পেটে গ্যাসের সমস্যা কেন হয়? আজকের দ্রুত গতির জীবন যাপনে মানুষের খাদ্যাভ্যাস ক্রমাগত পরিবর্তন হচ্ছে। অনেকেই চর্বি জাতীয় সহ চিনি এবং তেলে ভরপুর খাবার খেয়ে থাকেন, যা তাদের পেটের সমস্যা সৃষ্টি করে।
হজমজনিত সমস্যা এবং অন্যান্য রোগ কেবল প্রাপ্তবয়স্কদের নয়, বরং শিশু এবং বয়স্কদেরও প্রভাবিত করে।
গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টে রয়েছে খাদ্যনালী, পেট এবং অন্ত্র। খাদ্যনালী খাদ্যকে পেট ও অন্ত্রে পাঠায় যেখানে সেগুলো ছোট উপাদানে ভেঙে যায় যাতে প্রয়োজনীয় পুষ্টি শোষিত হয়।
অধিকাংশ মানুষ আছে যাদের পেটে গ্যাসের সমস্যা দেখা দেয়। তাদের ক্ষেত্রে নিচে থাকা সম্যাসার উপর নির্ভর করে ওষুধ সেবন করে জীবনধারার পরিবর্তনের মাধ্যমে আরাম পেতে পারেন।
পেটে গ্যাসের সমস্যা
গ্যাসের সমস্যা কী, গ্যাসের সমস্যার কারণ, গ্যাসের সমস্যার লক্ষণ
পেটে গ্যাসের সমস্যা নিরাময়ে ঘরোয়া উপায়
গ্যাসের সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার
যে গ্যাসের সমস্যাগুলি তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন
গ্যাসের সমস্যার চিকিৎসা
কখন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের কাছে যাবেন?
কীভাবে গ্যাসের সমস্যা স্থায়ীভাবে নিরাময় করবেন?
গ্যাসের সমস্যা কি লিভারের সাথে সম্পর্কিত?
গর্ভাবস্থায় গ্যাস কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
পেটে গ্যাসের সমস্যা নিরাময়ে ঘরোয়া উপায়
রাতে গ্যাস থেকে বাঁচার উপায় কী?
কীভাবে গ্যাসের সমস্যার নিয়ন্ত্রণ করবেন?
গ্যাসের সমস্যা কী
গ্যাস হজম প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ। শরীর অতিরিক্ত গ্যাস বেলচিং বা ফ্ল্যাটাসের মাধ্যমে (গ্যাস বের করা) দূর করে। গ্যাসের কারণে ব্যথা হতে পারে যখন তা আটকে যায় বা ঠিকমতো হজমতন্ত্রে চলাচল করে না। কিছু খাবারের কারণে ব্যথা বেড়ে যেতে পারে।
সাধারণত, গ্যাসের ফলে হওয়া ব্যথা জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
গ্যাসের সমস্যার কারণ
গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবারসমূহ:
- শিম এবং মটর (ডালজাতীয় খাবার)
- দীর্ঘস্থায়ী অন্ত্রের রোগ
- ক্ষুদ্রান্তে ব্যাকটেরিয়ার অতিরিক্ত বৃদ্ধি
- খাদ্য অসহিষ্ণুতা
- কোষ্ঠকাঠিন্য
গ্যাসের সমস্যার লক্ষণ
গ্যাসজনিত সমস্যার কিছু লক্ষণ হলো:
- বেলচিং করা
- গ্যাস ছাড়া
- পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্প বা গিঁট বাঁধা অনুভূতি
- পেট ফোলা
- পেটের আকার বৃদ্ধি – স্ফীততা
গ্যাস ছাড়ানো অস্বস্তিকর বা বিব্রতকর হলেও, এটি হজম প্রক্রিয়ার স্বাভাবিক অংশ। গড়ে একজন ব্যক্তি দিনে ২০ বার গ্যাস ছাড়েন। খাওয়ার সময় বা খাওয়ার পরপরই বেলচিং হওয়া স্বাভাবিক।
পেটে গ্যাস কীভাবে তৈরি হয়?
