মাশরুম অতি সু-স্বাদু একটি খাবার। তাই মাশরুম বর্তমানে জনপ্রিয় একটি খাবার হয়ে উঠেছে। মাশরুম এর উপকারিতা ও পুষ্টিগুণ অনেক আছে। মাশরুম এ থাকা প্রোটিন আমাদের দেহের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
শরীর সুস্থ্য রাখতে মাশরুম এর উপকারিতা
মাশরুম এ প্রচার পরিমাণ খনিজ উপাদান, এনজাইম ও আঁশ থাকে এবং এটিতে শর্করা ও চর্বির পরিমাণ কম থাকে বলেই এটিতে শর্করা, আমিষ, ভিটামিন ও মিনারেলের সমন্বয় করে, তাই মাশরুমকে ‘‘সুপার ফুড’’ ও বলা হয়।
মাশরুম এ পলিফেনল (Polyphenols) ও সেলেনিয়াম (Selenium) নামের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। মানুষের শরীরের জন্য এটি অত্যাবশ্যকীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সালফার থাকে।
প্রোটিনে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ অল্প থাকায় মাশরুম এর কোলেস্টেরল ভাঙার উপাদান-লোভস্ট্রাটিন, অ্যান্টাডেনিন, ইরিটাডেনিন ও নায়াসিন শরীরের কোলেস্টেরলস জমতে পারে না। সে জন্য মাশরুম খাওয়ার ফলে শরীরে জমানো কোলেস্টেরল ধীরে ধীরে নষ্ট হয়।
চলুন জেনে নেই মানবদেহের জন্য মাশরুম এর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে-
দাঁত ও হাড়ের গঠনে মাশরুম
মাশরুম এ প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস ও ভিটামিন-ডি রয়েছে। যা বাচ্চাদের দাঁত ও হাড় মজবুত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে
মাশরুম এ রয়েছে ইরিটাডেনিন,লোভস্ট্রাটিন, অ্যান্টাডেনিন। যা শরীরের কোলেস্টেরল কমাতে গুরুদায়িত্ব পালন করে। নিয়মিত মাশরুম খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকারী।
ইমিউনিটি সিস্টেম বৃদ্ধি করতে
আমাদের শরীরে এন্টিবডি তৈরি হওয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি আমাদের শরীরে তৈরি না হলে শরীরে বিভিন্ন অসুখের বাসা বাঁধে। মাশরুম পলিফেনল ও সেলেনিয়ামের উৎসে অনেক এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকে।
যেগুলোর ভেষজ গুন জীবন ঘাতী কিছু রোগ যেমন- স্ট্রোক, স্নায়ুরোগ ও ক্যান্সার এর থেকে শরীরকে সুরক্ষা দেয়।এতে থাকা সালফার ও ইমিউনিটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
টিউমারের আশঙ্কা কমায়
বর্তমান সময়ে মেয়েদের প্রায়ই স্তন টিউমার বা জরায়ুর টিউমার ধরা পড়ছে। গাইনকোলজিস্ট রাও এটি নিয়ে চিন্তিত। অপারেশন এর ঝুঁকি এড়াতে তাই খাওয়া শুরু করুন মাশরুম। কারণ এর বেটা ডি, ল্যাম্পেট্রোল, টারপিনওয়েড ও বেনজোপাইরিন উপাদান ক্যান্সার ও টিউমার এর সম্ভাবনা প্রতিহত করে দেয়।
প্রসূতি ও সন্তানদের প্রতিপালনে
মাশরুম এ থাকা ভিটামিন ও মিনারেল আমাদের শারীরের কাজকে সচল রাখে। গর্ভবতী মায়েরা নিশ্চিন্তে মাশরুম খেতে পারেন, কারণ এতে আছে নিয়াসিন এস্কর্বিক এসিড যা গর্ভস্থ শিশুর শরীরে লোহিতকনিকা বাড়িয়ে দিয়ে প্রসব হয়ে ওঠে সহজ। সে কারণেই নিয়মিত মাশরুম খাওয়া আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকার করে।
মাশরুম এর পুষ্টিগুণ
প্রতিদিন আমরা যে সব খাবার খাই, তুলনামূলকভাবে মাশরুম এর পুষ্টিগুণ সেগুলোর চেয়ে বেশি। তাই মাশরুম শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা করার পাশাপাশি আমাদের শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই সহায্য করে। মাশরুম আমাদের শরীরের জন্য এমাইনো এসিডের মধ্যে প্রত্যেকটিই বিদ্যমান।
মাশরুমে প্রোটিনে ভরপুর। তাই মাশরুম এর কোন প্রকার ক্ষতিকর চবি নেই। সে জন্য নিয়মিত মাশরুম খেলে আমাদের মেদভূড়ি, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ জনিত সম্যসার মত জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে যে প্রতি ১০০ গ্রাম মাশরুম-এ ২৫-৩৫ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়, ৫৭-৬০ গ্রাম ভিটামিন ও ৫-৬ গ্রাম মিনারেল, শর্করা, ৪-৬ গ্রাম উপকারী চর্বি পাওয়া যায়।
মাশরুম এ প্রায় ১০-২৮% আঁশের পরিমাণ থাকে। আঁশের এই পরিমাণটি অন্যান্য খাবারের চেয়ে অনেক বেশী। তাছাড়া শুকনো মাশরুমে ৫৭-৬০% ভিটামিন ও মিনারেল থাকায় আমাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার ক্ষেত্রে খুবই কার্যকরী।
বিশেষ করে মাশরুম ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। মাশরুম-এর রয়েছে ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে। এসব উপাদান আমাদের দেহকে সুস্থ্য রাখতে বিশেষ ভুমিকা রাখে।
মাশরুম এর বহুবিদ গুনাগুণ
- ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও এ্যাজিমা রোগ নিরাময়ক।
- ক্যান্সার, টিউমার, হৃদরোগ, ডেঙ্গু জ্বর, অর্শ্বরোগ ও এইডস প্রতিরোধক।
- জন্ডিস রোগের প্রতিষেধক।
- মাশরুম মেদভূড়ী কমাতে, রক্ত স্বল্পতা দূর করতে এবং এলার্জি রোগের মহৌষধ হিসেবে কাজ করে।
- মাথার চুলপড়া, চুলপাকা রোধ করতে দারুণ কাজ করে।
- বয়স্কদের আদর্শ আমিষ, বাচ্চা ও গর্ভবতী মায়ের মাশরুম একটি আদর্শ খাবার।
- কোষ্টকাঠিন্য ও বদ হজম দূর করে।
- দাঁত ও হাড় গঠনে সহায়তা করে।
- দাঁতের স্বাস্থ্য গঠনে সাহায্য করে।
- রূপচর্যায় অতুলনীয় ও চর্ম রোগ নিরাময়ে ভিষন উপকারী।
- মাশরুম সর্বোপরী শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
উপরে উল্লেখিত মাশরুম এর উপকারিতা পেতে হলে নিয়মিত খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
সূত্র:- Right News BD