আপনি যদি প্রতিদিন ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে, এই পোষ্টটি আপনার জন্য। তাছাড়া প্রতিদিন ঘি খেলে কি হয় , এ বিষয়ে এ টু জেড জানার জন্য হয়তো আপনি গুগলে সার্চ করে বা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমাদের Right News BD সাইটে এসে থাকেন তাহলে, পোস্টটি প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
গবেষণা অনুযায়ী নিচে সম্ভাব্য স্বাস্থ্য রক্ষার্থে ঘি এর উপকারিতা ও অপকারিতা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে:
প্রতিদিন ঘি খেলে কি হয় ? ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা
ঘি এর উপকারিতা
ঘি’তে থাকা ভিটামিন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং স্বাস্থ্যকর চর্বির সমৃদ্ধ উৎস।
যদিও ঘি খাওয়ার উপকারিতা রয়েছে সেহেতু ঘি খাওয়ার নিয়ম অনুযায়ী পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘি খাওয়ার উপকারিতা ও এর ব্যবহার শরীরের কিছু অপরিহার্য ভিটামিন এবং খনিজ শোষণ করতে সহায়তা করে।
গরুর দুধের ঘি এর উপকারিতা পাওয়ার জন্য রান্নায় ঘি এর ব্যবহার স্বাস্থ্যকর খাবার এবং সবজি রান্নার ক্ষেত্রে আরও বেশি পুষ্টিকর খাদ্য তালিকা হিসেবে পাওয়া যেতে পারে।
প্রদাহবিরোধী প্রভাব
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায়, ঘি এর উপকারিতা অপরিসীম। বিশেষ করে ঘি ত্বকের পোড়া জায়গা এবং ফোলাভাব নিরাময়ে ব্যবহার করা হয়।
যদিও এটি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত নয়, ঘি’তে বুটিরেট নামে একটি ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে, যা প্রদাহবিরোধী।গবেষণায় ঘি এর বুটিরেট শরীরের প্রদাহ কমায় বলে জানা গেছে।
স্থূলতা প্রতিরোধে সাহায্য করে
ঘি কনজুগেটেড লিনোলেইক অ্যাসিড (CLA)-এর একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। স্থূলতা প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এই ধরনের মাখনে পাওয়া CLA কিছু মানুষের ওজন নিয়ন্ত্রণে শরীরের চর্বি কমানোর উপায় হিসেবে সহায়ক হতে পারে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে।
হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যে সহায়ক
যদিও ঘি চর্বিতে সমৃদ্ধ, তবু এতে মনোআনস্যাচুরেটেড ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের উচ্চমাত্রা রয়েছে। এই স্বাস্থ্যকর ফ্যাটি অ্যাসিডগুলো হৃদযন্ত্র ও রক্তনালীর স্বাস্থ্যের জন্য সহায়ক।
সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে ঘি এর ব্যবহার ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ত্বকের যত্নে ঘি এর ব্যবহার
গবেষণায় দেখা গেছে, ত্বকের যত্নে ঘি এর ব্যবহার শরীরের ক্ষত স্থানে প্রয়োগ করতে সেই ক্ষত দ্রুত সেরে তুলতে পারে।
রূপচর্চায় ঘি এর ব্যবহার ত্বককে শক্তিশালী করার পাশাপাশি কোলাজেন বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধির খাবার হিসেবে
মাখনের মতো দুগ্ধজাত পণ্যে বুটিরেট আপনার কোলনের জন্য উপকারী এক ধরনের চর্বি।
ঘি এর বুটিরেট কোলনের কোষগুলিকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি তাদের স্বাভাবিক মেরামত প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে, যা হজম শক্তি বৃদ্ধির খাবার হিসেবে স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। কোলন স্বাভাবিকভাবে তৈরি করে তার তুলনায় খুবই কম।
ঘি’তে প্রায় ১% বুটিরেট থাকে। যা হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে ঘি বা দুগ্ধজাত পণ্যের উপর নির্ভর না করে, বেশি আঁশযুক্ত খাবারের তালিকা অনুযায়ী খেলে শর্ট-চেইন ফ্যাটি অ্যাসিডের পরিমাণ বাড়ানো যায়।
অ্যাক্রিলামাইড সংস্পর্শ কমায়
অ্যাক্রিলামাইড (বা অ্যাক্রিলিক অ্যামাইড ) হল একটি জৈব যৌগ যার রাসায়নিক সূত্র CH 2 =CHC(O)NH 2।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘি এর মতো প্রাণিজ চর্বি দিয়ে রান্না করলে তেল ব্যবহার করার তুলনায় কম পরিমাণে বিষাক্ত যৌগ অ্যাক্রিলামাইড তৈরি হয়।
প্রাণীদের ওপর গবেষণায় দেখা গেছে, বেশি মাত্রায় অ্যাক্রিলামাইড ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
ঘি এর অপকারিতা
ঘি এর অপকারিতা অনুযায়ী এতে থাকা চর্বির পরিমাণ এতটাই সমৃদ্ধ যে এটি পরিমিত পরিমাণে, সুষম খাদ্যের অংশ হিসেবে খাওয়া উচিত।
আপনার সেরা খাদ্যাভ্যাস নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন। ঘি খাদ্য তালিকায় যোগ করার আগে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো মনে রাখুন:
হৃদরোগ
যদিও পরিমিত মাত্রায় ঘি খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমতে পারে, অতিরিক্ত স্যাচুরেটেড ফ্যাট হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। হৃদরোগের ঝুঁকি রয়েছে এমন ব্যক্তিদের খাবারের সাথে ঘি যোগ করার সময় সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
ওজন বৃদ্ধি
যদিও ঘিতে থাকা CLA কিছু মানুষের ওজন বৃদ্ধির হার কমাতে সাহায্য করেছে, ঘি একটি ক্যালোরি-সমৃদ্ধ এবং চর্বিযুক্ত খাবার।
স্বাস্থ্যের দিক দিয়ে ঘি এর উপকারিতা থাকা সত্ত্বেও, ঘি এর ক্ষতিকর দিক আপনার শরীরের ওজন বৃদ্ধি এবং স্থূলতার ঝুঁকি বাড়তে পারে।
ঘি কীভাবে তৈরি করা হয়?
