গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি

গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ উপায়:

কিছু খেতে পারছেন না, অল্প কিছু খেলেই বুক জ্বালাপোড়া করে গ্যাস্ট্রিক দূর হয় না, এর সমাধান কি? আমাদের অনেকেরই অল্প কিছু খেলেই বুকের মাঝখানে জ্বালাপোড়া করে।

এই রোগটাকে আমরা অনেক ধরনের নাম দেই যেমন, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, এসিডিটি সহ হার্ডবার্ণ বা অ্যাসিড রিফ্লাক্স ইত্যাদি।

গ্যাস্ট্রিক দূর করার সহজ ঘরোয়া চিকিৎসা পদ্ধতি

তবে ডাক্তারি ভাষায় গ্যাস্ট্রিক দূর করার রোগের নাম অনেক বড়। সমাধান জানতে নাম মুখস্ত করার প্রয়োজন হয় না। তবে কেন ওই সমস্যাটা হয় সেটা আগে ভালোভাবে পড়ে জেনে নিন।

তারপর জানবেন বাসায় বসেই এই সমস্যা কমানোর ৭টি উপায়। আর কখন অবশ্যই ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এগুলো বিশেষ করে গবেষণা থেকে তুলে ধরা হয়েছে।

বুক জ্বালাপোড়ার পাশাপাশি মুখের টকভাব লাগতে পারে, পেট ফাঁপা হতে পারে, বমি ভাব হতে পারে বারবার ঢেকুর আসতে পারে, আবার কারো কারো বারবার কাশি বা হেঁচকি হয় এছাড়াও কণ্ঠ কর্কস হয়ে যায়। নিশ্বাসে দুর্গন্ধের সৃষ্টি হয়।

কেন এই সমস্যাটা হয় সেটাই দিয়ে প্রথমে জানতে পারবেন। আমরা যখন কোন কিছু খেয়ে থাকি, সে খাবার পাকস্থলীতে যায়। পাকস্থলী কিছু অ্যাসিড এবং আরো কিছু জিনিস তৈরী করে খাবার হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে শুরু করে।

অ্যাসিড আর খাবার দুটোই পাকস্থলী থেকে নিচের দিকে নামতে থাকে।

তবে যদি অ্যাসিড নিচের দিকে না নেমে গলার দিকে উঠে আসে, তখন আমরা বুকে জ্বালা-পোড়া অনুভব করি।

তাহলে পাকস্থলীর অ্যাসিড কেন উপরের দিকে চলে আসে নীচে নেমে যায় না?

কোন কারণ ছাড়াই এমন হতে পারে, আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। যেমন নির্দিষ্ট কিছু খাবার যেমন বেশি মসলা দিয়ে রান্না করা খাবার খেলে জ্বালা পোড়া শুরু হয়।

আবার কেউ কফি খেলে অসুবিধা শুরু হয়, একেক জনের একেক রকম সমস্যা হতে পারে।

যারা ধূমপান করেন তাদের গ্যাস্ট্রিক দূর হয় না প্রায়ই দেখা দেয়। যদি অনেক দুশ্চিন্তা দূর করতে পারেণ না সেখানে থেকে হতে পারে। আপনার ওজন যদি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয় তখন এই সমস্যা বেশি হতে পারে।

যারা গর্ভবতী তারা প্রায়ই এ সমস্যায় ভোগে থাকেন।

হায়াটাস হার্নিয়ার কারণে

যাদের ‘হায়াটাস হার্নিয়া’ নামের একটা রোগ আছে, যেখানে পাকস্থলীর কিছু অংশ বুকের ওপর চলে আসে তাদের মধ্যেই বুক জ্বালাপোড়া সমস্যা দেখা যায়।

আর নির্দিষ্ট কিছু ওষুধ আছে যেগুলো সমস্যা তৈরি করতে পারে। যেমন অ্যাসপিরিন, আইবুপ্রফেন ইত্যাদি।

ডাক্তারের পরামর্শে গ্যাস্ট্রিক দূর করার জন্য ওষুধ সেবন করবেন। তবে কোনভাবেই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ গুলো বন্ধ করবেন না।

অবশ্য ডাক্তারকে জানানো শুরু করার পরে মনে হচ্ছে জ্বালাপোড়া সমস্যা বেড়ে গেছে। ডাক্তার আপনাকে ওষুধ বদলে দিতে পারেন অথবা জ্বালাপোড়ার জন্য অন্য ওষুধ দিতে পারেন।

বাসায় বসেই যে সব উপায়ে গ্যাস্ট্রিক দূর করতে পারেন:

আমাদের প্রতিদিনের অভ্যাস এর কিছু পরিবর্তন করলে কিন্তু আমি নিজে নিজেই এই সমস্যা অনেকটা কমিয়ে আনতে পারি।

খুব বেশি খাওয়ার যাবে না

একবারে পেট ভরে খেলে এ সমস্যা বেশি হয়। তাই অনেক খাবার একসাথে খাবেন না। সারাদিনে ভাগ ভাগ করে অল্প অল্প খাবার খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

