সম্প্রতি সময়ে ইউক্রেন দ্রুত ভাবে রাশিয়ার কাছে এই যুদ্ধে হারতে বসেছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের অচলাবস্থা পারস্পরিক সংঘর্ষের মধ্য দিয়েই চলবে। প্রকৃতপক্ষে রক্ত ঝরতে থাকবেই। তারা আরও বলে যে রাশিয়ার দানবীয় যুদ্ধের দানবতা অন্তত থামতে বাধ্য হবে কারণ রাশিয়ান সৈন্যরা হত্যাকারী ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে রক্তপাত করছে।
যারা এগুলো বিশ্বাস পোষণ করে তারা কল্পনার জগতে বাস করছে। বাস্তবতা হল ইউক্রেন দ্রুত সামরিক শক্তি সঙ্কুচিত হচ্ছে, পশ্চিমা সাপ্লাই চেইনগুলো চাপে পড়ছে এবং ন্যাটোর উন্নত অস্ত্র ও গোলাবারুদের মজুদ কমে যাচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে, যুদ্ধ রূপান্তরিত হচ্ছে। যুদ্ধ এখন এমন দিকে মোড় নিচ্ছে যেখানে রুশ বাহিনী বেশ কিছু সুবিধা পেতে চলেছে।
এই যুদ্ধে মস্কো সর্বাত্মক অবস্থানে রয়েছে। একটি সৌহার্দ্যপূর্ণ মীমাংসা করার সুযোগের ছোট জানালাটিও হারিয়ে গেছে। যুদ্ধের এই পর্যায়ে, রাশিয়া যদি দৈবক্রমে বড় পরাজয়ের শিকার না হয়, তবে ইউক্রেনের উপর রাশিয়ান বাহিনীর সংখ্যাগত শ্রেষ্ঠত্ব রাশিয়ার জন্য চূড়ান্ত বিজয়ের দিকে নিয়ে যাবে।
এই যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন এবং ন্যাটো মিত্রদের ব্যর্থতা সম্পূর্ণভাবে পরিহার করা অসম্ভব। পশ্চিমাদের দুর্বলতা উপলব্ধি করে রাশিয়া এখন ইউক্রেনের প্রতিরোধ ভাঙতে ও অবনমিত করতে সাধ্যের সব কৌশল ব্যবহার করছে। শেষ সময়ে এই শুরু হয়ত ইউক্রেনের বাখমুত শহরে ঘটতে চলেছে। ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় শহরটি রাশিয়ার সীমান্তের দিকে অধিষ্ঠিত।
বখমুত যদি গুরুত্বহীন হলেও সেনাবাহিনীর টানা পড়ে ও অস্ত্র-গোলাবারুদ নিয়ে কেন ইউক্রেনকে শহর রক্ষার জন্য পরাজয় করতে হবে? এই প্রশ্নে তাদের উদ্দেশ্য হলো, ইউক্রেন দ্রুত রুশ বাহিনীকে ফাঁদে ফেলার কৌশল গ্রহণ করেছে। এখন ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বাখমুতের পরিস্থিতি এতটাই অসহনীয় হয়ে উঠেছে যে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের জন্য শহরের বাইরে একটি নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। তারা আশা করছে, এর মাধ্যমে রাশিয়ানদের বড় ধরনের অসুবিধায় ফেলা হবে।
রাশিয়ান বাহিনী বাখমুত শহরকে ঘিরে কয়েক মাস অতিবাহিত করেছিল। ফেব্রুয়ারির শুরুতেই, ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতি ভলোদিমির জেলেনস্কি ঘোষণা করেছিলেন যে তার শক্তিশালী বাহিনী বাখমুতে তিক্ত শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করবে। এই ধরনের বীরত্বপূর্ণ ঘোষণা শুধুমাত্র কিয়েভ থেকে করা যেতে পারে. কিন্তু যুদ্ধক্ষেত্রের রূঢ় বাস্তবতা, সেই আওয়াজ পৌঁছতে পারে না।
সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে ইউক্রেনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা ক্রমাগত নিখোঁজ হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে। এ ছাড়া ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বেশ কিছুদিন ধরেই বলে আসছেন যে বাখমুতের পরিস্থিতি দুঃসহ পর্যায়ে পৌঁছালে সেখান থেকে সেনা প্রত্যাহার করা হবে।
মার্চের প্রথম দিকে এটি অনেকটা স্পষ্ট ছিল যে বাখমুতে ইউক্রেনীয়দের হত্যার জন্য রাশিয়ান চিন্তা কাজ করছে। ফলস্বরূপ, অবরুদ্ধ শহর থেকে ইউক্রেনীয় বাহিনী প্রত্যাহার অপরিহার্য হয়ে ওঠে।
অবশ্যই বখমুত উভয় পক্ষেরই একক গুরুত্বের শহর। কারণ, ডিনিপার নদীর ধারে পূর্ব ইউক্রেনের গ্রামের রাস্তা এই শহরের মধ্য দিয়ে গেছে। ব্যবসা-বাণিজ্যের একটি প্রধান কেন্দ্র হওয়ায় ডিনিপারকে ইউক্রেনের ধমনী বলা হয়। এটি ইউক্রেনের ভৌগলিক প্রবেশদ্বারও। এ কারণেই রাশিয়ান-ইউক্রেনীয় বাহিনী কয়েক মাস ধরে ডিনিপার নদীর দ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নিতে লড়াই করছে।
