আপনী যখন কর্ম জীবনে ১৫ দিন বা ১ মাসের লম্বা ছুটি পাবেন, তখনই দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করার সেরা ৫ মরুভূমি জায়গায় যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেন। তবে ছুটির দিনে আনন্দ উপভোগ করার জন্য আমরা বেশিরভাগই সমুদ্র কিংবা পাহাড়ে ভ্রমণ করার চিন্তা করে থাকি। কিন্তু মরুভূমিতে যাওয়ার কথা কখনোই চিন্তা করি না। কারণ আমরা প্রায়ই ভুলে যাই যে মরুভূমি ভ্রমণে রহস্যময় এবং আশ্চর্য্য প্রাকৃতিক সম্পর্কে জানার সহজ লভ্য হতে পারে। মরুভূমি ভ্রমণ করা কিছুটা কঠিন হলেও, ‘আপনি যদি সাহসী হন’ তাহলে মরুভূমি ভ্রমণ করার চেষ্টা করতে পারেন।
আপনি আপনার পরবর্তী ছুটির পরিকল্পনা অনুযায়ী ভ্রমণ করার সেরা ৫ মরুভূমি যাওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন।
বিশেষ করে এখানে থাকা ভ্রমণ করার সেটা ৫ মুরুভূমি ভ্রমণে যাওয়ার আগে, প্রথমে প্রত্যেক মরুভূমির ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিন। তাহলে সে সব মরুভূমিতে ভ্রমণে গেলে কোন রকম সমস্যার সৃষ্টি নাও হতে পারেন।
৫টি মরুভূমিগুলো হচ্ছে:
- গোবি মরুভূমি
- থর মরুভূমি
- কালো সাদা মরুভূমি
- নামিব মরুভূমি ও
- সাহারা মরুভূমি
১। গোবি মরুভূমি
গোবি মরুভূমি এশিয়ার বৃহত্তম মরুভূমি। এটি আপনার পরবর্তী চীন এবং মঙ্গোলিয়ার দক্ষিণাংশ জুড়ে রয়েছে। এছাড়াও এটির দৈর্ঘ্য ১,৫০০ কিলোমিটার (৯৩২) এবং প্রস্থ ৮০০ কিলোমিটার (৪৯৭ মাইল) জুড়ে বিসত্বত যা কিনা ভ্রমণের জন্য সেরা অংশ বিশেষ হতে পারে। এটি বিশ্বের ৩য় বৃহত্তম মরুভূমি, আয়তনে ১২ লক্ষ ৯৫ হাজার বর্গ কিলোমিটার।
- গোবি মরুভূমি অন্যান্য মরুভূমি থেকে একটু ভিন্ন ধরণের। কারণ এটি তুলনামূলকভাবে কম বালুকাময় এবং কঠিন শিলা দ্বারা আবৃত। এই মরুভূমিতে প্রায় ৩৩টি উপ-মরুভূমি রয়েছে, যার প্রত্যেকটি নিজস্ব নিখুঁত প্রাকৃতিক ভূ-সংস্থানের জন্য পরিচিত। আপনি যদি সেখানে ভ্রমণ করতে যান তবে ‘গালবিন গোবি’ মরুভূমিতে যাবেন না। মঙ্গল গ্রহের মতো লাল মাটি এবং উট আপনার বিচরণের লালসা মেটাবে।
২। থর মরুভূমি
ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে এই মরুভূমি অবস্থিত। এটি একটি বিরাট আকারের শুষ্ক মরু অঞ্চল। এর আয়তন প্রায় ২ লক্ষ বর্গকিলোমিটারের চেয়েও বেশি। এটি সাধারণত বিশ্বের ৭ম বৃহত্তম মরুভূমি বলা হয়। এই মরুভূমিটির বেশির ভাগ অংশই ভারতের রাজস্থান অঙ্গরাজ্যের মধ্যে পড়েছে।
