শরীর সুস্থ রাখার ক্ষেত্রে ডাবের পানি যেকোন সময় খাওয়া যায়। তবে এই পানি পান করলে শরীরের নানা উপকারিতা পাওয়া যায়। তাছাড়া গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি পান করলেও অনেক উপকার মেলে। কিন্তু কিছু গর্ভবতী মায়েদের জন্য এই পানি উপকারে নাও হতে পারে। তাই এই পানি খেতে হলে সতর্কতা মেনে খাওয়া যেতে পারে।
চলুন জেনে নিই ডাবের পানি খাওয়ার সুবিধা সম্পর্কে।
স্বাস্থ্য সুরক্ষায় গর্ভাবস্থায় ডাবের পানি খাওয়ার সুবিধা
গর্ভাবস্থায় ডাবের পানির উপকারিতা
গর্ভাবস্থা একজন মহিলার জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। আর এই সময় দিন পরিবর্তনের সাথে সাথে তাঁর শরীরও পরিবর্তন হতে থাকে। তাই সুস্থ থাকতে সুষম খাদ্য ও পর্যাপ্ত পানি পান করা খুবই জরুরি।
- গর্ভাবস্থায় শরীরকে সুস্থ্য রাখতে প্রচুর পানি পান করা প্রয়োজন। তাই এ সময় ডাবের পানি পান করলে তাদের শরীরে পানিশক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি ডিহাইড্রেশন দূর করে শরীরকে সতেজ রাখে।
- ডাবের পানিতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়ামসহ নানা ধরনের খনিজ পদার্থ থাকে। এই খনিজ পদার্থগুলি শরীরের বিভিন্ন কাজে সাহায্য করে, যেমন হাড় মজবুত করে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে এবং পেশি সংকোচন সহজ করে।
- গর্ভাবস্থায় ইলেক্ট্রোলাইট ঠিক রাখা খুবই জরুরি। গর্ভবতী মহিলারা ডাবের পানি পান করলে এই সময় ইলেক্ট্রোলাইট ঠিক রাখতে সাহায্য করে।
- প্রায় ৭০% থেকে ৮০% মহিলারা গর্ভাবস্থায় সকাল সকাল অসুস্থতা বোধ করেন। এদের মধ্যে আবার প্রায় ৬০% মহিলাদের বমি হওয়ার লক্ষণ থাকে। তবে এসব সমস্যা থেকে বাঁচতে তাদের ক্ষেত্রে ডাবের পানি পেট খারাপ ও বমিভাব কমাতে সাহায্য করতে পারে।
- ডাবের পানি মূত্রনালীর সমস্যা থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে।
- ডাবের পানি ত্বককে হাইড্রেটেড রাখে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে।
- তীব্র গরমের দিনে ডাবের পানি পান করলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
ডাবের পানি খাওয়ার নিয়ম
- সকালে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া শরীরকে শক্তিশালী করে এবং পাকস্থলী পরিষ্কার করে।
- ব্যায়াম করার আগে ডাবের পানি খেলে শরীরে পানিশূন্যতা দূর করে এবং পরে পেশীগুলোকে শক্তিশালী করে।
- দুপুরের খাবারের আগে ডাবের পানি পান করলে খাওয়ার পরিমাণ কমে এবং হজম ভালো হয়।
- রাতে ঘুমের আগে ডাবের পানি খাওয়ার ফলে শরীর হাইড্রেটেড থাকে এবং ঘুম ভালো হয়।
১. ডাবের পানি কত পরিমাণে খাওয়া উচিত?
- সাধারণত একদিনে ২-৩টি ডাবের পানি খাওয়া যেতে পারে।
- কিডনি ও ডায়াবেটিস রোগীদের এই পানি খাওয়া চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী সর্ম্পূণ নিষেধ রয়েছে।
২. ডাবের পানি খাওয়ার সময় কিছু বিষয় মাথায় রাখা উচিত:
তাজা ডাব: সবসময় তাজা ডাবের পানি খাওয়া উচিত।
পরিবেশ: পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশে ডাবের পানি খাওয়া উচিত।
অ্যালার্জি: যদি ডাবের পানিতে অ্যালার্জি থাকে তবে এটি এড়িয়ে চলায় ভালো।
খালি পেটে ডাবের পানির উপকারিতা
স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়া অত্যন্ত উপকারী। এটি একটি প্রাকৃতিক এবং বিশুদ্ধ পানীয় যা শরীরকে হাইড্রেট করে এবং অনেক উপকারিতা বয়ে আনে।
খালি পেটে ডাবের পানি খাওয়ার উপকারিতা:
- গরমের সময় ডাবের পানি খেলে শরীরকে দ্রুত হাইড্রেট রাখতে সাহায্য করে।
- এতে পটাশিয়াম, সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন সি প্রচুর পরিমাণে থাকে।
- এটি পাকস্থলীর অ্যাসিডের পরিমাণ কমিয়ে আনে এবং অম্বল ও গ্যাসের সমস্যা দূর করে।
- ডাবের পানি কিডনিকে পরিষ্কার করে এবং কিডনি পাথরের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়।
- এটি শরীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং ক্লান্তি দূর করে।
- ডাবের পানি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়।
- এটি মেটাবলিজম বাড়িয়ে ওজন কমানোতে সাহায্য করে।
- ভিটামিন সি সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- এটি মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে স্মরণশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে।
- মাসিকের সময় ডাবের পানি খাওয়া ব্যথাসহ অন্যান্য সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
ভরা পেটে ডাব খেলে কি হয়
ভরা পেটে ডাব খেলে সমস্যা হওয়ার সম্ভবনা খুবই কম থাকে। তবে, কিছু ক্ষেত্রে অস্বস্তি বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
আমাশয়: খুব বেশি পরিমাণে ডাবের পানি খাওয়া বা খাবারের সাথে মিশিয়ে খাওয়া আমাশয়ের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
পেট ফাঁপা: খাবারের পরপরই ডাবের পানি খাওয়া পেট ফাঁপা অনুভূতি বাড়াতে পারে।
ডাব খেলে কি গ্যাস হয়
ডাবের পানি সাধারণত পেটের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ পদার্থ থাকে যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়।
তবে কিছু বিশেষ ক্ষেত্রে ডাব খেলে সমস্যা হতে পারে:
- খালি পেটে ১টা বা ২টার বেশি ডাবের পানি খেলে কিছু লোকের পেটে গ্যাস হওয়ার সম্ভবনা হতে পারে।
- কিডনি রোগ, উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ডাব খাওয়ার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
সূত্র: Right News BD