গর্ভাবস্থায় প্রত্যেক নারীদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন খাবারের তালিকায় খেজুর থাকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খেজুর এমন একটি খাবার যাতে রয়েছে অভাবনীয় কার্যকরী ক্ষমতা। খেজুরে পর্যাপ্ত পুষ্টি উপাদান, ভিটামিন সহ খনিজ উপাদান রয়েছে। এতে করে গর্ভের সন্তানের স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার জন্য সহায়ক হয়।
খেজুর খাওয়ার ফলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এজন্য ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভবতী মায়েদের জন্য খেজুর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ডায়াবেটিস আক্রান্ত মায়েদের জন্যও খুবই প্রয়োজন। গর্ভবতী মায়েরা যে কারণে খেজুর খাবেন তা নিচে ধাপে ধাপে আলোচনা করা হয়েছে-
- সুস্থ গর্ভাবস্থায় সাহায্য করে
- ত্বক ও চুলের জন্য সেরা
- শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে
- ওজন বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে
- রক্তস্বল্পতার লক্ষণ দূর করে
- ক্লান্তি দূর করার উপায় হিসেবে কাজ করে
- কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করার খাবার হিসেবে
- হার্টের সমস্যার লক্ষণ দূর করতে
- হাড় ক্ষয় প্রতিরোধ করতে
- কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
- উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
- মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য ভালো করে
- হেমোরয়েড প্রতিরোধে সহায়ক
- ওজন কমাতে সাহায্য করে
- প্রসব ব্যথা কমায়
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
আপনার প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন খেজুর। যারা আয়রণের অভাবে ভুগছেন অথবা যাদের গর্ভাবস্থায় আয়রণের প্রয়োজন থাকে তারা প্রতিদিন খেজুর খাওয়ার চেষ্টা করবেন। কারণ খেজুরে ভরপুর আয়রণ আছে। অন্তত দুটি খেজুর যদি প্রতিদিন খান তাহলে অনেক রোগ আপনার কাছেও ঘেঁষবে না।এগুলো ছাড়াও আরও অনেক উপকার পাওয়া যায় খেজুর খেলে।আর তার মধ্যে কয়েকটি হল:
অতিপুষ্টির লক্ষণ
খেজুরের পুষ্টি উপাদান লিখে শেষ করা যাবে না। অনেক অনেক পুষ্টি সমৃদ্ধ খেজুর। খেজুরের অত্যাবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান হলো–ভিটামিন, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি সিক্স, ফোলেইট, লৌহ, আঁশ, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এছাড়া আরও অনেক অনেক পুষ্টি রয়েছে। যা মা ও সন্তানের স্বাস্থের বৃদ্ধির জন্য অসংখ্য ভালো।
খেজুর প্রাকৃতিক ভাবে শক্তি যোগায়
খেজুর একটি প্রাকৃতিক ফল। এতে প্রাকৃতিক শক্তির উপাদান আছে। এটি কার্বোহাইড্রেটের প্রাকৃতিক উৎস। খেজুরে প্রচুর গ্লুকোজও থাকে। যা গর্ভাবস্থায় দুর্বলতা কমায়। এমনকি দ্রুত শক্তি যোগায় আবার সক্রিয় থাকতে সহায়তা করে।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে দ্রুত শরীরে রক্ত বৃদ্ধির উপায় হিসেবে কার্যকারিতা
দ্রুত রক্ত উৎপাদনের জন্য খেজুর খাওয়ার কোন বিকল্প নেই। সন্তান জন্মের সময় শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়। এতে মায়ের শরীর দুর্বল থাকে। তাই গর্ভাবস্থায় ও প্রসর পরবর্তী সময়ে খেজুর খেলে শরীরে দ্রুত রক্ত উৎপাদন হয়।এতে একজন মা তার হারানো শক্তি ফিরে পান।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার প্রচলন নতুন নয়। একটা সময় যখন চিকিৎসাসেবা এতটা সহজলভ্য ছিল না, তখনও কিন্তু গর্ভবতী নারীদের খেজুর খাওয়ার অভ্যাস ছিল। এর বড় কারণ হলো, গর্ভাবস্থায় নিয়মিত খেজুর খেলে লেবার পেইন অনেকটা কম হয়। এটি মনগড়া কোনো কথা নয়, বরং অনেকগুলো গবেষণা শেষে এমন তথ্যই জানিয়েছেন গবেষকরা। গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে তা ইউটেরাসের সংবেদনশীলতা কমিয়ে তাকে শক্তিশালী করে। এতে প্রসব ব্যথা অনেকটাই কম হয়।
আমেরিকার ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন (US National Center for Biotechnology Information)-এর একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, গর্ভাবস্থার পয়ত্রিশ সপ্তাহ পর থেকে প্রতিদিন ছয়টি করে খেজুর খেলে তা মা ও অনাগত শিশুর জন্য বেশ উপকারী হয়। সেইসঙ্গে সন্তান জন্ম দেওয়াও অনেকটা সহজ হয়ে যায়।