এছাড়াও ভারতের হরিয়ানা এবং পাঞ্জাব রাজ্যের ঠিক দক্ষিণভাগে ও গুজরাতের উত্তরভাগে এই থর মরুভূমির বৃহৎ প্রসারিত হয়েছে। পাকিস্তানের সিন্ধ প্রদেশের পূর্ব অংশ জুড়ে পাঞ্জাব প্রদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অংশে প্রসারিত হয়েছে। এছাড়াও পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে চোলিস্তান নামের অন্য একটি মরুভূমি থর মরুভূমির সাথে মিলিত হয়েছে।
- আপনি যদি এসব মরুভূমিতে বেশি ভ্রমণ করতে না চান? ভ্রমণের জন্য থর মরুভূমি আপনার জন্য বেশ ভালো একটি জায়গা হতে পারে। ভ্রমণের জন্য এই থর মরুভূমি উষ্ণ, তাই এটি পুরো পরিদর্শন করতে কোন ভাইবেই মিস করবেন না! এই মরুভূমিতে ভ্রমণ করলে আপনাকে কেবল মরুভূমির দৃশ্যে নিমজ্জিত করবে না, বরং আপনাকে বিরল নীলগাই ও রাজস্থানী সংস্কৃতি পর্যবেক্ষণ করার সুযোগও এনে দেবে। থর মরুভূমিতে ভ্রমণ করতে আপনাকে পাহাড়, উট, বালির টিলা এবং আরও অনেক কিছুর সংমিশ্রণের সাথে সাহসিকতার অনুভূতি দেবে। এই কারণে, ১ দিনের ভ্রমণে যাওয়ার পরিবর্তে, আপনি কমপক্ষে ২ থেকে ৪ দিনের ভ্রমণের পরিকল্পনা করতে পারেন।
৩। কালো সাদা মরুভূমি
- আপনি যদি মিশরে যান তাহলে কালো সাদা মরুভূমি দেখার সুযোগ কখনোই মিস করবেন না। কারণ এর নাম থেকে বোঝা যায়, মরুভূমির কিছু অংশ কালো বালি এবং আর এক অংশ সাদা বালি দ্বারা বেষ্টিত। জায়গাটিতে অনেক বছর আগে পরিত্যক্ত স্ফিংস, মানুষের মূর্তি এবং অন্যান্য জিনিস দেখা যায়। ফলস্বরূপ আপনাকে একটি যাদুঘর ভ্রমণ করার মত বিশেষ অভিজ্ঞতার মতো অনুভব করতে পারেন।
৪। নামিব মরুভূমি
নামিব মরুভূমি দক্ষিণ আফ্রিকার একটি উপকূলবর্তী মরুভূমি। নামিব অ্যাঙ্গোলা, নামিবিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল বরাবর ২০০০ কিলোমিটার (১২০০ মাইল) পর্যন্ত বিস্তৃত। অ্যাঙ্গোলার কারুনজাম্বা নদী থেকে নামিবিয়া ও পশ্চিম কেপিতে ওলিফ্যান্টস নদী পর্যন্ত দক্ষিণে এটি প্রসারিত। নামিবের উত্তর-পশ্চিম অংশ, যা অ্যাঙ্গোলা-নামিবিয়া সীমান্ত থেকে প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার (২৮০ মাইল) প্রসারিত। এই মরুভূমিটি ম্যাকাডিস ডেসার্ট নামে পরিচিত। এর দক্ষিণ অংশের পার্শ্ববর্তী মরুভূমি হলো কালাহারি। আটলান্টিক উপকূলের পূর্বদিকে, নামিব মরুভূমির উচ্চতা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায়, যা কিনা গ্রেট এসকর্পমেন্টের পাদদেশ থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার(১২০ মাইল) পর্যন্ত প্রসারিত।
- আপনি ভ্রমণের জন্য এই নামিব মরুভূমি ছোট মনে হলেও এই মরুভূমিকে বিশ্বের প্রাচীনতম মরুভূমি বলে মনে করা হয়। কারণ উপকূলীয় মরুভূমি হওয়ার জন্য আপনার যে সব অভিজ্ঞতার প্রয়োজন হবে যা অন্য মরুভূমির মতো নয়। এই মরুভূমিতে হাতিসহ অনেক বন্য প্রাণী দেখা পাওয়া যায়। আপনি ভাগ্যবান হলে, ফার সিলের দর্শন মিলতে পারে। মরুভূমির লাল টিলার কথা জেনে নেয়াটা জরুরী। এগুলো সাধারণত ৩৫০ মিটার পর্যন্ত উচ্চ হতে পারে। সব মিলিয়ে, নামিব মরুভূমি ভ্রমণ করলে যে আনন্দ দেবে তা অন্যান্য মরুভূমি থেকে এ রকম আনন্দ উপভোগ করতে পারবেন না।
