সুন্দরবন দশ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা বাংলার দর্শনীয় স্থান। তাছাড়া ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পেয়েছে। সুন্দরবন শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বন্যপ্রাণীর জন্যও বিখ্যাত। সুন্দরবনের প্রতিটি অংশ যেন রহস্যে ঘেরা। আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম, তখন নৌকায় চড়ে গহীন বনের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য দেখেছি। তাছাড়া রঙ বেরঙ পাখির ডাক, সাথে ঘন জঙ্গলের শীতল বাতাস—সব মিলিয়ে এক অসাধারণ অভিজ্ঞতা!
সুন্দরবন ভ্রমণ যেন বাংলার দর্শনীয় স্থান ঘুরে দেখার চমৎকার অভিজ্ঞতা
কীভাবে সুন্দরবন ভ্রমণ করবেন?
দর্শনীয় স্থান সুন্দরবনে যাওয়ার জন্য প্রথমে আপনাকে খুলনা বা মংলা বন্দর পর্যন্ত যেতে হবে। ঢাকা থেকে খুলনায় ট্রেন, বাস, কিংবা বিমানযোগে যাওয়া যায়। এরপর মংলা বা খুলনা থেকে নৌকায় সুন্দরবনের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করা যায়।
- ঢাকা থেকে খুলনা: ট্রেনে যেতে পারেন (সুন্দরবন এক্সপ্রেস), বাসেও যাওয়া যায়।
- খুলনা থেকে মংলা: বাস বা ট্যাক্সি পাওয়া যায়।
- মংলা থেকে সুন্দরবন: এখানে নৌকা বা ট্রলার ভাড়া নিয়ে বন ঘুরতে পারবেন।
সুন্দরবনের দর্শনীয় স্থান
সুন্দরবনের করমজল পর্যটন কেন্দ্র
আমি যখন করমজল গিয়েছিলাম, তখন সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রাণী কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। এটি কুমির প্রজনন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। ছোটখাট ট্রেকিংয়ের জন্যও এটি ভালো জায়গা।
হারবাড়িয়া ইকো-ট্যুরিজম কেন্দ্র
যারা প্রকৃতিপ্রেমী, তাদের জন্য এটি অসাধারণ জায়গা।
এখানে কাঠের ওয়াকওয়ে দিয়ে বনের মধ্যে হেঁটে যেতে পারবেন। চারপাশের নির্জনতা ও সবুজ প্রকৃতি মন ভালো করে দেবে।
দুবলার চর ও হিরণ পয়েন্ট
সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ দুবলার চর, যেখানে শীতকালে হাজার হাজার অতিথি পাখি আসে। এটি বাঘ ও হরিণ দেখার জন্যও উপযুক্ত স্থান। হিরণ পয়েন্টেও দারুণ সুন্দর প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখতে পারবেন।
নীলকমল ও টাইগার পয়েন্ট
আমি যখন এই জায়গায় গিয়েছিলাম, তখন মনে হয়েছিল—এটি যেন বাঘের রাজ্য! এখানে বাঘের পায়ের ছাপ ও নানা বন্যপ্রাণীর চিহ্ন দেখা যায়।
সুন্দরবনে কী খাবেন ও কোথায় থাকবেন?
খুলনায় বা মংলায় থাকা-খাওয়ার ভালো হোটেল আছে।
বন বিভাগের অনুমোদিত রিসোর্ট ও রেস্ট হাউজে থাকতে পারেন।
ট্রলারে বা নৌকায় থাকার ব্যবস্থাও আছে।
খাবারের মধ্যে খুলনার বিখ্যাত চুই ঝাল মাংস ট্রাই করতে পারেন। এছাড়া এখানে সামুদ্রিক মাছ ও নানা ধরনের দেশি খাবার পাওয়া যায়।
সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য কিছু জরুরি পরামর্শ
- অনুমতি নিন: সুন্দরবনে প্রবেশের জন্য বন বিভাগের অনুমতি নিতে হবে।
- সতর্ক থাকুন: বন্যপ্রাণী ও প্রাকৃতিক বিপদের কথা মাথায় রেখে চলাফেরা করুন।
- গাইড নিয়ে যান: সুন্দরবন অনেক বড়, তাই পথ হারানোর আশঙ্কা থাকে। গাইড সঙ্গে রাখলে সুবিধা হবে।
- প্রকৃতির ক্ষতি করবেন না: সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রাণীদের যেন কোনো ক্ষতি না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখুন।
বাংলার দর্শনীয় স্থান নিয়ে শেষ কথা
সুন্দরবন শুধু বাংলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম নয়, এটি প্রকৃতির এক অপার বিস্ময়। আমি যখন সেখানে গিয়েছিলাম, তখন প্রকৃতির সৌন্দর্য, নির্জনতা, আর বন্যপ্রাণীর উপস্থিতি আমাকে মুগ্ধ করেছিল।
আপনারা যদি প্রকৃতি ভালোবাসেন এবং বন্যপ্রাণী দেখতে চান, তাহলে সুন্দরবন ভ্রমণ করার পরিকল্পনা অবশ্যই আপনার তালিকায় রাখা উচিত।
আপনার কি সুন্দরবন ঘোরার অভিজ্ঞতা আছে? কমেন্টে জানাতে ভুলবেন না।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
উত্তর: সুন্দরবনে সাধারণত উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়া থাকে। সেখানে শীতকালে আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে, তাই অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি ভ্রমণের জন্য সেরা সময়।
উত্তর: অনুমোদিত নৌকা ও ট্রলারে চলাচল করুন। বনের গভীরে একা না যাওয়ার চেষ্টা করুন। বন বিভাগের নির্দেশনা মেনে চলুন।
উত্তর: সুন্দরবন বাঘের জন্য বিখ্যাত হলেও সাধারণত দিনে খুব বেশি বাঘ দেখা যায় না। তবে ভাগ্য ভালো থাকলে নীলকমল, টাইগার পয়েন্ট, কিংবা হিরণ পয়েন্টে বাঘের পায়ের ছাপ বা বাঘ দেখতে পাওয়া যায়।
উত্তর: হালকা পোশাক, ক্যাপ ও সানগ্লাস। মশার স্প্রে বা ক্রিম। ক্যামেরা ও পাওয়ার ব্যাংক। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও খাবার।
উত্তর: বাংলায় আরও অনেক দর্শনীয় স্থান আছে, যেমন— (১) পানাম নগর, নারায়ণগঞ্জ (২) কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত (৩) সাজেক ভ্যালি, রাঙামাটি (৪) জাফলং, সিলেট (৫) ষাট গম্বুজ মসজিদ, বাগেরহাট।
সূত্র: Right News BD