বেশি খেলে পাকস্থলীতে ভরে ওঠে একটা বেলুন এর কথা চিন্তা করতে পারেন।

বাতাস দিলে যেমন বেলুন ফুলে কিছুটা তেমনই খাবার ঢুকলে পাকস্থলীতে ও প্রসারিত হয়।

একবারে অনেক খাবার খেলে পাকস্থলী অনেক ফুলে যায়।

আর তখন পাকস্থলীর ভেতরে অ্যাসিড উপরের দিকে উঠে আসতে পারে। আর এ অবস্থায় শুরু হতে পারেন বুকে জ্বালা পোড়া।

পাকস্থলী ভালো রাখতে

খাবারের সময় কোন ভাবেই অনিয়ম করবেন না। সময়মত খাবার না খেলে পাকস্থলী আরেকটা রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায় যেমন গ্যাসট্রাইটিস।

এই রোগে পাকস্থলীর ক্ষত দেখা দেয়, ইনফেকশন হতে পারে।

আর এই রোগ হলেও আপনার পেটে জ্বালা পোড়ার মতো ব্যথা হতে পারে। আপনার পক্ষে বোঝা সম্ভব না জ্বালাপোড়া কোন কারনে হচ্ছে।

তাই পাকস্থলী সুস্থ রাখতে আপনাকে নিয়ম করে সময়মতো খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।

অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার

অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার

অনেকের মাঝেই একটা ধারনা আছে যাদের এ সমস্যা তাদের জন্য দুনিয়ার প্রায় সব খাবারই নিষেধ।

শুধুমাত্র সিদ্ধ হওয়া ছাড়া খাবার খেতে হবে, এই ধারণাটা কিন্তু মোটেও ঠিক না। তাহলে সঠিকটা কি হতে পারে?

একজনের জন্য একেক ধরনের খাবার সমস্যা সৃষ্টি করে। যেসব, খাবার খাওয়ার ফলে আপনার বুকজ্বালা পোড়া করে। সেক্ষেত্রে সেই সব খাবার এড়িয়ে চলবেন।

সেটা হতে পারে মসলা দেয়া, অতিরিক্ত তেল দেয়া খাবার।

আপনার প্রিয় চপ, মুড়ি চানাচুর চটপটি কিংবা ডালভাত। আপনার কোন খাবারে সমস্যা হয় সেটা আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে, আর এড়িয়ে চলতে হবে।

রাতে সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া

রাতে সঠিক সময়ে খাবার খাওয়া

খাবারটা আগে আগেই সেরে ফেলবেন। রাতে ঘুমের সময় অন্তত ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা আগে।

আপনি যদি রাত ১১র দিকে ঘুমাতে যান, তাহলে কমপক্ষে সাড়ে সাতটায় খেতে বসে আটটার মধ্যে খাওয়া শেষ করবেন।

তারপর কিন্তু রাত ১১ টা পর্যন্ত জেগে থাকতে হবে ভাত খাওয়ার পরে অনেকেরই ঘুম আসে সেটা ফাইট করতে হবে।

এটা কেন করবেন ভরপেটে চিৎ হয়ে শুলে পাকস্থলী থেকে অ্যাসির উপর দিকে আসার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

মনে করেন একটি বোতলের নীচে যদি পাকস্থলী হয় আর উপরের অংশটি গলার দিক চলে আসার সম্ভবনা থাকে।

এছাড়াও কিছু না খেয়ে ৩ থেকে ৪ ঘন্টা জেগে থাকা কিন্তু একটু কষ্টেরই বটে মনে হলেও খিদে মেটানোর জন্য কিছু খেয়ে ফেলার জন্য তবুও নিজেকে আটকাতে হবে।

রাতে ঘুমার সময়

রাতে ঘুমার সময়

রাতে ঘুমানোর সময় বা বিছানায় শোয়ার সময় মাথা আর বুক ১০ থেকে ২০ সেন্টিমিটার উঁচুতে রাখবেন কোমরের চেয়ে।

সেটা পাকস্থলীর এসিড উপরে ওঠা থামাবে। বালিশ দিয়ে উঁচু করবেন না।

কারণ এতে শুধু আপনার মাথাটা উঁচু হয় বরং তোষকের নিচে বা খাটের নিচে কিছু দিয়ে খাটের একটা দিক উঁচু করে নিবেন এবং সেই দিকে মাথা দিবেন।

যাদের রাতের বেলা জ্বালাপোড়া সমস্যা বেশি হয়, তাদের জন্য এই ধাপটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

ঘুমের সময় দেহভঙ্গিটা যেন স্বাস্থ্যকর থাকে আঁকাবাঁকা অস্বাস্থ্যকর হলে আবার শরীরে ব্যথার সৃষ্টি হতে পারে। বালিশ বালিশ এর উচ্চতা পরিবর্তন করলে অনেকেরই ঘাড় ব্যথা হয়।

