ঘুম আমাদের শরীরের সুস্থতা ও মানসিক প্রশান্তির জন্য অপরিহার্য। তবে অনেকেই জানেন না, রাতে কখন ঘুমাতে যাওয়া উচিত বা কতটুকু ঘুমানো প্রয়োজন। সঠিক সময়ে রাতে কখন ঘুমানো উচিত? সেটি একমাত্র নির্ভর করে আমাদের শরীরের জন্য কতটা গুরুত্বর্পূণ।
ঘুম আমাদের কাজের মান এবং কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
শরীর সুস্থ্য রাখতে রাতে কখন ঘুমানো উচিত
রাতের সঠিক সময়ে ঘুমানো কেন গুরুত্বপূর্ণ?
বিশেষজ্ঞদের মতে, রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমাতে যাওয়া সবচেয়ে ভালো।
ঘুমের সময়ে শরীর স্বাভাবিকভাবে হরমোন নিঃসরণ, কোষ পুনর্নির্মাণ ও মস্তিষ্কের কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যান, তাদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে।
রাতে সঠিক সময়ে ঘুমানোর সুবিধা
সার্কাডিয়ান রিদমের সঙ্গে সামঞ্জস্য: আমাদের শরীরের একটি প্রাকৃতিক ঘড়ি রয়েছে, যা সার্কাডিয়ান রিদম হিসেবে পরিচিত। এটি আমাদের শরীরের কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে এবং ঘুমানোর সময় ইঙ্গিত প্রদান করে।
রাতে সঠিক সময়ে ঘুমালে এই প্রাকৃতিক ঘড়ির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় থাকে, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দেয়।
শরীরের হরমোন ব্যালেন্স: রাতে সঠিক সময়ে ঘুমালে শরীরে মেলাটোনিন ও কর্টিসল হরমোনের নির্দিষ্ট পরিমাণ নিঃসরণ ঘটে। মেলাটোনিন হরমোনটি ঘুমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি রাতে নিঃসরণ শুরু হয়।
কর্টিসল হরমোন আমাদের জাগ্রত ও সক্রিয় রাখে। সঠিক সময়ে ঘুমানোর ফলে এই হরমোনগুলির সুসংবদ্ধ নির্গমণ ঘটে, যা স্বাস্থ্যকর ঘুম নিশ্চিত করে।
মানসিক প্রশান্তি: পর্যাপ্ত এবং সঠিক সময়ে ঘুম আমাদের মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেয়। যার ফলে মানসিক প্রশান্তি বজায় রাখতে সহায়ক।
পর্যাপ্ত ঘুমের উপকারিতা
পর্যাপ্ত ঘুমের উপকারিতা প্রচুর। যেমন-
স্মৃতিশক্তি এবং শেখার দক্ষতা বাড়ানো: ঘুমের সময় মস্তিষ্ক দিনভর শেখা তথ্য সংরক্ষণ করে। ফলে স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং শেখার ক্ষমতা বাড়ে।
ইমিউন সিস্টেম শক্তিশালী হওয়া: পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সময় শরীর বিভিন্ন রোগপ্রতিরোধী কোষ তৈরি করে।
মানসিক চাপ কমানো: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ বৃদ্ধি পায়। পর্যাপ্ত ঘুম মনোযোগ ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে, যা মানসিক চাপ কমাতে সহায়ক।
কর্মক্ষমতা ও মনোযোগ বৃদ্ধি: সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত ঘুম কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। যারা ভালো ঘুমান, তাদের মনোযোগ বেশি থাকে।
ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক: পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ঘুম কম হলে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়, যার ফলে ক্ষুধা বাড়াতে পারে।
ভালো ঘুম ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে এবং স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখতে সাহায্য করে।
কতটুকু ঘুম প্রয়োজন?
বয়স ও শারীরিক অবস্থার ওপর নির্ভর করে রাতে ঘুমের প্রয়োজনীয়তা ভিন্ন হতে পারে।
সাধারণত প্রাপ্তবয়স্কদের ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন, যদিও কিছু মানুষ ৬-৮ ঘণ্টার মধ্যে পর্যাপ্ত বিশ্রাম পেয়ে থাকেন।
তরুণদের জন্য ঘুমের পরিমাণ আরও বেশি প্রয়োজন হয়, কারণ তাদের মস্তিষ্ক ও শরীর দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে ১০-১২ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন।
বৃদ্ধির সাথে সাথে ঘুমের পরিমাণ কিছুটা কমে যেতে পারে, তবে নিয়মিত সঠিক সময়ে ঘুমানো তাদের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করার উপায়
নিয়মিত সময়ে ঘুমানো: প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া উচিত। এটি ঘুমের চক্রকে নিয়মিত করতে সাহায্য করে।
ঘুমের আগে ডিভাইস পরিহার করা: ঘুমানোর আগে মোবাইল, ল্যাপটপ এবং টিভির স্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত নয়।
এই ডিভাইসগুলো থেকে বের হওয়া নীল আলো ঘুমের জন্য ক্ষতিকর।
শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা: ঘুমানোর জন্য একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা উচিত।
ঘরের আলো কম রাখা, আরামদায়ক বিছানা এবং সঠিক তাপমাত্রা ঘুমের মান উন্নত করে।
সবশেষে: সুস্থ জীবনযাপনের জন্য রাত ১০টা থেকে ১১টার মধ্যে ঘুমানো এবং প্রয়োজনীয় ঘুম নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সহায়ক এবং দৈনন্দিন জীবনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়।সুতরাং, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের জন্য নিয়মিত সময়ে ঘুমানো এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।
সূত্র: Right News BD