এছাড়াও গবেষণায় তারা আরো দেখেছেন, যেসব নারীরা গর্ভাবস্থায় খেজুর খান তাদের সার্ভিক্স অনেক বেশি ফ্লেক্সিবল থাকে, সে কারণে সন্তান প্রসব করা অনেক সহজ হয়। খেজুর খেলে প্রসবের সময় গর্ভবতী মায়ের কষ্ট কম হয়।
গর্ভাবস্থায় বাড়তি শক্তি বৃদ্ধি করতে খেজুর খাওয়ার উপকারিতা
একজন নারী সন্তান প্রসবের আগে অনেক বেশি শক্তির দরকার হয়। একটি সুস্থ বাচ্চা জন্ম দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত শক্তির প্রয়োজন পড়ে। খেজুরের নিউট্রিয়েন্টস একজন গর্ভবতী মায়ের শরীরে অতিরিক্ত শক্তি বৃদ্ধি করে। প্রসবের সময় বাড়তি শক্তির যোগান দিতে খেজুরের উপকারিতা অনেক।
প্রসবপ্রক্রিয়া স্বাভাবিক করে
গর্ভাবস্থার শেষের দিকে এসে প্রতিদিন ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম খেজুর খেলে সার্ভিক্স মজবুত হয়। এর ফলে কৃত্রিমভাবে কিংবা ওষুধ দিয়ে প্রসব ব্যথা সৃষ্টি করার দরকার হয় না। এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে।
দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে
সন্তান প্রসবের সময় শরীর থেকে অনেক রক্ত বের হয়ে যায়। এর ফলে মায়ের শরীর দুর্বল হয়ে যায়। গর্ভাবস্থায় এবং প্রসবের পরে নিয়ম করে খেজুর খেলে তা শরীরে দ্রুত রক্ত উৎপাদন করে। এতে মা তার হারানো শক্তি বেশ দ্রুত ফিরে পান।
প্রসব বেদনার লক্ষণ কমায়
খেজুরে থাকে উপকারী ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদান প্রসবের সময়ে সারভাইক্যাল মাসল ফেলিক্সিবল করে ও কমনীয় করে তোলে, যে কারণে প্রসব বেদনা অনেকটাই কম অনুভূত হয়।
খেজুর প্রসব ব্যথা কমাতে খুবই কার্যকরী। এই ফলে রয়েছে ফ্যাটি অ্যাসিড। এই উপাদান প্রসবের সময় মায়েদের কমনীয় করে তুলে এবং সারভাইক্যাল মাসল ফেলিক্সিবল করে এতে প্রসব ব্যথা কম অনুভব হয়।
স্বাস্থ্যে জন্য খেজুর খুবই উপকারী। তাই গর্ভাবস্থায় শেষের দিকে এসে অর্থাৎ ৩৫ সপ্তাহের পর থেকে ৬০ থেকে ৮০ গ্রাম খেজুর খেলে সার্ভিক্স মজবুত হয়। এর ফলে ওষধ দিয়ে বা কৃত্রিমভাবে ব্যাথা সৃষ্টি করার প্রয়োজন পরে না।
খেজুর বাড়তি শক্তি যোগ করে
সন্তান জন্ম দেয়ার জন্য একজন মায়ের অনেক শক্তির প্রয়োজন থাকে। জন্ম দেয়া ছাড়া সন্তান লালন–পালনেও মায়েদের অনেক শক্তির দরকার হয়। খেজুরে আছে বেশি পরিমাণে নিউট্রিয়েন্টস।
গর্ভাবস্থায় বা প্রসব পরবর্তী সময়ে নিয়মিত খেজুর খেলে মায়ের সন্তান জন্মদানে ও লালন-পালনে যে শক্তি দরকার হয় তা সহজে শরীর দিতে সক্ষম হয়।
অ্যান্ডি অক্সিডেন্ট উপাদান
খেজুরের অ্যান্ডি অক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেলের কারণে হওয়া কোষের ক্ষয় কমিয়ে আনে। তাছাড়া এই উপাদান গর্ভাবস্থায় সার্বিক সুস্থতায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ পালন করে।
হজম শক্তি বৃদ্ধির উপায় হিসেবে খেজুরের কার্যকারিতা
খেজুর হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে বেশ কার্যকরী। খেজুর আঁশ সমৃদ্ধ। আর আঁশ হজম ক্রিয়ার উন্নয়ন ও পেট পরিষ্কার রাখা জন্য কাজ করে।
সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়াকে সহজ করে
অনেক গবেষণায় দেখা যায় খেজুর খাওয়ার ফলে সন্তান জন্মদান প্রক্রিয়াকে অনেকটা সহজ করে তোলে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
খেজুরে রয়েছে উচ্চ পটাশিয়াম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে উপকারী।
গর্ভাবস্থায় খেজুর খাওয়ার অপকারিতা
গর্ভাবস্থায় খেজুর খেলে কি হয়
কোন কিছুই অতিরিক্ত ভালো না। তেমনি অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার ও ভালো না। শুধু খেজুর কেন কোন খাবারই অতিরিক্ত খাওয়া ভালো না।সবকিছুই প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খেলে উপকারের বদলে ক্ষতির সম্ভাবনা একটু বেশিই থাকে।
অতিরিক্ত খেজুর খেলে কি হয়
মাত্রা ছাড়া অতিরিক্ত খেজুর খেলে গ্যস্ট্রিকের সমস্যা, পেট ফাঁপা এমনকি ডায়রিয়া হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, তবে অতিরিক্ত ফাইবার গর্ভাবস্থায় খুবই বিপদজনক। খেজুর সংরক্ষণ এর জন্য সালফাইট নামক রাসায়নিক উপাদান ব্যবহৃত হয়।
এটি অতিরিক্ত গর্ভবতীদের শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষতিকর অবস্থার সম্মুখীন হতে পারে। তাই অতিরিক্ত খেজুর খাওয়ার যাবে না।
সূত্র:- Right News BD