন টাইম কমিয়ে ফেলা।
মোবাইলের স্ক্রিনে যতটা সময় কাটানো উচিত তার চেয়ে বেশি কাটাচ্ছেন, তাহলে আপনার সন্তানদের দেখতে দিন আপনি নিজে কীভাবে মোবাইল আসক্তি মোকাবিলা করেছেন। আপনার নিজের জীবনে ভারসাম্য খুঁজে পেতে আপনি যে পরিবর্তনগুলো করছেন তা তাদের ব্যাখ্যা করুন।
শিশুর প্রতি সবসময় পজিটিভ থাকুন
আমরা অনেকসময় শিশুদের মোবাইল আসক্তি হওয়ার প্রলোভন দেখাই। কোনো ভালো কাজের উপদেশ না দিয়ে তাদের হাতে মোবাইল তুলে দেই। পরে আবার তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোনটি কেড়ে নেয়া হয়। অভিভাবকের এমন আচরণ শিশুদের মনকে ভিন্নভাবে প্রভাবিত করে। তারা ভাবতে শুরু করে যে, অন্য যে কোনো খেলার চেয়ে ডিজিটাল ডিভাইস বেশি আনন্দের তাই বড়রা খুশি হলে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে দিচ্ছে। কিন্তু আপনার উচিত এ বিষয়টি নিয়ে একটিভিটি তৈরি করা। শিশুদের মোবাইল আসক্তি থেকে উদ্বুদ্ধ করুন।
একটি শিডিউল তৈরি করে ফেলুন
শিশুরা যখন হঠাৎ করে নিষেধাজ্ঞার সম্মুখীন হয়, তখন তারা পিতা মাতার প্রতি অবাধ্য আচরণ করে। তাই তাদের নিষেধ না করে মোবাইল আসক্তি কমিয়ে আনা যায় সে ব্যাপারে নজর দিন। সব সময় তাদের মোবাইল আসক্তি পরিণত না করে ভালো কাজের বা পড়াশোনার একটি রুটিন তৈরি করে দিতে পারেন। সময় পেলে অবশ্যই তাদের জিজ্ঞাসা করুন, তারা মোবাইল ফোন হতে পারে বা অন্যান্য ডিভাইস দিয়ে কী করতে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
জেনে নিন আপনার বাচ্চাদের নিজস্ব মতামত। দিনের কোন সময়ে তাদের মোবাইল আসক্তি হতে পারে সে বিষয়ে আপনার বিবেচনা করা উচিত। কতক্ষণ তারা কখন মোবাইল আসক্তি হতে পারে তা আপনি নির্ধারণ করুন কিন্তু কখন ব্যবহার করবে তা শিশুদের ওপরই ছেড়ে দিন। কিন্তু খাবার খাওয়ার সময় তাদের কোন ভাবেই মোবাইল ব্যবহার করতে দেবেন না।
বাচ্চাদের যেটা ভালোলাগে সেই বিষয়ে উৎসাহিত করুন
এতক্ষণ আপনারা মোবাইল ফোনের অপব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারলেন। এবার জেনে নেয়া যাক আপনার শিশুকে নিজের পছন্দের কাজটি খুঁজে পেতে সাহায্য করতে হবে। তাদের পচ্ছন্দ হয় এমন কিছু বিষয়ে স্বাধীনতা দিন। তাদের শারীরিক কার্যকলাপে বেশি আনন্দ উপভোগ্য হয় তা করেন। তাই শিশুদের নিজের পছন্দের এক্টিভিটি খুঁজে পেতে দিন। বাচ্চাদের পছন্দের ক্রিয়াকলাপে নিয়োজিত করতে উৎসাহিত করুন, হোক সাইকেল চালানো, স্কেটবোর্ডিং, সাঁতার বা অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে যেকোন খেলা। ফলে ব্যায়ামও হবে, একঘেয়েমি হয়ে মোবাইল আসক্তি নিমেষেই কাটবে।
পরিশেষে তাদের সাথে নিজেও ফান একটিভিতে যুক্ত হোন
বাচ্চাদের মোবাইল আসক্তি থেকে বাঁচাতে আপনার কাজের পাশাপাশি নিজেও যুক্ত হোন শিশুর সঙ্গে মজার সব খেলায়। এতে করে শিশুদের সাথে আপনার সম্পর্কও অনেক ভালো হবে।
সূত্র:- Right News BD