এটি খাঁটি গরুর দুধের মাখন থেকে তৈরি করা হয়, যা কম তাপে গরম করা হয় যতক্ষণ না পানিটি বাষ্পীভূত হয় এবং দুধের কঠিন অংশগুলো আলাদা হয়ে যায়।
ঘি এর কঠিন অংশগুলো তুলে ফেলে ছেঁকে নেওয়া হয়। অবশিষ্ট থাকে শুধুমাত্র পরিশোধিত তরল চর্বি, যা ঘি নামে পরিচিত।
এটি সাধারণত ১০০°F-এর নিচে তাপমাত্রায় প্রক্রিয়া করা হয়, এটি সাধারণ পরিশোধিত মাখনের তুলনায় বেশি পুষ্টিগুণ ধরে রাখে।
ঘি এর ব্যবহার
কিছু মানুষ ঘি হারবাল ওষুধের সাথে আয়ুর্বেদের অংশ হিসেবে ব্যবহার করেন।
ঘি এর ব্যবহার শতাব্দী প্রাচীন একটি বিকল্প চিকিৎসা পদ্ধতিতে প্রচলিত। ঘি এর ঔষধি গুণাবলী বিশ্বাস করা হলেও, সাম্প্রতিক সময়ে ঘি সাধারণ মাখনের তুলনায় পুষ্টিকর বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
ঘি বনাম মাখন
তুলনামূলক ঘি তৈরির পদ্ধতি অনুসারে ঘি ও পরিশোধিত মাখন প্রায় একই রকম।
ঘি এবং মাখন তৈরির প্রক্রিয়া একইভাবে শুরু হয়, কিন্তু ঘি এর ক্ষেত্রে, মাখনটি একটু বেশি সময় ধরে রান্না করা হয়, যা প্রোটিনকে সোনালী বাদামি করে এবং একটি ভাজা গন্ধ তৈরি করে।
ঘি কি দুগ্ধমুক্ত?
দুধের কঠিন অংশগুলো অপসারণের মাধ্যমে ঘি তৈরি করা হয়। এই কারণে, এতে ল্যাকটোজ এবং কেসিনের মতো দুগ্ধের শর্করা ও প্রোটিনের মাত্রা খুবই কম থাকে।
ঘি’র পুষ্টিগুণ
এক টেবিল চামচ ঘি’তে থাকে-
- ক্যালোরি: ১৩০
- প্রোটিন: ০ গ্রাম
- চর্বি: ১৫ গ্রাম
- কার্বোহাইড্রেট: ০ গ্রাম
- ফাইবার: ০ গ্রাম
- চিনি: ০ গ্রাম
ঘি এর ভিটামিন উৎস-
- ভিটামিন এ
- ভিটামিন ডি
- ভিটামিন কে
এছাড়াও এটি ভিটামিন-ই এর চমৎকার উৎস। গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন ই এর শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট গুণ রয়েছে।
ভিটামিন ই এর মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ক্যান্সার, আথ্রাইটিস এবং চোখে ছানি পড়ার লক্ষণ ও ঝুঁকি কমাতে সহায়ক। পাশাপাশি এই ভিটামিন হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতেও সাহায্য করতে পারে।
কীভাবে ঘি ব্যবহার করবেন?
বেকিং ছাড়া বেশিরভাগ রেসিপিতে আপনি মাখনের পরিবর্তে ঘি এর ব্যবহার করতে পারেন।
ঘি এর ব্যবহার
- উচ্চ তাপমাত্রায় সবজি এবং মাংস রান্না করতে
- আপনার খাবারে বাদামি স্বাদ আনতে
- ল্যাকটোজ অসহিষ্ণু হলে মাখনের বিকল্প হিসেবে
- বিরিয়ানি, নান, এবং গাজর হালুয়ার মতো ভারতীয় খাবারে
ঘি খেলে কি হয় সে বিষয়ে শেষ কথা
অনেকে প্রশ্ন করেন ঘি খেলে কি হয় ?
ঘি খাওয়ার উপকারিতা যেমন রয়েছে তেমন উচ্চ চর্বির পরিমাণের কারণে অতিরিক্ত খেলে হৃদরোগ এবং শরীরের ওজন বৃদ্ধি হওয়ার ঝুঁকি বাড়ার সম্ভাবনাও থাকে। স্বাস্থ্য রক্ষার ক্ষেত্রে ঘি পরিমিত মাত্রায় খাওয়া উচিত।
সূত্র: Right News BD