তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করার ৫টি ঘরোয়া উপায়

যে ৫টি কার্যকরী উপায় তৈলাক্ত ত্বকের ব্রণ দূর করবে

১. লেবুর রস এবং মধুর মিশ্রণ

লেবুর রস এবং মধুর উপকারিতা

  • ব্রণ দূর করে: লেবুর রস ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে এবং ব্রণর জীবাণু ধ্বংস করে।
  • ত্বক উজ্জ্বল করে: এটি ত্বকের দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
  • অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ: ভিটামিন সি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হিসেবে কাজ করে, যা ত্বকের কোষগুলিকে সুরক্ষা দেয়।
  • প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার: মধু ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং ত্বকের শুষ্কতা কমাতে সাহায্য করে।
  • ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী: এতে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ আছে, যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে প্রতিরোধ করে।
  • সজীবতা আনয়ন: মধু ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা ধরে রাখতে সাহায্য করে এবং ত্বককে সজীব রাখে।

লেবু এবং মধুর মিশ্রণ তৈরির পদ্ধতি

এই মিশ্রণ ব্যবহারে কিছু সতর্কতা

  • প্রথমবার ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করুন, কারণ লেবুর রস ত্বকের সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে।
  • যদি ত্বকে জ্বালাপোড়া বা অস্বস্তি হয়, তাহলে অবিলম্বে মিশ্রণটি ধুয়ে ফেলুন।
  • সংবেদনশীল ত্বকে সরাসরি লেবুর রস ব্যবহারের পরিবর্তে এটি পানির সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।

লেবুর রস এবং মধু ব্যবহারের অন্যান্য টিপস

  • সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করতে পারেন, তবে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে।
  • বাইরে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণ ব্যবহার না করা উত্তম, কারণ লেবুর রস সূর্যালোকের সংস্পর্শে এসে ত্বকে সংবেদনশীলতা বাড়াতে পারে।

২. অ্যালোভেরা জেল (তৈলাক্ত ত্বক ও ব্রণের সমস্যায় কার্যকরী সমাধান)

অ্যালোভেরা জেলের উপকারিতা

  • প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি: অ্যালোভেরা ত্বকের প্রদাহ কমিয়ে ব্রণর লালচে ভাব এবং ফোলাভাব কমাতে সাহায্য করে।
  • ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধী: এতে প্রাকৃতিক অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান রয়েছে, যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সহায়ক।
  • ত্বক আর্দ্র রাখে: অ্যালোভেরা ত্বকের ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে, যা ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং তৈলাক্ত ভাব কমায়।
  • ত্বক পুনরুজ্জীবিত করে: এতে ভিটামিন ই এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা ত্বকের কোষ পুনর্গঠনে সহায়তা করে এবং ত্বককে সজীব রাখে।

অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের পদ্ধতি

অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের কিছু টিপস

  • প্রতিদিন ২ বার (সকালে এবং রাতে) অ্যালোভেরা জেল প্রয়োগ করতে পারেন। নিয়মিত ব্যবহারে ব্রণ দ্রুত শুকিয়ে যাবে এবং ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমবে।
  • রাতে ঘুমানোর আগে মুখ পরিষ্কার করে অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে রাখলে তা আরও কার্যকর হতে পারে।
  • সংবেদনশীল ত্বকে ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করুন। যদি কোনো অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া হয়, তাহলে ব্যবহার বন্ধ করুন।

ব্যবহার সতর্কতা

  • অ্যালোভেরা জেল ব্যবহারের পরপরই সূর্যের আলোতে বের না হওয়া উত্তম, কারণ ত্বক তখন সূর্যের সংবেদনশীলতায় ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
  • বাজারের অনেক অ্যালোভেরা জেলে কেমিক্যাল এবং সংরক্ষণকারী উপাদান থাকতে পারে, তাই খাঁটি অ্যালোভেরা জেল বা ঘরে তৈরি তাজা অ্যালোভেরা ব্যবহার করা নিরাপদ।

অ্যালোভেরা জেলের অন্যান্য সুবিধা

  • দাগ দূর করে: নিয়মিত অ্যালোভেরা ব্যবহার ত্বকের কালো দাগ ও ব্রণের দাগ দূর করতে সাহায্য করে।
  • ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়: এটি ত্বকের প্রাকৃতিক জেল্লা বৃদ্ধি করে এবং ত্বককে মসৃণ রাখে।

