তুরস্কের কর্মকর্তারা বলছেন, ৬ ফেব্রুয়ারি (সোমবার) তুরস্কের ভূমিকম্পে ভেঙ্গে পড়া ভবন দুর্নীতিতে ১১৩টি গ্রেপ্তারি পরোয়ান জারি করা হয়েছে।
তুর্কি পুলিশ নির্মাণ ঠিকাদারসহ ১২ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করেছে। এদিকে বিভিন্ন এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা ব্যাহত হয়েছে দক্ষিণ তুরস্কে বিক্ষোভের কারণে ।
কর্তৃপক্ষ বলছে, তুরস্ক ও সিরিয়ায় এই ভূমিকম্পে ২৮ হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
তুরস্কে আরও কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। তবে এই দুর্যোগের সার্বিক দায় অন্যের ঘাড়ে চাপানোর জন্য কর্তৃপক্ষ এমনটা করছে বলে মনে করছেন অনেকে।
কয়েক বছর ধরে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক বার্তা দিয়ে আসছেন যে তুরস্কে নির্মিত নতুন ভবনগুলি ব্যাপক দুর্নীতি এবং সরকারি নীতির কারণে নিরাপদ নয়।
সরকারি এই নীতিমালা অনুযায়ী নির্মাণের বিধি অত্রিক্রম করে কাজ করা ঠিকাদারদের ক্ষমা করা হয়। এর কারণ ছিল তুরস্কের নির্মাণ খাতকে ভালো ব্যবসা করা। সেটি করা হয়েছিল তুরস্কের ভূমিকম্পে ধসে পড়া অঞ্চলেও।
এমতবস্থায় তুরস্কে হওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে হাজার হাজার ভবন ধসে পড়ে। এরপরই প্রশ্ন ওঠে, কর্তৃপক্ষের অমনোযোগীর কারণে প্রাকৃতিক এই শক্তিশালী দুর্যোগে এতটা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কি না।
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রায় বিশ বছর ধরে ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু তুরস্কে বর্তমান একটি নির্বাচন আসছে, এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগান আগুনের মুখে পড়েছেন।
তার সরকারের যোগ্যতাসম্পন্ন স্বীকার করেছেন মিঃ এরদোগান। তবে দুর্যোগ কবলিত এলাকা পরিদর্শনকালে তিনি দুর্যোগের জন্য ভাগ্যকে দায়ী করেন। “এ ধরনের পরিনাম সবসময় ঘটেছে, এটাই নিয়তির অংশ বিশেষ”, তিনি বলেন।
এদিকে তুরস্কের অবস্থা আরও পতন হয়েছে ভূমিকম্পের ৬ছয় দিন পরে । দুই অজানা গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষের পর শনিবার হাতায় প্রদেশে জার্মান আর অস্ট্রিয়ান উদ্ধারকর্মীদের স্থগিত করা হয়েছে।
অস্ট্রিয়ান উদ্ধারকর্মীদের লেফটেন্যান্ট কর্নেল পিয়েরে কুগেলওয়েইস বলেন, “সেখানে বিপজ্জনক পরিস্থিতিতে কারো জীবন বাঁচানোর সম্ভাবনা খুবই কম।”
তুর্কি সেনাবাহিনীর ছত্রছায়ায় পুনরায় উদ্ধারের কাজ শুরু হয়ে গেছে। দক্ষিণ তুরস্ক আর উত্তর সিরিয়া জুড়ে লক্ষাধিক মানুষ এখনও গৃহহীন। প্রত্যেক রাতেই এখন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমেই যাচ্ছে।
জাতিসংঘের মতে, দুর্যোগ-কবলিত এলাকার ৮ লাখের অনেক মানুষ যথেষ্ট পরিমাণে খাবার পাচ্ছে না। বিপরীত দিকে সেখানে কর্মরত জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার কর্মকর্তারা সচেতন করছেন যে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা বর্তমান সংখ্যার থেকে আরো বেড়ে যেতে পারে।
সিরিয়ায় মৃতের সংখ্যা বর্তমান দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৫শত। কিন্তু শুক্রবারের পর নতুন করে মৃত্যুর সংখ্যা জানা যায়নি। নতুন কাউকে জীবিত উদ্ধারের আশা ক্ষীণ হয়ে আসছে। তবে এরই ভিতর বেশ কিছু অবিশ্বাস্য উদ্ধার অভিযান জয়ুক্ত হয়েছে।
শনিবার গাজিয়ানটেপ প্রদেশের একটি পরিবারের ৫ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। অপরপক্ষে, হাতাই প্রদেশে ১৩২ ঘণ্টা ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকে থাকার পর উদ্ধার করা হয়েছে ৭ বছরের একটি কিশোরীকে।
জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থার প্রধান এটি ভূমিকম্পকে এই অঞ্চলে গত ১০০ বছরের ভিতর সবচেয়ে ভয়াবহ ভূমিকম্প বলে ব্যাখা করেছেন। শনিবার তিনি তুরস্কের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এলাকা অনুসন্ধান করেন।
জাতিসংঘের কর্মকর্তা মার্টিন গ্রিফিথস বিবিসির লিজ ডুসেটকে বলেছেন, “আমি মনে করি এটি আমার দেখা সবচেয়ে খারাপ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, এবং আমরা যে ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি তা অসাধারণ।”
মিঃ গ্রিফিথস দুর্যগ মোকাবেলায় আঞ্চলিক রাজনীতি সাময়িকভাবে স্থগিত করার দাবী জানিয়েছেন। মনে হচ্ছে তার ডাকে কিছুটা হলেও সাড়া পাচ্ছে। তুরস্ক আর আর্মেনিয়ার ভিতর সীমান্ত ৩৫ বছরে পর প্রথমবারের মতো খোলা হয়েছে, সীমান্ত বরাবর সাহায্য পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
সূত্র:- Right News BD