পেট ব্যথা এমন একটি অস্বস্তিকর অবস্থা যা হজমজনিত সমস্যা, গ্যাস, বদহজম, অ্যাসিডিটির মতো বিভিন্ন কারণে হতে পারে। তাছাড়া অনেক সময় ওষুধের চেয়ে প্রাকৃতিক উপাদানগুলো পেট ব্যথা কমানোর ঔষধ হিসেবে দ্রুত কার্যকর ও নিরাপদ হিসেবে কাজ করতে পারে।
এখানে পেট ব্যথা কমাতে সহায়ক ১০টি প্রাকৃতিক ঔষধ এবং কার্যকারিতা সম্পর্কে জানানো হলো।
১০টি পেট ব্যথা কমানোর ঔষধ নাম ও ঘরোয়া প্রতিকার
১. আদা
কার্যকারিতা:
আদা পেটের প্রদাহ কমাতে সহায়ক এবং পেটের মাংসপেশীকে শিথিল করে। এটি বদহজম ও গ্যাসের সমস্যায় ভালো কাজ করে। আদা চা বা কাঁচা আদার টুকরো পানিতে সেদ্ধ করে খেলে পেটের আরাম পাওয়া যায়।
২. পুদিনা পাতা
কার্যকারিতা:
পুদিনা পাতা পেটের মাংসপেশী শিথিল করে এবং হজমে সহায়ক। এটি বমি বমি ভাব, গ্যাস, ও বুক জ্বালা কমায়। পুদিনা চা বা তাজা পুদিনা পাতা চিবিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩. গোল মরিচ
কার্যকারিতা:
গোল মরিচে উপস্থিত পিপেরিন নামক যৌগ হজমশক্তি বাড়ায় এবং গ্যাসের কারণে সৃষ্ট পেটের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক চিমটি গোল মরিচের গুঁড়া খাবারের সাথে মিশিয়ে খেলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৪. অ্যাপেল সিডার ভিনেগার
কার্যকারিতা:
অ্যাপেল সিডার ভিনেগার হজমে সহায়ক এবং অ্যাসিডিটির কারণে সৃষ্ট পেটের ব্যথা উপশম করে। এক চামচ অ্যাপেল সিডার ভিনেগার এক গ্লাস পানির সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার হয়।
৫. লেবু
কার্যকারিতা:
লেবুর রস পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে এবং হজমে সহায়তা করে। গরম পানির সাথে লেবুর রস মিশিয়ে খেলে গ্যাসের সমস্যা ও পেটের ব্যথা দূর হয়।
৬. ইসপাঘুলের ভূষি
কার্যকারিতা:
ইসপাঘুলের ভূষি প্রাকৃতিক ফাইবার হিসেবে কাজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক। এটি অন্ত্রের চলাচল নিয়মিত করতে সাহায্য করে যা পেটের অস্বস্তি কমায়।
৭. হলুদ
কার্যকারিতা:
হলুদে থাকা কারকুমিন প্রাকৃতিক প্রদাহবিরোধী উপাদান যা পেটের প্রদাহ কমাতে এবং গ্যাস ও বদহজমের কারণে সৃষ্ট পেটের ব্যথা দূর করতে কার্যকর।
৮. ত্রিফলা
কার্যকারিতা:
ত্রিফলা একটি প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা অন্ত্রের সুরক্ষা দেয়। এটি অন্ত্রের চলাচল উন্নত করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে, ফলে পেটের ব্যথা কমে যায়।
৯. মধু
কার্যকারিতা:
মধু হজমে সহায়ক এবং পাকস্থলীর প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এক চামচ মধু গরম পানির সাথে মিশিয়ে খেলে বদহজম ও গ্যাসের সমস্যা কমে।
১০. ক্যামোমাইল চা
কার্যকারিতা:
ক্যামোমাইল পেটের মাংসপেশী শিথিল করতে সহায়ক এবং পাকস্থলীর প্রদাহ কমায়। এটি বমি ভাব ও অ্যাসিডিটি থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।
সঠিক নির্দেশনা অনুযায়ী কোন প্রকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়ায় এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলো পেটের ব্যথা কমাতে সহায়ক হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। এদিকে অনেকে আবার এগুলো প্রাকৃতিক উপাদান ছাড়া সরাসরি ঔষধ সেবন করেন। যেমন-
প্যান্টোপ্রাজল (Pantoprazole)
প্যান্টোপ্রাজল অ্যাসিডিটির সমস্যার কারণে সৃষ্ট পেট ব্যথা উপশমে সহায়ক।
রেনিটিডিন (Ranitidine)
রেনিটিডিন হ’ল এক ধরনের H2 ব্লকার যা পাকস্থলীর অ্যাসিড উৎপাদন কমায়।
ওমেপ্রাজল (Omeprazole)
ওমেপ্রাজল একটি প্রোটন পাম্প ইনহিবিটার যা পাকস্থলীতে অ্যাসিডের মাত্রা কমায়।
সিমেথিকোন (Simethicone)
সিমেথিকোন মূলত গ্যাসের কারণে সৃষ্ট পেটের অস্বস্তি এবং ফুলে যাওয়া কমাতে ব্যবহৃত হয়।
ডিসাইক্লোমিন (Dicyclomine)
ডিসাইক্লোমিন মাংসপেশীর সংকোচন কমিয়ে দেয় এবং এটি অন্ত্রের গতি নিয়ন্ত্রণ করে।
বুসকোপেন (Buscopan)
বুসকোপেন অন্ত্রের মাংসপেশীর ব্যথা কমাতে সহায়ক।
পারাসিটামল (Paracetamol)
পেটের সাধারণ ব্যথা কমাতে পারাসিটামল উপকারী হতে পারে।
মেলাথিওন (Mehthione)
প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে মেলাথিওন অন্ত্রের সুরক্ষায় সাহায্য করে।
এসব উপায়গুলো ব্যবহারের পর যদি পেটের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা কোনো ওষুধ কার্যকর না হয়, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: Right News BD