৩. টমেটোর রস ত্বকের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে সহায়ক

টমেটোর রসের উপকারিতা

  • ভিটামিন সি: টমেটো ভিটামিন সি-তে সমৃদ্ধ, যা ত্বকের ব্রণ দূর করতে এবং ত্বকের দাগ দূর করতে সহায়ক।
  • অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট: এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান ত্বকের কোষগুলিকে সুরক্ষা দেয় এবং নতুন কোষ গঠনে সহায়তা করে।
  • অ্যাস্ট্রিনজেন্ট প্রপার্টিজ: টমেটোর প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট উপাদান ত্বকের অতিরিক্ত তেল শোষণ করে, যা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।
  • পিএইচ ব্যালেন্স: টমেটোর রস ত্বকের পিএইচ লেভেল নিয়ন্ত্রণে রেখে ত্বকের তৈলাক্ত ভাব কমাতে সাহায্য করে।

টমেটোর রস ব্যবহারের পদ্ধতি

টমেটোর রস ব্যবহারের টিপস

  • সপ্তাহে ২-৩ বার এই প্রক্রিয়াটি অনুসরণ করতে পারেন, তবে যদি ত্বকে অতিরিক্ত শুষ্কতা বা অস্বস্তি হয়, তবে ব্যবহারের ফ্রিকোয়েন্সি কমিয়ে ফেলুন।
  • রাতে ঘুমানোর আগে টমেটোর রস লাগিয়ে রাখতে পারেন, এটি ত্বকের জন্য খুবই উপকারী এবং রাত্রিকালে ত্বকের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে।
  • টমেটোর রসের সাথে মধু বা অ্যালোভেরা জেল মিশিয়ে ব্যবহার করলে আরও ভালো ফলাফল পাওয়া যায়।

ব্যবহারে কিছু সতর্কতা

  • টমেটোর রস ত্বকে সরাসরি ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করুন, কারণ এটি ত্বকের সংবেদনশীলতায় প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
  • টমেটোর রস ব্যবহার করার পরপরই সূর্যালোকের সংস্পর্শে না যাওয়াই ভালো, কারণ এটি ত্বককে সংবেদনশীল করতে পারে।
  • ত্বক অতিরিক্ত শুষ্ক মনে হলে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।

টমেটোর রসের অন্যান্য সুবিধা

  • ত্বক উজ্জ্বল করে: টমেটোর রস নিয়মিত ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক আরও মসৃণ হয়।
  • দাগ ও পিগমেন্টেশন কমায়: এতে থাকা প্রাকৃতিক অ্যাসিড ত্বকের দাগ ও পিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক।
  • ত্বকের ছিদ্র সংকুচিত করে: টমেটোর রস ত্বকের বড় ছিদ্রগুলো সংকুচিত করতে সাহায্য করে, যা ব্রণ প্রতিরোধে কার্যকর।

টমেটোর রসের প্রাকৃতিক মাস্ক তৈরি

৪. শসার প্যাক ত্বকে ব্রণের সমস্যা কমাতে সহায়ক

শসার উপকারিতা

  • ত্বক ঠান্ডা রাখে: শসা ত্বকের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে এবং প্রদাহ কমিয়ে দেয়, যা ব্রণের ফোলাভাব কমাতে সহায়ক।
  • প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট: শসায় থাকা প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট উপাদান ত্বকের ছিদ্র সংকুচিত করে, যা তৈলাক্ততা কমাতে এবং ব্রণ প্রতিরোধে সহায়ক।
  • ভিটামিন সমৃদ্ধ: এতে ভিটামিন এ, সি, এবং ই থাকে, যা ত্বকের স্বাস্থ্য বজায় রাখে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।
  • হাইড্রেটিং প্রপার্টি: শসা ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং শুষ্কতা প্রতিরোধ করে, যা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।

শসার প্যাক তৈরির পদ্ধতি

শসার ৩টি সহজ ফেসপ্যাক পদ্ধতি

  • সপ্তাহে ৩-৪ বার শসার প্যাক ব্যবহার করতে পারেন, এটি ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে এবং ব্রণ দূর করতে সহায়ক।
  • চোখের চারপাশে শসার পাতলা টুকরো লাগিয়ে রাখতে পারেন, এটি চোখের ক্লান্তি দূর করে এবং ত্বককে সজীব রাখে।
  • লেবুর রস মিশিয়ে ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন, কারণ লেবু সংবেদনশীল ত্বকে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।

