প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা কাটিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রে নামছেন পর্যটকেরা

প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বিপৎসংকেত থাকার কারণে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে গত শনিবার ও রবিবার দুই দিন গোসলের নামতে পারেননি পর্যটকেরা। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগর প্রচণ্ড উত্তাল ছিল। ফলে  জেলা প্রশাসন শনিবার বিকাল থেকে সমুদ্রে থাকা পর্যটকদের চলাফেরা বন্ধ করে। বর্তমানে ঘূর্ণিঝড় মোখা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় আজ সোমবার দুপুর ১টা থেকে পর্যটকেরা সমুদ্রের পানিতে গোসলের জন্য নামছেন।

প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা কাটিয়ে কক্সবাজার সমুদ্রে নামছেন পর্যটকেরা

আজ দুপুরে ১টার সময় সুগন্ধা সৈকতের পয়েন্টে দেখা যায়, কয়েক শ পর্যটক সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসল করছেন। সমুদ্র এখনও কিছুটা উত্তাল রয়েছে। বিপদ সংকেতের জন্য উড়ানো হচ্ছে লাল নিশানা। অনেক পর্যটক বালুচরে দাঁড়িয়ে সমুদ্রের উত্তাল উপভোগ করছেন।

সেখানে পর্যটকদের বালুচরে বসার জন্য চেয়ার-ছাতার ও কিটকট এর ব্যবস্থা রয়েছে। সমূদ্রের পানিতে নামানো হচ্ছে ঘোড়া ও বিচবাইক। ঘোড়ার পিঠে চড়ে পর্যটকেরা সমূদ্রে সৈকতের পানিতে এদিক-ওদিক ঘোরাফেরা করেন।

কক্সবাজার সমুদ্রের পানিতে নামা পর্যটকদের দেখাশোনার জন্য বালুচরে তিনটি চৌকি বসিয়েছেন সি সেফ লাইফগার্ড প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা। সেই প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মীরা পানিতে নেমে পর্যটকদের সতর্ক করছেন।

এদিকে সুগন্ধা বিচের দক্ষিণ পার্শ্বের কলাতলীর উত্তর পাশে সিগাল, লাবণী পয়েন্টেও এক থেকে দেড় হাজার পর্যটকের উপস্থিতি দেখা গেছে। এদের মধ্যে কিছুসংখ্যক পর্যটক সমূদ্রের পানিতে নেমেছেন। এছাড়াও বলুচরের আশপাশে লাল নিশানা উড়তে দেখে অনেক পর্যটক সমুদ্রে নামতে ভয় করছেন। লাবণী পয়েন্টের পানিতে কয়েকটি গুপ্ত খাল রয়েছে। গত এপ্রিল মাসে সেই গুপ্ত খালে আটকা পড়ে দুই পর্যটক প্রাণ হারিয়েছে।

ঢাকার রমনা এলাকার ব্যবসায়ী ‍মুনতাসির কলিম বলেন, গত ১৩ মে ( শনিবার) রাতে ঢাকার বাসে কক্সবাজারে পৌঁছান তিনি। কক্সবাজার পৌঁছার পর রোববার সকালে সমূদ্র সৈকতে নামতে গিয়ে বাধার সম্মুখীন হন তিনি। তখন সমূদ্র সৈকতে ১০ নম্বর মহাবিপৎসংকেত জারি করা হয়েছিল। তিনি কিছুক্ষণ সময় সাগরের উত্তাল অবস্থা দেখে পুণরায় হোটেলে ফিরে যান। আজ দুপুরে সমূদ্র সৈকতে নেমে দেখেন, সাগর এখনও উত্তাল। বালুচরে লাল নিশানা উড়ানো হচ্ছে।  তিনি সাগর উত্তাল দেখে জীবনে ঝুঁকি না নিয়ে সমূদ্রে গোসল করতে নামেননি।

সি সেফ লাইফ গার্ডের সুপারভাইজার সিফাত সাইফুল্লাহ আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন, গত সোমবার সকাল ৮টা থেকে সমূদ্র সৈকতে ভাটা শুরু হয়ে বেলা তিনটা পর্যন্ত চলতে থাকে। কিছুক্ষণ পর জোয়ার শুরু হয়। সমূদ্রে ভাটার সময় স্রোতের টান খুব বেশি থাকে। ভাটার সময় সমূদ্রে গোসলে নামলে বিপদে পড়ার আশঙ্কা থাকে। এছাড়াও প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সাগরও কিছুটা হলেও বিক্ষুব্ধ অবস্থায় রয়েছে। সে কারণে কক্সবাজারে পর্যটকদের সমুদ্রের নামতে নিষেধ করা হচ্ছে। গোসলে নামতে নিষেধ করার জন্য বালুচারের সৈকতে একাধিক লাল নিশানা উড়ানো হচ্ছে। কিন্তু অনেক পর্যটক তাদের নিষেধাজ্ঞা মানছেন না। এমতবস্থায়  অনেক পর্যটক উত্তাল সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়ে গোসল সারছেন। এছাড়াও বিকাল ৩টার পর থেকে সমূদ্র সৈকতে পর্যটকের সমাগম হচ্ছে। কলাতলী থেকে লাবণী পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার পর্যন্ত ৭ হাজার জনসাধারণের সমাগম ঘটেছে।

জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুম বিল্লাহ বলেন, শনিবার ও রবিবার দুই দিন বন্ধ থাকার কারণে আজ থেকে পর্যটকেরা সমুদ্র সৈকতে গোসলে নামার সুযোগ পাচ্ছেন। তবে সাগর উত্তাল থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গোসলে নামতে পর্যটকদের নিষেধ করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে পর্যটকদের সতর্কতামূলক প্রচার চালানো হচ্ছে।

সেখানে হোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম নেওয়াজ বলেন, শহরের ৫০০ হোটেলের দৈনিক ধারণক্ষমতা ১ লাখ ৮৭ হাজার। কিন্তু বর্তমানে অর্ধশতাধিক হোটেলে সর্বমোট ৮ হাজারের মতো পর্যটক রয়েছেন। উত্তাল সমুদ্র সৈকত দেখতে অনেক পর্যটকেরা উৎসাহী হলেও তাদের নিরাপত্তার জন্য গত শনিবার ও রবিবার এ দুই দিন কাউকে সমূদ্র সৈকতে গোসলে নামতে দেওয়া হয়নি। তবে আজ থেকে পর্যটকেরা সৈকতে গোসল করতে নামছেন। হোটেল মালিকেরা পর্যটক টানতে কক্ষভাড়ার ৪০ শতাংশ ছাড় দিচ্ছেন।

সূত্র:- Right News BD

en_USEnglish