হাঁসের ডিম খেলে কি প্রেসার বাড়ে

প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় অনেকেই নাশতায় হাঁসের বা মুরগীর ডিম খেতে পছন্দ করেন। সময় স্বল্পতার জন্য ভাতের সঙ্গে তরকারির বিকল্প হিসেবে ডিম ভাজির সাথে ভর্তা করেও খাওয়া যায়।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে প্রতিদিন বা নিয়মিত ডিম খাওয়া যাবে কি যাবে না? এ বিষয় নিয়ে অনেক রোগীদের ক্ষেত্রে বা সুস্থ মানুষদের মাঝে এখনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব রয়েছে।

যাঁদের বয়স একটু বেশি, ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক বা হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়েছেন, এমন রোগী অথবা যাঁদের রক্তে কোলেস্টেরল বা অন্যান্য চর্বির পরিমাণ বেশি, তাঁদের ডিম খেতে নিষেধ বা সম্পূর্ণ বর্জন করতে বলা হতো।

অনেকেই আবার ডিমের কুসুম বাদ দিয়ে শুধু সাদা অংশটুকুই খেতে বলতেন। এর কারণ একটাই, তা হলো ডিম খেলে কোলেস্টেরল বাড়ে, তাতে উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে। আসলে আগের দিনের এই ধারণা সত্যি নয়।

ডিমের কোলেস্টেরল মাত্রা

ডিম খেলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা খুব বেশি বৃদ্ধি পায় না। একজন প্রাপ্ত বয়স্ক সুস্থ মানুষ যদি দৈনিক গড়ে ৩০০ মিলিগ্রাম পর্যন্ত কোলেস্টেরল গ্রহণ করতে পারে। আর একটি ডিমে রয়েছে ২০০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল।

তাই আমেরিকান বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, হার্ট অ্যাসোসিয়েশন এখন আর তাদের খাদ্যের গাইড লাইনে ডিম খাওয়াকে নিরুৎসাহিত করছে না। তাছাড়াও যেকোনো ব্যক্তি ডিমের সাদা অংশ খেলে কোনো রকম সমস্যা তো হবেই না, এমনকি কুসুমসহ সম্পূর্ণ ডিম খেলেও উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল ও হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে না বলেই চলে। একটি 

গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে ৫ থেকে ৬টি ডিম খাওয়ার ফলে হৃদরোগ, স্ট্রোক বা অন্যান্য ধরনের হৃদ্রোগের কোনো ঝুঁকি নেই।

ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে বলা হয়েছে, দিনে একটিমাত্র ডিম খেলে হার্টের জন্য কোন প্রকার ক্ষতিকর হবে না। সকালের নাশতায় একটি সিদ্ধ ডিম খেলে কোলেস্টেরল প্রোফাইলের ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলে না। যতটা প্রভাব ফেলে আপনার সকালের নাশতায় মিষ্টি বা চর্বি জাতীয় খাবারের ফলে।

বিকল্পভাবে হাঁসের ডিম খাওয়া

ডিমের মধ্যে যে প্রোটিন, ভিটামিন বি১২, রিবোফ্লোবিন, ফলেট ও ভিটামিন ডি রয়েছে, যা কোলেস্টেরল বৃদ্ধির ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে দিতে সহায়তা করে। এমনকি ফ্রিজে দীর্ঘদিন সংরক্ষিত বা প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার চেয়ে হাঁসের বা মুরগীর ডিম খাওয়া ভালো বিকল্প হতে পারে।

অনেকে হাঁস বা মুরগির ডিম এমনকি সাদা বা লালচে ডিম খাওয়া নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগেন, আসলে সব ধরনের ডিমের পুষ্টিগুণ একই রকম। কেউ কেউ আবার কাঁচা ডিম খেতে পছন্দ করেন, এমনকি কাঁচা ডিমের পুষ্টিগুণ বেশি বলে মনে করেন, এ ধারণাটাও সত্যি নয়। বরং কাঁচা ডিম খেলে সালমোনেলা জাতীয় ব্যাকটেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

তরুণেরা এবং যাঁরা বেশি কায়িক পরিশ্রম করেন, তাঁরা নিয়মিত ডিম খেতে পারেন। এমনকি বয়স্করা সপ্তাহে কয়েকটি ডিম খেতে পারবেন। আর যাঁরা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছেন, তাঁদের সুস্বাস্থ্যের জন্য নিয়মিত হাঁসের বা মুরগীর ডিম খাওয়া উচিত।

তাছাড়া কিডনি অকেজো বা রেনাল ফেইলুরের রোগী চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ডিম খাওয়া একান্ত প্রয়োজন। কারণ কিডনি ফেইলুরে প্রোটিন জাতীয় খাবার কম খাওয়াই উচিত। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে ডিম খাওয়ার ফলে অ্যালার্জির সমস্যা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ ডিম খেতে হবে।

সবশেষে বলা যায়, সুস্বাস্থ্য এবং খাদ্যের জরুরি উপাদান প্রোটিন গ্রহণের বিষয়ে নিয়মিত ডিম খাওয়া নিয়ে কোনো বিতর্ক বা বিভ্রান্তির অন্ত নেই।

সূত্র:- Right News BD

bn_BDBengali