বয়স ২৫ কি ৩০ পড়ছে চুল, দিন দিন চুল পড়ে মাথার ত্বক ফর্সা হয়ে যাচ্ছে। যদি দিনে ৫০ কিংবা ১০০টি চুল পড়ে তাহলে চিন্তার কোন কারণ নেই। এগুলো চুল প্রাকৃতিক নিয়মেই গজাবে। তবে নিয়মিত চুল গজার থেকে বেশি পড়ে গেলে সচেতন হতে হবে। আপনারও যদি নিয়মিত অতিরিক্ত চুল পড়ার সমস্যা থাকে, তাহলে আজকের পোষ্টে ছেলে ও মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার জানতে বিস্তারিত পড়ুন।
ছেলে ও মেয়েদের চুল পড়ার কারণ ও প্রতিকার
অল্প বয়সে চুল পড়ার কারণ
অল্প বয়সে চুল পড়া অনেক ছেলে ও মেয়েদের চিন্তার কারণ হয়ে দাড়ায়। কিন্তু এর জন্য কিছু কারণ রয়েছে। যেগুলো সমস্যার কারণে এই বয়সে চুল পড়ে যায়।
- যাদের পরিবারে চুল পড়ার পূর্ব সূত্র থাকে, তাহলে তাদের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- হরমোনের পরিবর্তনের ফলে অল্প বয়সে চুল পড়ার মূল কারণ হতে পারে।
- নিয়মিত খাবারের কারণেও হতে পারে, যেমন- আয়রণ, জিঙ্ক ও প্রোটিনের অভাবে চুল পড়ার আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হতে পারে।
- বিনা কারণে দৈনন্দিন জীবন যাপনে অতিরিক্ত মানসিক চাপ হলেও চুল পড়তে পারে।
- প্রতিদিন শ্যাম্পু ব্যবহারের কারণে চুলের গোড়া দূর্বল হয়েও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- মাথার ত্বকে অতিরিক্ত খুশকি হওয়ার ফলেও চুল পড়ার সম্ভবনা বেশি থাকে।
- শরীরের অন্যান্য রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ঔষধ সেবনে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলেও চুল পড়ার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কি কি খাবার খেলে চুল পড়া বন্ধ হবে? চুল গজানোর ভিটামিন কি?
নিয়মিত পড়ে যাওয়া চুল গজানোর জন্য শুধুমাত্র ভিটামিনই যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি আপনাকে সুষম খাদ্য, জীবনযাপন এবং নিয়মিত চুলের যত্ন নেয়া প্রয়োজন পড়বে। তবে কিছু ভিটামিন রয়েছে, যেগুলো আপনার চুল পড়া ঠেকিয়ে নতুন চুল গজাতে সাহায্য করবে।
মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, পালং শাক, বাদাম ও মটরশুটি। এই খাবারগুলোতে ভিটামিন (বি-৭, বি-১২) থাকে। তাই এগুলো খাবার নিয়মিত খেলে চুলের কোষ গঠনে সাহায্য করে এবং চুল পড়া কমাতে সহায়তা করে
বাদাম, বীজ, অ্যাভোকাডো ও পালং শাক। এসব খাবারে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। তাই দূর্বল হওয়া চুলের ফলিকলকে সুরক্ষিত করে এবং চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।
সূর্যের আলো, মাছ, ডিম ও দুধ। এগুলোতে ভিটামিন ডি থাকে, তাই এসব খাবার খেলে হাড়ের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
পালং শাক, লাল মাংস, চিকেন, দুধ ও বাদাম। এসব খাবারের মধ্যে থাকা আয়রন চুলের বৃদ্ধিতে দরকারী অক্সিজেন এনে দেয়।
ঝিনুক, কুমড়োর বীজ, বাদাম ও মাংস। এসব খাবার চুলের তৈলাক্তভাব দূর করার পাশাপাশি খুশকিও দূর করে।
অতিরিক্ত চুল পড়ার সমাধান
নিয়মিত অতিরিক্ত চুল পড়ার বিভিন্ন কারণ থাকতে পারে। তবে এই সমস্যা নিমিষের মধ্যেই সমাধান করা সম্ভব। আপনি দ্রুত চুল পড়া কমাতে কার্যকর কিছু ঘরোয়া উপায় হাতে নিতে পারেন:
নারকেল তেল: চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা জেল: চুলের জন্য খুব উপকারী। এটি চুলের গোড়া মজবুত করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
ডিম: ডিমে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন থাকে, যা চুলের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়।
পেঁয়াজের রস: পেঁয়াজে সালফার থাকে, যা চুলের বৃদ্ধি বাড়াতে সাহায্য করে।
মেহেদি: মেহেদি চুলের জন্য একটি প্রাকৃতিক কন্ডিশনার হিসেবে কাজ করে এবং চুল পড়া কমাতে সাহায্য করে।
কোন শ্যাম্পু ব্যবহার করলে চুল পড়া বন্ধ হবে?