শসার প্যাক ব্যবহারে সতর্কতা

  • সংবেদনশীল ত্বকের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র শসার পেস্ট ব্যবহার করুন, লেবুর রস যোগ না করাই ভালো।
  • শসার প্যাক ব্যবহার করার পরপরই সূর্যের আলোতে না যাওয়াই ভালো, কারণ এতে ত্বক সংবেদনশীল হয়ে যেতে পারে।
  • যদি ত্বকে কোনো অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া অনুভূত হয়, তবে প্যাকটি অবিলম্বে ধুয়ে ফেলুন।

অন্যান্য সুবিধা

  • ত্বক উজ্জ্বল করে: নিয়মিত শসার প্যাক ব্যবহারে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায় এবং ত্বক আরও মসৃণ হয়।
  • ব্রণের দাগ কমায়: শসার প্যাক ত্বকের দাগ ও পিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক।
  • ত্বক হাইড্রেট করে: শসার প্রাকৃতিক হাইড্রেটিং প্রপার্টি ত্বককে আর্দ্র রাখে এবং শুষ্কতা প্রতিরোধ করে।

৫. চন্দন পাউডার এবং গোলাপ জল

চন্দন পাউডার এবং গোলাপ জলের উপকারিতা

  • অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ: চন্দন পাউডারে রয়েছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টিজ, যা ব্রণ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে ধ্বংস করতে সহায়ক।
  • প্রদাহ কমায়: এটি ত্বককে ঠান্ডা রাখে পাশাপাশি ব্রণের ফোলাভাব কমিয়ে লালচে ভাব দূর করতে সাহায্য করে।
  • প্রাকৃতিক অ্যাস্ট্রিনজেন্ট: গোলাপ জল ত্বকের ছিদ্র সংকুচিত করে এবং ত্বকের অতিরিক্ত তেল নিয়ন্ত্রণ করে, যা তৈলাক্ত ত্বকের জন্য উপকারী।
  • ত্বক উজ্জ্বল করে: চন্দন পাউডার ত্বকের কালো দাগ এবং ব্রণের দাগ দূর করে ত্বককে উজ্জ্বল করে তুলতে সহায়ক।
  • প্রাকৃতিক হাইড্রেশন: গোলাপ জল ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখে এবং ত্বককে সতেজ ও মসৃণ করে।

চন্দন পাউডার এবং গোলাপ জলের প্যাক তৈরির পদ্ধতি

চন্দন পাউডার এবং গোলাপ জলের প্যাক ব্যবহার পদ্ধতি

  • সপ্তাহে ২-৩ বার এই প্যাক ব্যবহার করতে পারেন, এটি ত্বকের তেল নিয়ন্ত্রণে এবং ব্রণ দূর করতে সহায়ক।
  • রাতে ঘুমানোর আগে এই প্যাক ব্যবহার করা আরও কার্যকর হতে পারে, কারণ এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে এবং ত্বকের কোষগুলিকে পুনর্জীবিত করে।
  • ত্বকের কালো দাগ এবং ব্রণের দাগ কমাতে নিয়মিত ব্যবহার করুন।

প্যাক ব্যবহারে কিছু সতর্কতা

  • যদি আপনার ত্বক খুব সংবেদনশীল হয়, তবে প্রথমবার ব্যবহার করার আগে প্যাচ টেস্ট করে নিন। যদি কোনো অস্বস্তি বা জ্বালাপোড়া হয়, তবে ব্যবহার বন্ধ করুন।
  • বাজারে অনেক ধরনের চন্দন পাউডার পাওয়া যায়। খাঁটি এবং প্রাকৃতিক চন্দন পাউডার ব্যবহার করা উত্তম, কারণ কেমিক্যালযুক্ত পাউডার ত্বকের ক্ষতি করতে পারে।
  • গোলাপ জল ব্যবহারের সময় নিশ্চিত করুন যে এটি খাঁটি এবং অ্যালকোহল মুক্ত, যাতে ত্বক শুকিয়ে না যায়।

চন্দন পাউডার এবং গোলাপ জলের অন্যান্য সুবিধা

  • ত্বক উজ্জ্বল করে: নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল হয় এবং প্রাকৃতিক জেল্লা ফিরে আসে।
  • ব্রণের দাগ কমায়: এই প্যাকটি ব্রণের দাগ এবং পিগমেন্টেশন কমাতে সহায়ক।
  • ত্বকের ছিদ্র সংকুচিত করে: গোলাপ জল ত্বকের বড় ছিদ্র সংকুচিত করে, যা তৈলাক্ত ত্বক এবং ব্রণ প্রতিরোধে কার্যকর।

পরিশেষে

সূত্র: Right News BD

bn_BDBengali