শীতকালে কিংবা মৌসুম পরিবর্তনের সময় বাচ্চাদের কাশি বাড়তে দেখা যায়। এ ধরণের সমস্য তাদের অনেক ক্ষেত্রে সুস্থতার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে কাশি, শ্বাস-প্রশ্বাসের সমস্যা তৈরি করে না, বরং এটি তাদের খাওয়া-দাওয়া এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। তবে কিছু ঘরোয়া উপায় অনুসরণ করলে বাচ্চাদের কাশি কমানোর কিছু কার্যকরী ঘরোয়া উপায়ে খুঁজে পাওয়া সম্ভব।
ঘরোয়া পদ্ধতিতে বাচ্চাদের কাশি কমানোর প্রাকৃতিক উপায়
১. মধু
মধু এক প্রকার প্রাকৃতিক এন্টিব্যাকটেরিয়াল এবং এন্টিভাইরাল উপাদান।
এটি গলার ব্যথা ও কাশির উপশমে সাহায্য করে। শিশুদের কাশি কমানোর জন্য মধু একটি কার্যকরী উপায় হতে পারে। মধুতে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট্যও রয়েছে, যা গলার প্রদাহ কমায় এবং কাশি উপশমে সহায়ক।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
বাচ্চাদের জন্য ১ চামচ মধু প্রতিদিন এক বা দুই বার দেওয়া যেতে পারে। মধুর সাথে একটি গরম পানি বা আদা চা মিশিয়ে দেয়া গেলে আরও ভালো ফল পাওয়া যাবে।
২. আদা এবং হলুদ
আদা ও হলুদ দুটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি উপাদান। আদার মধ্যে রয়েছে শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যা কাশি কমাতে সাহায্য করে।
এছাড়া হলুদে থাকা কুরকিউমিন উপাদান শ্বাসযন্ত্রের স্বাস্থ্য ভাল রাখে এবং কাশি নিরাময়ে কার্যকর।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
একটি কাপ গরম পানিতে আধা চা চামচ হলুদ ও আদা কুচি মিশিয়ে দিন এবং বাচ্চাকে দিনে এক বা দুটি বার পান করতে দিন।
৩. গরম স্যুপ বা মাংসের ঝোল
গরম স্যুপ বা মাংসের ঝোল কাশির সময় গলা আরাম দেয় এবং শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখে। এটি বাচ্চাদের শরীরের আর্দ্রতা বজায় রাখতেও সাহায্য করে, যা কাশি কমাতে সাহায্য করে।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
প্রাকৃতিক মাংসের ঝোল বা চিকেন স্যুপ প্রতিদিন শিশুদের খাওয়াতে পারেন, যা তাদের শক্তি বাড়াবে এবং কাশি উপশম করবে।
৪. তেঁতুল
তেঁতুল একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার শ্রেষ্ট উপাদান। তেঁতুলের মধ্যে থাকা ভিটামিন সি কাশি এবং সর্দি-কাশির সাথে যুক্ত সমস্যা সমাধানে সহায়ক।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
তেঁতুলের রস বা তেঁতুলের মিশ্রণ বাচ্চাকে ১ চামচ পরিমাণ প্রতিদিন খাওয়াতে পারেন। এটি গলা পরিষ্কার রাখতে এবং কাশি কমাতে সাহায্য করবে।
৫. বাষ্প
গরম পানি বা বাষ্পের সাহায্যে শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখা যায় এবং কাশি কমানো যায়। বাচ্চাদের কাশি হলে বাষ্প দেওয়া খুবই কার্যকর।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
গরম পানির বাষ্পে শিশুকে ৫-১০ মিনিট রাখুন, বা একটি বাটিতে গরম পানি নিয়ে তা থেকে বাষ্প শ্বাসে নেয়ার জন্য আপনার বাচ্চাকে সাহায্য করুন।
৬. লেবুর রস
লেবু ভিটামিন সি-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এবং এটি কাশি কমাতে সহায়ক। লেবুর রস শরীর থেকে টক্সিন বের করতে সাহায্য করে এবং গলার প্রদাহ কমায়।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
একটি গ্লাস গরম পানিতে আধা চামচ লেবুর রস এবং মধু মিশিয়ে শিশুকে দিন। এটি কাশি ও সর্দি কমাতে সহায়ক হবে।
৭. পুদিনা পাতা
পুদিনা পাতা শ্বাসকষ্ট ও কাশির উপশমে অত্যন্ত কার্যকর। এর মধ্যে মেনথল থাকে, যা শ্বাসনালীর প্রদাহ কমাতে সহায়ক।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
পুদিনা পাতা থেকে রস বের করে তা বাচ্চাকে এক চামচ পরিমাণ দিনে দুই বার দিতে পারেন। এছাড়া পুদিনা পাতা গরম পানিতে ফেলে বাষ্প নেয়ার জন্যও ব্যবহার করা যেতে পারে।
৮. মৌরি
মৌরি কাশির জন্য একটি পুরনো এবং কার্যকরী ঘরোয়া উপায়। মৌরির মধ্যে রয়েছে শ্বাসতন্ত্রের জন্য উপকারী গুণ। এটি গলা এবং শ্বাসনালীকে আরাম দেয়।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
এক চামচ মৌরি এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে বাচ্চাকে দিন। এটি কাশি কমাতে সাহায্য করবে।
৯. এলাচ
এলাচের মধ্যে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান, যা কাশি কমাতে কার্যকর।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
এলাচ মিহি গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে বাচ্চাকে খাওয়ালে এটি কাশি কমাতে সাহায্য করবে।
১০. সেদ্ধ মরিচ এবং মধু
মরিচের মধ্যে রয়েছে ক্যাপসাইসিন যা শ্বাসনালী পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে এবং কাশির সমস্যা কমায়।
কিভাবে ব্যবহার করবেন:
একটি সেদ্ধ মরিচ মধুর সাথে মিশিয়ে বাচ্চাকে দিতে পারেন। তবে, খুব ছোট বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এটি খুব সাবধানে ব্যবহার করুন।
কাশি দূর করার অতিরিক্ত সতর্কতা:
- কাশি যদি বেশি দিন ধরে চলতে থাকে, অথবা যদি বাচ্চার শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়, তাহলে পেডিয়াট্রিশিয়ানের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- ১ বছরের নিচে বাচ্চাদের জন্য মধু এবং অন্যান্য উপাদান ব্যবহার করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
এই ঘরোয়া উপায়গুলো বাচ্চাদের কাশি দূর করার জন্য খুবই কার্যকরী। যেকোনো প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহারের আগে সতর্কতা অবলম্বন করা জরুরি। এসব ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমে আপনি সহজেই আপনার বাচ্চার কাশি কমাতে সহায়ক হতে পারেন।
সূত্র: Right News BD