স্কিন বিশেষজ্ঞদের মতে চুলের স্বাস্থ্য ফিরে পেতে শ্যাম্পু সপ্তাহে অন্তত ২-৩ দিন ব্যবহার করা উচিৎ।
ছেলে ও মেয়েদের চুল পড়ার কারণ থেকে বাঁচাতে কিছু জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের শ্যাম্পু
কেতোকোনাজোল শ্যাম্পু: এই শ্যাম্পু অতিরিক্ত খুশকি এবং চুল পড়া রোধ করতে দারুন কার্যকরী।
মিনোক্সিডিল শ্যাম্পু: জনপ্রিয় এই শ্যাম্পুটি সঠিকভাবে ব্যবহারের ফলে দ্রুত চুল লম্বা করতে সাহায্য করে।
অ্যালোভেরা শ্যাম্পু: চুলের সমস্যা দূর করতে এটি মাথার স্ক্যাল্পকে শান্ত করে এবং চুলকে ময়শ্চারাইজ করে।
আয়ুর্বেদিক শ্যাম্পু: এই শ্যাম্পুটি মূলত প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে তৈরি। নিয়ম মেনে এটি ব্যবহার করলে চুলের জন্য অনেক উপকার পাওয়া যায়।
রোজমেরি শ্যাম্পু: এই শ্যাম্পুতে কোনো ক্ষতিকর রাসায়নিক নেই, তাই এটি ব্যবহারের ফলে চুল পড়া কমায় এবং চুলকে মজবুত সাহায্য করে।
নতুন চুল গজানোর জন্য কোন তেল ভালো
ফেসবুক, টুইটাররের মত বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়াতে ঘন্টার পর ঘন্টা অনেক ছেলে ও মেয়েরা এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজেন। কিন্তু তাদের প্রশ্নের উপর ভিত্তি করে নতুন চুল গজানোর জন্য কিছু প্রাকৃতিক তেলের নাম দেয়া হয়েছে? এগুলো তেল নিয়মিত ব্যবহার করলে দ্রুত পড়ে যাওয়া চুল গজাতে সাহায্য করবে।
নারকেল তেল: চুলকে পুষ্টি যোগায় এবং মাথার ত্বককে ময়শ্চারাইজ করে। এতে থাকা লরিক অ্যাসিড চুলের প্রোটিনকে শক্তিশালী করে।
ক্যাস্টর অয়েল: ক্যাস্টর অয়েলে রিসিনোলিক অ্যাসিড থাকে। এই তেল নিয়মিত ব্যবহারের ফলে চুল লম্বা করবে। তাছাড়া এটি চুলের গোড়া শক্তিশালী করে চুলকে ঘন করে।
জলপাই তেল: জলপাই তেলে ভিটামিন ই এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে যা চুলকে ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
আয়ুর্বেদিক তেল: ব্রাহ্মী, আমলা, নিম ইত্যাদি উপাদানে তৈরি আয়ুর্বেদিক তেল মাথার ত্বকের সমস্যা দূর করে এবং চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়।
অন্যান্য তেল: বাদাম তেল, সরিষার তেল, রোজমেরি তেল ইত্যাদিও চুলের যত্নে ব্যবহৃত হয়।
সবশেষে: মনে রাখবেন, ছেলে ও মেয়েদের চুল পড়ার কারণ থেকে মুক্তি পেতে কোন খাবার, ভিটামিন, শ্যাম্পু এবং কোনো প্রাকৃতিক তেল ব্যবহার করে এক রাতেই চুল গজানোর উপায় হতে পারে না। তাই ধৈর্য ধরে নিয়মিত এগুলো ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে।
সূত্র: Right News BD