জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন

জন্ডিস একটি বেশ পরিচিত শব্দ। শুধু পরিচিতই নয়, মানুষের মধ্যে জন্ডিস এর লক্ষণ নিয়ে অনেকেরই বিভিন্ন ভুল ধারণাও রয়েছে।

তবে অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়, জন্ডিসের সমস্যায় অনেকেই আছেন যারা ডাক্তারের সঠিক পরামর্শ গ্রহণ না করেই শুধু শুধুই কবিরাজের দ্বারস্থ হয়ে পড়েন। সে কারণেই রোগী সুস্থ্য না হয়ে বরং আরো বেশি সমস্যায় পড়ে যান।

অথচ ঠিক সময়ে যদি যথাযথ চিকিৎসা গ্রহণ করেন তাহলে, জন্ডিস আক্রান্ত রোগী অল্পতেই বেঁচে যেতে পারে বড় কোন ক্ষতির হাত থেকে।

আজকের পোস্টে জেনে দিবো জন্ডিসের লক্ষণ, কারণ ও উপসর্গ দেখা দিলে কিভাবে প্রতিকার করবেন সেই সম্পর্কে।

প্রথমেই জেনে দেই, জন্ডিস কোন রোগ নয়, এটি মূলত রোগের বহিঃপ্রকাশ। জন্ডিস রোগ নয় বলে কোন ভাবেই অবহেলা করা যাবে না।

জন্ডিস হলে অবহেলা করলে অনেক রোগীকে ক্যান্সার বা লিবার সিরোসিসের মত কঠিক রোগে ভুগতে হয়।

জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন

শরীরে জন্ডিস এর লক্ষণ দেখা দিলে বুঝবেন যেভাবে

আমরা সবাই জানি, জন্ডিস হলে রোগীর প্রস্রাব, শরীরের চামড়া ও চোখ হলুদ বর্ণের হয়ে যায়। আসলে জন্ডিস হওয়ার কারণ কি? জন্ডিস হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে শরীরের রক্তে বিলিরুবিন নামক এক হলুদ রঙ্গের উপাদান এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়া।

রক্তের লোহিতকণিকা থেকে উৎপন্ন হওয়া এই বিলিরুবিনের স্বাবাবিক মাত্র হল ১.০-১.৫ মিলিগ্রাম।

বিলিরুবিন ২ মিলিগ্রাম এর একটু বেশি হলে চামড়ায় হলদে ভাব দেখা দেয়।

জন্ডিসের কারণ

জন্ডিসের কারণ হিসেবে মূলত ৩ ধরণের সমস্যা শনাক্ত করা হয় যেমন-

১। হেপাটোসেলুলার

ভাইরাল হেপাটাইটিসের সংক্রমণ দেখা দিলে সেটিকে জন্ডিস হিসেবে ধরা হয়। তাছাড়া বেশির ভাগ মানুষই হেপাটাইটিস এ, বি, সি এবং ই ভাইরাসের সংক্রমণের ফলেই জন্ডিস এর সমস্যায় ভোগেন।

এর মধ্যে হচ্ছে এ এবং ই ভাইরাস পানির মাধ্যমে ছড়ায় এবং বি, সি ও ডি রক্তের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

২। অবস্ট্রাকশন

লিভার থেকে বিলিরুবিন বের হয়ে নিস্কাশন পর্যন্ত প্রক্রিয়ায় পিত্তনালী, পিত্তথলি, অগ্ন্যাশয় ও গল ব্লাডারের সাথে জড়িত। আর সে জন্যই এসব অংশে পাথর বা টিউমার জন্ডিস এর জন্য প্রধান কারণ হতে পারে।

তবে এসব পাথর বা টিউমার লিভার থেকে বিলিরুবিন বের হওয়ার পথে অনেকটাই বাধার সৃষ্টি করে বলে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা অনেকটাই বেড়ে যায়।

Space are available for Ads
Space are available for Ads

৩। হেমোলাইটিক এনিমিয়া

রক্তকণিকা অস্বাভাবিকভাবে ভেঙ্গে গেলে বা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে জন্ডিস এর সমস্যা হতে পারে।

বিশেষ করে এ ধরণের জন্ডিস এর ক্ষেত্রে চোখের সাদা অংশ হলুদ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি চোখের পাতার ভেতরের পুরো অংশই সাদা হয়ে যেতে পারে।

যেসব রোগে শরীরের রক্তকণিকা ভেঙ্গে যাওয়ার প্রবণতা সৃষ্টি হয়, সেসব রোগেই মূলত এ ধরণের জন্ডিস দেখা দিতে পারে। যেমন হচ্ছে- থ্যালাসেমিয়া

জন্ডিস হলে করণীয় কি

যেহেতু আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষই ভাইরাল হেপাটাইটিস সংক্রমণ এর কারণেই জন্ডিসের সমস্যায় ভুগছে। সেহেতু একটু সাবধানতা হলেই জন্ডিস থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রধান উপায় হতে পারে। যেমন-

পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা

জীবাণুমুক্ত খাবার খাওয়া

পানি পানের মাধ্যমে পানিবাহিত হেপাটাইটিসের সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা।

তাছাড়া, সূচ ও রক্ত সংস্ক্রান্ত স্বাস্থ্যবিধি, যেমন- ১টি সুচ বারবার ব্যবহার না করা।

রক্ত দেওয়ার আগে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করে সঠিক নিয়মগুলো মেনে চলা।

হেপাটাইটিসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে অবশ্যই সময়মত হেপাটাইটিস এ এবং বি এর প্রতিষেধক নেওয়া।

বিশেষ করে যেসব বেসরকারী স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রগুলো রয়েছে এগুলিতে এই টিকার মূল্য ৭০০ টাকা থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে হয়।

যেহেতু জন্ডিস কোন রোগ নয়, তাই জন্ডিস এর কোন নিদিষ্ট ঔষধও নেই।

সাধারণত ৭ দিন থেকে ২৮ দিনের মধ্যে রক্তে বিলিরুবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়ে গেলে জন্ডিস এমতেই সেরে গেছে বলে ধরা হয়। তবে এক্ষেত্রে কি কারণে জন্ডিস কি কারণে দেখা দেয় সেটিও নির্ণয় করাও খুবই জরুরী।

জন্ডিস এর উপসর্গ দেখা দিলে কোনভাবেই দেরি না করে চিকিৎসার জন্য একজন ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ।

এই উপসর্গটি দেখা দিলে সেই সময়ের মধ্যে রোগীকে ব্যথার বা ঘুম এর ঔষধ না খাওয়াই ভালো

Space are available for Ads
Space are available for Ads

জন্ডিস হলে কি খেতে হয়

জন্ডিস দেখা দিলে প্রচুর পরিমাণের শর্করাজাতীয় ও ভিটামিন-সি যুক্ত খাবার রোগীর লিভারের জন্য বেশ উপকারি হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া এ সময় গ্লুকোজ, আখের রস এবং আনারস ইত্যাদির মত খাবার খাওয়া যেতে পারে। বিশেষ করে এর পাশাপাশি রোগী বিশ্রাম নিচ্ছে কি না তা সঠিকভাবে নিশ্চিত করতে হবে।

পরিশেষে:

মনে রাখবেন, জন্ডিস এর লক্ষণ দেখা দিলে অন্ধ বিশ্বাস নয়, সচেতনতাই আনতে পারে আপনার শারীরিক সুস্থ্যতা।

সূত্র:- Right News BD

One thought on “জন্ডিস এর লক্ষণ ও প্রতিকার সম্পর্কে জেনে নিন

Comments are closed.

en_USEnglish