বর্তমান সময় পর্যন্ত ইউক্রেনের সেনারা গুরুত্বপূর্ণ এলাকা থেকে রুশ বাহিনীকে কোনভাবেই সরিয়ে দিতে পারেনি। তাই বলে বাখমুতে শান্তিপূর্ণ অবস্থা ফিরবে না? তবে মনে হচ্ছে সেটাই হতে চলেছে। ইউক্রেনের প্রতিরোধ যোদ্ধারা শক্তিহীন হয়ে পড়ায় তাদের বর্তমান পূর্ব ইউক্রেন থেকে অনেক ততক্ষনাৎ সরে যেতে হবে। ডিনিপার নদীর ভাগ্যে কী ঘটতে চলেছে তা এখন পশ্চিমের প্রধান উদ্বেগের বিষয়।
রাশিয়ানদের আক্রমণের কৌশল (শত্রু সম্পূর্ণরূপে নিশ্চিহ্ন না হওয়া পর্যন্ত আক্রমণ চালিয়ে যাওয়া) সহায়কভাবে কাজ করছে। এবং মস্কোর সর্বশেষ উদ্দেশ্য হল পূর্ব ইউক্রেনের রুশ-ভাষী অঞ্চলের পাশাপাশি দক্ষিণে ক্রিমিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা।
বাখমুত শহর থেকে ইউক্রেনীয় সৈন্যদের বিতাড়নের অর্থ হল ডিনিপারের দিকে রাশিয়ার অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখা এবং ইউক্রেনের বাকি অংশ থেকে এই অঞ্চলকে বিচ্ছিন্ন করা। ডিনিপার অঞ্চলের উপর পূর্ণ রাশিয়ান নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অর্থ হল সেই দিক থেকে ক্রিমিয়াতে একটি সামরিক অভিযান শুরু করার জন্য খারাপ পরামর্শ দেওয়া ইউক্রেনীয়রা ব্যর্থ হবে।
অথচ ডিনিপারের ক্ষতির অর্থ ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রের ধীর এবং বেদনাদায়ক মৃত্যুর ভূমিকা। মাস বা বছর সময় লাগুক না কেন, রাশিয়ানরা নড়বে না। ইতিহাসের নানা ধরণের যুদ্ধে তারা যেভাবে যুদ্ধ করেছে ঠিক এখানেও সে রকমই যুদ্ধ করবে। বিপুল জনশক্তি, বর্বরতা ও সময় নিয়ে তারা লড়তেই থাকবে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ সম্পর্কে আমার ভবিষ্যদ্বাণীর সমালোচনা করার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই এখন আমাকে তিরস্কার করছেন। তারা বলে যে বাখমুত কৌশলগতভাবে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় যতটা আমি পরামর্শ দিয়েছি। কিন্তু সেই দাবি উড়ে যায় গন্ধ পরীক্ষা বা প্রাথমিক পরীক্ষার মুখে। একটা কথা, বখমুত যদি গুরুত্বহীন হয়, তাহলে সেনাবাহিনীর টানাপোড়েন ও অস্ত্র-গোলাবারুদ থাকা সত্ত্বেও ইউক্রেনকে শহর রক্ষায় এত সময় ব্যয় করতে হবে কেন?এই প্রশ্নে তাদের যুক্তি হলো, ইউক্রেন রুশ বাহিনীকে ফাঁদে ফেলার ফন্দি গ্রহণ করেছে। বর্তমান ইউক্রেনীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর জন্য বাখমুতের পরিস্থিতি এতটাই দুঃসহ হয়ে উঠেছে যে বাঁধা দেয়ার ক্ষেত্রে যোদ্ধাদের জন্য শহরের বাইরে একটি নতুন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। তারা আশা করছে, এর মাধ্যমে রাশিয়ানদের বড় ধরনের অসুবিধায় ফেলতে হবে
এটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনার সাথে হবুহ মিল পাওয়া যাচ্ছে। নাৎসি সর্দার অ্যাডলফ হিটলার তার সমস্ত বাহিনীকে প্রতিরক্ষামূলক অবস্থানে যাওয়ার নির্দেশ দেন। কিন্তু সেই শক্তির ছিল একমাত্র মানচিত্রে। বেশ কিছু জার্মান সামরিক নেতার সাহস ছিল একজন পাগল নেতার মুখে এই ধরনের বিশ্বস্ততা উচ্চারণ করার – যে বাহিনী আসলেই ছিল না এবং পরিস্থিতি ছিল আশাহীন।
গত চার দিনে বাখমুতের যুদ্ধে রাশিয়া তিন হাজারেরও বেশি সৈন্য হারিয়েছে। এই যুক্তি দিয়ে অনেকেই বলছেন, রুশ বাহিনীকে হয়রানি করার জন্য ইউক্রেন বাহিনী যে কৌশল নিয়েছে তা কাজ করছে। কিন্তু বাস্তবতা হল রুশ বাহিনী বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মধ্য ইউক্রেনের দিকে ধীরগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে।
তবে ইতিমধ্যে ইউক্রেনীয় সৈন্যরা যে শূন্যতা হারিয়েছে তা পূরণ করার কোন প্রকার লক্ষণও নেই। অন্যদিকে, নিহত রাশিয়ান সৈন্যদের শূন্যপদ খুব তাড়াতাড়ি পূর্ণতা পায়।
সূত্র:- Right News BD