সর্বশেষ যে মরুভূমি:
৫। সাহারা মরুভূমি
ভ্রমণ করার সেরা ৫ মরুভূমি সেরা মরুভূমির মধ্যে সাহারা মরুভূমি বিশ্বের মধ্যে কোন অংশে কম নয়। তবে সাহারা মরুভূমি বৃহত্তম গরম এবং অ্যান্টার্কটিকা ও আর্কটিকের পরেই বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম মরুভূমি। এই মরুভূমিটি মিশর, মরক্কো, আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, লিবিয়া, চাদ, সুদান, নাইজার, মালি মৌরিতানিয়া প্রভৃতি দেশ জুড়ে বিস্তৃত। এর আয়তন প্রায় ৯০ লাখ বর্গ কিলোমিটার (৩৬ লাখ বর্গমাইল)।
সর্বপরী মরুভূমিটি অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক। এছাড়াও বছরে বৃষ্টিপাতের গড় ৩ ইঞ্চির একটুও বেশি হয় না। সেখানে দিনে প্রচন্ড গরম ও রাতে ঠান্ডা আবহাওয়া (প্রায় ৪° সেলসিয়াস) থাকে। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে কখনো পাহাড়ের চূড়ায় বরফও জমতে দেখা যায়। এছাড়াও শীতকাল ও গ্রীষ্মকালে এর তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত ওঠানামা করতে থাকে। এটি সাধারণত লিবিয়ার আল-আজিজিয়া পৃথিবীর উষ্ণতম স্থান।
এই মরুভূমির কিছু কিছু জায়গায় ঘাস সহ ছোট গাছ জন্মায়। এছাড়াও সাপ, গিরগিটি সহ বিভিন্ন জাতের প্রাণীর বসবাস রয়েছে। সেখানে যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য উট ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও এখানে উটকে ‘মরুভূমির জাহাজ’ বলা হয়। এগুলো প্রাণী ছাড়াও এখানে ৭০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে আর ৯০ প্রজাতির পাখি, ১০০ প্রজাতির সরীসৃপ প্রাণীর বসবাস রয়েছে।
- আপনি যদি ভ্রমণের কথা মাথায় আনেন তাহলে সাহারা মরুভূমির নামটাই সবার আগে চলে আসবে। তবে মনে রাখবেন, এটি বিশ্বের উষ্ণতম মরুভূমি। তাই আবহাওয়া কিছুটা সহনীয় হলে বসন্ত বা শরৎকালে সাহারা মরুভূমিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করা ভালো। মরুভূমির সাফারিতে বালির টিলার ওপর দিয়ে গাড়ি চালালে মনে হতে পারে যে কোনো মুহূর্তে গাড়িটি বিধ্বস্ত হবে! তবে এটি আপনাকে অ্যাডভেঞ্চারের আনন্দ দেবে। তাপমাত্রা কিছুটা অপ্রীতিকর মনে হলেও জায়গাটি আপনাকে মনমুগ্ধ করবে।
(আপনার ‘ভ্রমণ করার সেরা ৫ মরুভূমি’ ভ্রমণ যাত্রা শুভ হোক)
‘‘ধন্যবাদ’’
সূত্র:- Right News BD