স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত ওজন

স্বাস্থ্যের অতিরিক্ত ওজন

এবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে যেটা শুধু আপনার বুকে জ্বালা পোড়ায় কমাবে না।

আপনার স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী হবে। আপনার যদি ওজন বেশি হয়, তাহলে সেটা কমানোর চেষ্টা করুন।

অতিরিক্ত ওজন স্বাস্থ্যের জন্য বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করে। ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায় ইত্যাদি অনেক কিছুই এই অতিরিক্ত ওজনের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

সেক্ষেত্রে ওজন কমিয়ে ফেলা এবং কমানো ধরে রাখাই একমাত্র উপায়। আপনার বুক জ্বালাপোড়ার সমস্যা সমাধানেও এটি অনেক সাহায্য করবে।

ধূমপান থেকে বিরত থাকুন

ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা ধূমপান কমিয়ে ফেলে কিংবা বন্ধ করে দেয়, তাদের এই সমস্যা অনেকাংশে কমে যায়।

আর ধূমপান নানা ধরনের রোগের কারণ তাই এই অভ্যাসটা পরিত্যাগ করাই উত্তম।

এতক্ষণ হয়তো জীবনাচরণে কিছু পরিবর্তন আনার বিষয়ে জেনেছেন।

তাই সবার ক্ষেত্রে এমন রোগ থাকবে না, যে শুধু জীবনাচরণের পরিবর্তনেই সেরে যাবে।

ঔষধের সাহায্য দরকার হতে পারে। তবে ওষুধের পাশাপাশি এই ধাপ গুলো নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

এখন জেনে নিবেন কোন কোন লক্ষণ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী।

যদি বারবার এই সমস্যা দেখা দেয়, প্রতিদিনের কাজে ব্যাঘাত ঘটায়।

এছাড়াও ৩ সপ্তাহ বা তার বেশি সময় ধরে প্রায় প্রতিদিনই এই সমস্যা দেখা দেয়। বয়স ৫৫ বা তার বেশি হয়ে থাকে তখন আপনি চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া জরুরী।

আর কিছু লক্ষণের কথা আপনার মাথায় রাখতে হবে। এগুলো দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই কিন্তু চিকিৎসকের সহায়তা নিতে হবে।

এগুলোকে বলে ‘এলার্ম সিনটাম’ অর্থাৎ এগুলো দেখা দিলে অন্য কোনো গুরুতর রোগ হচ্ছে কিনা সেটা যাচাই করার প্রয়োজন পড়ে।

চিকিৎসক সেটা পরীক্ষা করবেন, তবে লক্ষণগুলো আপনার জানতে লাগবে।

যাতে আপনি সময়মতো চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে পারেন।

এগুলোর মধ্যে ৬টা লক্ষণ আছে সেগুলো কি কি?

  • ওজন অনেক কমে যাচ্ছে কোনো চেষ্টা ছাড়াই কোনো কারণ ছাড়াই।
  • খাবার গিলতে সমস্যা হচ্ছে গলায় আটকে যাচ্ছে।
  • বার বার বমি হচ্ছে।
  • বমি বা পায়খানার সাথে রক্ত যাচ্ছে। পায়খানা কালো হচ্ছে। বমির মধ্যে কফির দানার মত কিছু দেখা যাচ্ছে। কফির দানা গুলো জমে থাকার রক্ত।
  • মনে হচ্ছে পেটের চাকার মতো কিছু একটা হয়েছে।
  • আয়রনের অভাব জনিত রক্তশূন্যতায় ভুগছেন।

এসব লক্ষণ দেখা দেয়া মানেই যে গুরুতর কিছু হয়েছে এমন না।

তবে একটা সম্ভাবনা আছে, সে জন্য অবশ্যই একজন চিকিৎসকের সহায়তা নিবেন।

আর যদি পেটে হঠাৎ করে তীব্র ব্যথা শুরু হয়, তাহলে দ্রুত হাসপাতালে যাওয়া প্রয়োজন।

এখানে গ্যাস দূর করার অনেক সমাধান দেওয়া আছে, আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী এই পোষ্টের লিংকটা মোবাইল, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে সেভ রাখতে পারেন।

শেষ করার আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে জেনে দেই। বুক জ্বালা পোড়া হওয়াকে আমরা অনেকেই আলসার বলে থাকি।

আলসার কি?

সাধারণভাবে আলসার মানে ক্ষত। এই ক্ষতগুলি পরিপাকতন্ত্রের অনেক অংশে দেখা দেয় এবং জটিলতা উৎপত্তি করতে পারে।

পরিপাকতন্ত্রে অতিরিক্ত অ্যাসিড তৈরি হলে এই রোগ হয়। অন্যদিকে, অ্যাসিডের মাত্রা স্বাভাবিক থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে এই রোগ দেখা দিতে পারে।

সূত্র:- Right News BD

en_USEnglish