রক্ত আমাদের শরীরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। রক্ত শরীর সুস্থ রাখতে অক্সিজেন ও পুষ্টি সরবরাহ করে। কিন্তু অনেকেরই রক্তস্বল্পতা (অ্যানিমিয়া) বা দুর্বলতা দেখা দেয়, যা ক্লান্তি, শ্বাসকষ্ট এমনকি দুর্বল ইমিউন সিস্টেমের কারণ হতে পারে। তাই শরীরে রক্ত বাড়ানোর খাবার নিয়মিত খাওয়াটা খুবই জরুরি। আমি নিজেও রক্তস্বল্পতায় ভুগতাম, কিন্তু নির্দিষ্ট কিছু প্রাকৃতিক খাবার নিয়মিত খাওয়ার পর এই সমস্যা দূর হয়েছে। তাই আজ শেয়ার করব ৬টি প্রাকৃতিক খাবার সম্পর্কে, যা দ্রুত শরীরে রক্ত বাড়াতে সাহায্য করবে।
দ্রুত শরীরে রক্ত বাড়ানোর খাবার
পালং শাক
আয়রনের অন্যতম ভালো উৎস হলো পালং শাক। এটি দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়ায় এবং নতুন রক্তকণিকা তৈরি করে। প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রায় ২.৭ মিলিগ্রাম আয়রন থাকে, যা রক্তস্বল্পতা কমাতে কার্যকর।
পালং শাক খাওয়ার নিয়ম
পালং শাক ভাজি, স্যুপ বা স্মুদি বানিয়ে খেতে পারেন।
ভিটামিন C সমৃদ্ধ খাবারের সাথে খেলে আয়রনের শোষণ ক্ষমতা বাড়ে।
বিটরুট
বিটরুটকে বলা হয় প্রাকৃতিক ব্লাড বুস্টার। এটি লাল রঙ হওয়ার কারণে অনেকেই ভাবেন, এটি খেলে রক্ত বাড়ে। আসলে এটি আয়রন, ফোলেট ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা নতুন রক্তকণিকা তৈরি করে।
বিটরুট খাওয়ার নিয়ম
বিটরুটের জুস করে পান করুন।
সালাদ বা সবজির সাথে রান্না করে খেতে পারেন।
খেজুর
খেজুরে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, যা রক্তস্বল্পতা দূর করে। এটি দ্রুত শক্তি দেয় এবং ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়।
খেজুর খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন সকালে ২-৩টি খেজুর খাওয়া স্বাস্থ্যে পক্ষে খুবই উপকার।
খেজুর দুধের সঙ্গে মিশিয়ে পান করলে রক্ত বাড়ানোর প্রক্রিয়া দ্রুত হয়।
ডালিম (আনার) শরীরে রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে
ডালিমে প্রচুর পরিমাণে আয়রন ও ভিটামিন C রয়েছে, যা হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বাড়িয়ে রক্তস্বল্পতা দূর করে।
ডালিম খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন সকালে বা দুপুরে ১ কাপ ডালিমের দানা খাওয়া অত্যন্ত উপকারী।
স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে ডালিমের জুস বানিয়ে পান করতে পারেন।
মাছ ও মাংস
প্রাণীজ উৎস থেকে পাওয়া আয়রন সহজে শরীরে শোষিত হয়। গরুর মাংস, মুরগির কলিজা, সামুদ্রিক মাছ রক্ত বাড়ানোর জন্য খুবই উপকারী।
মাছ ও মাংস খাওয়ার নিয়ম
সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন মাছ বা মাংস খাওয়া স্বাস্থ্যে পক্ষে ভালো।
গরুর কলিজা ও সামুদ্রিক মাছ আয়রনের দারুণ উৎস।
ডিম
ডিমে আয়রন, প্রোটিন ও ভিটামিন B12 রয়েছে, যা শরীরে রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে।
ডিম খাওয়ার নিয়ম
প্রতিদিন ১-২টি ডিম খাওয়া স্বাস্থ্যে পক্ষে অনেক কার্যকরী।
সেদ্ধ, অমলেট বা ভাজা ডিম খেতে পারেন।
শরীরে রক্ত বাড়ানোর খাবার খাওয়ার সময় কিছু গুরুত্বপূর্ণ টিপস
আয়রন সমৃদ্ধ খাবারের সঙ্গে ভিটামিন C সমৃদ্ধ ফল (লেবু, কমলা, আমলকি) খেলে আয়রন ভালোভাবে শোষিত হয়।
কফি বা চা খাবারের সঙ্গে খেলে আয়রন শোষণ বাধাগ্রস্ত হতে পারে, তাই এগুলো এড়িয়ে চলুন।
পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যদি নিয়মিত এই খাবারগুলো খেতে পারেন, তাহলে রক্তস্বল্পতা দূর হবে এবং আপনি নিজেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ও সুস্থ অনুভব করবেন!
শরীরে রক্ত বাড়ানোর জন্য আপনি কোন কোন খাবার খেয়ে উপকার পেয়েছেন? কমেন্টে শেয়ার করতে ভুলবেন না।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
উত্তর: পালং শাক, বিটরুট, খেজুর, ডালিম, ডিম, ও গরুর মাংস হলো সবচেয়ে ভালো রক্তবর্ধক খাবার। এগুলো খাবারে আয়রন, ফোলেট ও ভিটামিন B12 সমৃদ্ধ, যা নতুন রক্তকণিকা তৈরি করে।
উত্তর: একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দৈনিক ৮ মিলিগ্রাম এবং নারীদের ১৮ মিলিগ্রাম আয়রন প্রয়োজন। গর্ভবতী নারীদের জন্য এটি ২৭ মিলিগ্রাম পর্যন্ত হতে পারে।
উত্তর: আয়রন ও ভিটামিন C যুক্ত খাবার যেমন লেবু, কমলা, আমলকি খেলে আয়রন ভালোভাবে শোষিত হয়। কফি ও চা আয়রন শোষণ কমিয়ে দেয়, তাই খাবারের সঙ্গে এগুলো এড়িয়ে চলুন।
উত্তর: রক্তস্বল্পতার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে—
অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, মাথা ঘোরা, ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া।
উত্তর: সাধারণত নিয়মিত ২-৩ মাস আয়রন সমৃদ্ধ খাবার খেলে রক্তস্বল্পতা কমে এবং হিমোগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিক হয়।
সূত্র: Right News BD