বর্তমান বিশ্বে ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যার দিক দিয়ে বাংলাদেশে অষ্টম। তবে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীর ৯৭ শতাংশই বাংলাদেশে। এ ধরনের ডায়াবেটিস বা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি পেলে ঠিকঠাক পদক্ষেপ হাতে নিলে দ্রুত কিছু প্রাকৃতিক উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতে পারে। নিচে থাকা উপায়গুলো নিয়মিত মেনে চললে শুধুমাত্র ঘরোয়া উপায়ে আপনি ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।
প্রাকৃতিকভাবে দ্রুত ওষুধ ছাড়াই ডায়াবেটিস থেকে মুক্তির ঘরোয়া উপায়
১. নিয়মিত শরীরচর্চা (ডায়াবেটিস রোধে শারীরিক ব্যায়াম কার্যকর ভূমিকা রাখে)
শরীরচর্চা রক্তে গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
প্রতিদিন ৩০-৪০ মিনিট হালকা ব্যায়াম যেমন হাঁটা, সাইক্লিং, বা যোগব্যায়াম করলে ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ে এবং রক্তে শর্করা স্তর কমে।
২. উচ্চ আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া (পরিপাকতন্ত্রের প্রক্রিয়া ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে)
আঁশসমৃদ্ধ খাবার হজম প্রক্রিয়া ধীরগতিতে ঘটায় এবং রক্তে শর্করা হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়া রোধ করে। সবজি, ফল, বাদাম, এবং গোটা শস্য উচ্চ আঁশযুক্ত খাদ্য হিসেবে বিবেচিত।
৩. পর্যাপ্ত পানি পান (রক্তে শর্করার ওঠানামা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে)
প্রচুর পানি পান রক্তের শর্করা মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। পর্যাপ্ত পানি শরীরের বাড়তি গ্লুকোজ প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করতে সাহায্য করে।
৪. দারুচিনি সেবন (রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে)
দারুচিনি ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বেড়ে যাওয়ার মাধ্যমে রক্তে শর্করার মাত্রা ২৪% কমায়। প্রতিদিন ১-২ গ্রাম দারুচিনি চায়ের সাথে বা পানির সাথে মিশিয়ে পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করবে।
৫. পর্যাপ্ত ঘুম (টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর ঝুঁকি কমাতে সহায়ক)
অপর্যাপ্ত ঘুম টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীর ক্ষেত্রে ঝুঁকি বাড়ায়। ঘুমের ঘাটতি ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়িয়ে দেয়। তাই প্রতিদিন ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো উচিত।
৬. খাদ্যে চিনি এবং কার্বোহাইড্রেট ( কমিয়ে শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে)
কার্বোহাইড্রেট এবং চিনিযুক্ত খাবার কমিয়ে শর্করা নিয়ন্ত্রণে আনা যায়। বিশেষ করে সফট ড্রিঙ্ক, মিষ্টি জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলা উচিত।
৭. মেথি বীজ (রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে)
মেথি বীজ রক্তে শর্করা স্তর কমাতে সহায়ক। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৫-১০ গ্রাম মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে রেখে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৮. অ্যাপল সিডার ভিনেগার (ডায়াবেটিস রোগীর গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে)
অ্যাপল সিডার ভিনেগার শরীরের ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ানোর মাধ্যমে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
প্রতিদিন ১-২ টেবিল চামচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার পানিতে মিশিয়ে খাবারের সাথে সেবন করা যায়।
৯. নিয়মিত রক্তে শর্করা পরিমাপ (ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে)
রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করে রাখা উচিত, যাতে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়।
১০. স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট
স্ট্রেসের ফলে কর্টিসল হরমোন বাড়ে, যা রক্তে শর্করার মাত্রা বৃদ্ধি করে। তাই ধ্যান, প্রার্থনা, বা যেকোনো রিল্যাক্সেশন টেকনিক অনুসরণ করে স্ট্রেস নিয়ন্ত্রণে রাখা উচিত।
এসব প্রাকৃতিক উপায় অনুসরণ করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। তবে, নিয়মিত চেকআপ এবং ডাক্তারের পরামর্শও নেওয়া উচিত।
সূত্র: Right News BD