যখন একজন ব্যক্তি খাওয়া বা পান করার সময় বাতাস গিলে ফেলেন, তখন গ্যাস উৎপন্ন হয় যা বেলচিং করার সময় বের হয়।
যখন ব্যাকটেরিয়া কার্বোহাইড্রেট, ফাইবার, স্টার্চ এবং চিনি হজম না হয়ে ক্ষুদ্রান্তে থেকে যায়, তখন গ্যাস তৈরি হয়। এর কিছু অংশ ব্যাকটেরিয়া গ্রহণ করে, বাকিটা মলদ্বার দিয়ে বের হয়।
গ্যাসের সমস্যার ঘরোয়া প্রতিকার
পেটে গ্যাস প্রতিরোধের উপায়:
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করুন
- কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন
- ঘরের তাপমাত্রার পানীয় পান করুন
- গ্যাস সৃষ্টিকারী খাবার এড়িয়ে চলুন
- কৃত্রিম মিষ্টি এড়িয়ে চলুন
- খাওয়ার সময় ধীরে ধীরে খাবেন
- চুইংগাম, ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রব্য পরিহার করুন
- শারীরিক কার্যকলাপ বৃদ্ধি করুন
যে গ্যাসের সমস্যাগুলি তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন
হজম একটি প্রক্রিয়া যা অনেক অঙ্গের সাথে জড়িত। গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যাগুলি এবং রোগগুলো এক বা একাধিক অঙ্গের উপর প্রভাব ফেলতে পারে। অ্যাপেন্ডিসাইটিস, প্যানক্রিয়াটাইটিস, আলসার, এসিডিটি ইত্যাদি হল কিছু রোগ যা জিআই ট্র্যাক্টকে প্রভাবিত করে। কিছু সমস্যার কারণে অন্ত্রের সমস্যাও হতে পারে, যা অবিলম্বে চিকিৎসা না করলে জীবনহানিকর হতে পারে।
গ্যাসের সমস্যার চিকিৎসা
গ্যাসের ওষুধসমূহ:
- আলফা-গ্যালাক্টোসিডেজ
- ল্যাকটেজ সাপ্লিমেন্ট
- সিমেথিকোন
- অ্যাক্টিভেটেড চারকোল
কখন গ্যাস্ট্রোএন্টারোলজিস্টের কাছে যাবেন?
গ্যাসের সমস্যার লক্ষণ যদি নিজে থেকেই বা ওষুধের সাহায্যে চলে যায়, তাহলে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে, গ্যাসের সমস্যার লক্ষণগুলো ধীরে ধীরে গুরুতর হয় এবং দৈনন্দিন জীবন যাপনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টির পাশাপাশি অন্যান্য লক্ষণের সাথে প্রকাশ পায়।
কীভাবে গ্যাসের সমস্যা স্থায়ীভাবে নিরাময় করবেন?
গ্যাস হজম শক্তি বৃদ্ধির প্রক্রিয়ার একটি স্বাভাবিক অংশ হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। এটি স্থায়ীভাবে নিরাময় করা সম্ভব নয় তবে নিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারা মেনে চললে গ্যাসের সমস্যা কমানো যায়।
গ্যাসের সমস্যা কি লিভারের সাথে সম্পর্কিত?
কিছু পুষ্টির ম্যালঅ্যাবসর্পশন এবং/অথবা ম্যালডাইজেশন গ্যাস সৃষ্টি করতে পারে, যা মদ্যপানের লিভার রোগ এবং কোলেস্ট্যাটিক লিভার রোগে (যেমন প্রাইমারি বিলিয়ারি কোলাংজাইটিস) প্রায়ই দেখা যায়।
- রক্তাক্ত মলত্যাগ
- ডায়রিয়া
- স্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য
- ওজন কমে যাওয়া
- মলের অভ্যাসে পরিবর্তন
- বুকে ব্যথা
- বমি
- বুক জ্বলা
এই ধরনের সমস্যায় ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
গর্ভাবস্থায় গ্যাস কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- প্রচুর পানি পান করুন
- কার্বনেটেড পানীয় পরিহার করুন
- খাদ্য ডায়েরি বজায় রাখুন
- আরও বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খান
- নিয়মিত ব্যায়াম করুন
- আরামদায়ক পোশাক পরুন
- স্ট্রেস কমান
পেটে গ্যাসের সমস্যা নিরাময়ে ঘরোয়া উপায়
- হালকা গরম পানির সাথে নিম্নলিখিত মিশ্রণ সেবন করুন
- হেঁটে নিন, যোগব্যায়াম করুন, ব্যথার স্থানে ম্যাসাজ করুন
- কার্বনেটেড পানীয় পরিহার করুন
রাতে গ্যাস থেকে বাঁচার উপায় কী?
- পানি পান বাড়ান
- ডিনারে কার্বনেটেড পানীয় এড়িয়ে চলুন
- দুগ্ধজাত দ্রব্য এড়িয়ে চলুন
- গ্লুটেন পরিহার করুন
- ক্রুসিফেরাস শাকসবজি, বিনস এবং হোল গ্রেইন কম খান
- খাওয়ার গতি নিয়ন্ত্রণ করুন
- ধূমপান ছেড়ে দিন
- সন্ধ্যায় ব্যায়াম করুন যাতে হজম সহজ হয়
কীভাবে গ্যাসের সমস্যার নিয়ন্ত্রণ করবেন?
- জাঙ্ক ফুড এড়িয়ে চলুন
- শারীরিক কার্যকলাপ বাড়ান
- নিয়মিত খাবার খান
- স্বাস্থ্যকর খাবার খান
- তামাক এবং ধূমপান পরিহার করুন
পরিশেষে:
উপরে থাকা পেটে গ্যাসের সমস্যা হওয়ার কারণ, উপসর্গ, প্রতিরোধ এবং কার্যকরী চিকিৎসার সমস্ত বিকল্পগুলি আপনার জন্য সঠিক নিরাময় হতে পারে।
সূত্র: Right News BD