মেছতা হলো ত্বকের একটি সাধারণ সমস্যা, যা মূলত মেয়েদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। কারণ এটি সাধারণত মুখের ত্বকে গাঢ় বাদামী বা কালো দাগের আকারে ফুটে ওঠে। মেছতার প্রধান কারণ হলো সূর্যালোক, হরমোনজনিত পরিবর্তন এবং বয়সজনিত প্রভাব। এ ধরনের সমস্যার সমাধান করতে কিছু প্রাকৃতিক উপায় ও সঠিক যত্নের প্রয়োজন। নিচে কার্যকরী কিছু মেছতা দূর করার উপায় নিয়ে আলোচনা করা হলো।
মেছতার কারণসমূহ ও দ্রুত মেয়েদের মেছতা দূর করার উপায়
মুখের মেছতা বৃদ্ধির কারণসমূহ
UV রশ্মির প্রভাব: দীর্ঘক্ষণ সূর্যের আলোতে অবস্থান করলে ত্বকের মেলানিন উৎপাদন বৃদ্ধি পায়, যার ফলে মেছতা আরও গভীর হতে পারে।
হরমোনজনিত পরিবর্তন: মহিলাদের মধ্যে বিশেষত গর্ভাবস্থায় বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণের সময় ত্বকের মেলানিন বৃদ্ধি পায়।
স্ট্রেস এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা: অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে এটির প্রভাবে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে।
গর্ভাবস্থা: গর্ভাবস্থাকালে শরীরে হরমোনের স্তর উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়, যা মুখমণ্ডল ও অন্যান্য অংশে মেছতার দাগ তৈরি করতে পারে।
জন্মনিরোধক পিল: জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল গ্রহণের ফলে হরমোনের তারতম্য ঘটে, যা মেলানিনের উৎপাদন বাড়ায় এবং ত্বকে দাগ সৃষ্টি করে।
হরমোন থেরাপি: বিভিন্ন চিকিৎসা কারণে হরমোন থেরাপি গ্রহণ করলে ত্বকের রঙে পরিবর্তন দেখা যেতে পারে, যা মেছতার কারণ হতে পারে।
বংশগত প্রভাব: পরিবারের মধ্যে মেছতার ইতিহাস থাকলে, এটি পরবর্তী প্রজন্মের মধ্যে দেখা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
পরিবেশগত ফ্যাক্টর: দূষণ এবং রোদের অতিরিক্ত সংস্পর্শ ত্বকের মেলানিনের মাত্রা বাড়িয়ে ত্বকের দাগ সৃষ্টি করে।
অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাস: অনিয়মিত খাবার, প্রক্রিয়াজাত খাবারের ব্যবহার এবং অস্বাস্থ্যকর জীবনধারা ত্বকের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
মানসিক চাপ: অতিরিক্ত মানসিক চাপ ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার কারণ হতে পারে এবং মেছতার প্রবণতা বাড়ায়।
মেছতা থেকে মুক্তির উপায়
১. তুলসী পাতা (মুখের মেছতা দূর করতে সহায়ক)
তুলসী পাতা থেকে তৈরি পেস্ট ত্বকের জন্য সহায়ক। তুলসী পাতার গুণাগুণ পেতে হলে এটির পাতা পিষে পেস্ট তৈরি করুন এবং এটি মেছতার স্থানে প্রয়োগ করুন। এটি ত্বকের ব্লিচিং বৈশিষ্ট্য এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাবলীর জন্য। সপ্তাহে দুই থেকে তিন বার এটি ব্যবহার করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
২. হলুদ (মুখের মেছতা দূর করে উজ্জ্বলতা ফেরায়)
হলুদও মেছতা দূর করতে কার্যকর। হলুদের কুরকুমিন ত্বককে উজ্জ্বলতার এবং সংক্রমণ প্রতিরোধী করতে সহায়তা করে। হলুদ গুঁড়ো এবং দুধের মিশ্রণ তৈরি করে তা মেছতার স্থানে প্রয়োগ করলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে ভাল ফলাফল দেখা যেতে পারে।
৩. ওটমিল (ত্বকের মৃত কোষ দূর করতে সাহায্য করে)
ওটমিল ত্বকের জন্য একটি আদর্শ স্ক্রাব হিসাবে কাজ করে। ওটমিলকে পানির সঙ্গে মিশিয়ে একটি স্ক্রাব তৈরি করুন এবং সে স্ক্রাবটি মেছতার স্থানে লাগান। এটি ত্বককে মসৃণ করতে এবং মৃত ত্বক কোষ অপসারণ করতে সাহায্য করবে। সপ্তাহে একবার ব্যবহার করা যেতে পারে।
৪. লেবুর রস (ত্বকের কালো দাগ করতে সহায়ক)
লেবুর রস একটি প্রাকৃতিক ব্লিচ হিসাবে কাজ করে। এটি মেছতাকে হালকা করতে সহায়তা করে এবং ত্বকের বিভিন্ন দাগ দূর করার প্রক্রিয়ায় সহায়ক। তবে, লেবুর রস প্রয়োগের পর সানস্ক্রীন ব্যবহার গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি ত্বককে সূর্যের আলোতে বেশি সংবেদনশীল করে তুলতে পারে।
৫. অ্যালোভেরা জেল
অ্যালোভেরা ত্বকের কোষ পুনরুদ্ধারে সাহায্য করে এবং এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন মেছতা কমাতে কার্যকরী।
ব্যবহার: অ্যালোভেরা জেল সংগ্রহ করে মেছতার স্থানে লাগান এবং ১৫-২০ মিনিট পর পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারেন।
৬. মধু ও দারুচিনি
মধুতে আছে অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ, যা ত্বকের দাগ ও মেছতা কমাতে সহায়ক। দারুচিনি রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে ত্বক উজ্জ্বল করে।
ব্যবহার: ১ টেবিল চামচ মধুর সঙ্গে ১/২ চা চামচ দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে মেছতার স্থানে লাগান এবং ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২ বার ব্যবহার করতে পারেন।
৭. টমেটোর রস
টমেটোতে লাইকোপিন থাকে, যা ত্বকের মেছতা কমাতে সাহায্য করে এবং ত্বককে উজ্জ্বল করে।
ব্যবহার: টমেটো কেটে তার রস সংগ্রহ করুন এবং মেছতার স্থানে লাগান। ১৫ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ৩-৪ বার এটি ব্যবহার করতে পারেন।
৮. বেসন ও দুধ
বেসন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে এবং দুধ ত্বককে উজ্জ্বল করে। এই মিশ্রণ ত্বকের মেছতা কমাতে সাহায্য করে।
ব্যবহার: ২ টেবিল চামচ বেসনের সঙ্গে ২-৩ টেবিল চামচ দুধ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন এবং মেছতার স্থানে লাগান। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে ২-৩ বার ব্যবহার করুন।
মেছতা প্রতিরোধে অতিরিক্ত কিছু পরামর্শ
- বাইরে বের হলে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
- ত্বক পরিষ্কার ও হাইড্রেটেড রাখুন।
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান।
- স্ট্রেস এড়ানোর চেষ্টা করুন, কারণ এটি ত্বকের সমস্যার একটি প্রধান কারণ।
সবশেষে: আপনার মুখের মেছতা দূর করতে হলে প্রথমে ধৈর্য এবং নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন হবে। উপরোক্ত প্রাকৃতিক উপায়গুলো মেয়েদের মেছতা দূর করার জন্য সহায়ক হতে পারে। কিন্তু এটি ব্যবহারে সংবেদনশীলতা অনুভূত হলে অবশ্যই ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিন।
সূত্র: Right News BD