পনির সিঙাড়া একটি জনপ্রিয় ভারতীয় জলখাবার , যা নিরামিষ স্টার্টার হিসেবে পরিচিত। ভাজা পেস্ট্রি দিয়ে তৈরি এই খাবারটি মশলাযুক্ত পনিরের সুস্বাদু পুরে ভরা থাকে। সিঙাড়ার রেসিপি খুবই সহজ এবং এটি রাস্তার খাবার থেকে শুরু করে পার্টির খাবার পর্যন্ত সব জায়গায় পরিবেশন করা যায়।
ছানা বা পনির, মশলাযুক্ত আলু, পুদিনা চাটনি এবং তেঁতুলের সসের সংমিশ্রণে তৈরি এই খাবারটি ডুবো তেলে ভাজা জলখাবার হিসেবে সোনালী বাদামী রঙ ধারণ করে। ত্রিভুজ পেস্ট্রির মচমচে খোলের ভিতরে সুস্বাদু পুর ভরা থাকে, যা চা-সময়ের জলখাবার হিসেবে অতুলনীয়।
পনির সিঙাড়ার ইতিহাস
ভারতীয় উপমহাদেশে পনির সিঙাড়ার উৎপত্তি । এটি মুঘল সম্রাটদের সময় জনপ্রিয়তা লাভ করে। সিঙাড়া মূলত মধ্যপ্রাচ্যের সাম্বুসার ভারতীয় সংস্করণ। সময়ের সাথে সাথে, এটি বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন রূপে তৈরি হতে শুরু করে। পনির সিঙাড়া নিরামিষভোজীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়, কারণ এটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার।
পুষ্টিগুণ
পনির সিঙাড়া শুধুমাত্র সুস্বাদু নয়, এটি পুষ্টিগুণেও ভরপুর। পনিরে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং ক্যালসিয়াম থাকে, যা শরীরের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। আলু কার্বোহাইড্রেটের ভালো উৎস, যা শক্তি জোগায়। এছাড়াও, এতে ব্যবহৃত মশলাগুলি হজমে সাহায্য করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
স্বাস্থ্যকর পনির সিঙাড়া তৈরির উপকরণ
- পনির: ২৫০ গ্রাম (ছোট টুকরা করে কাটা)
- আলু: ২০০ গ্রাম (সেদ্ধ করে চটকানো)
- পেঁয়াজ: ১টি (কুচি করা)
- আদা-রসুন বাটা: ১ চা চামচ
- কাঁচা মরিচ: ২-৩টি (কুচি করা)
- ধনে পাতা: ২ টেবিল চামচ (কুচি করা)
- জিরা গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
- ধনে গুঁড়া: ১/২ চা চামচ
- গরম মশলা: ১/৪ চা চামচ
- লবণ: স্বাদমতো
- ময়দা: ২৫০ গ্রাম
- তেল: ভাজার জন্য পরিমাণমতো
- পুদিনা চাটনি ও তেঁতুলের সস: পরিবেশনের জন্য
স্বাস্থ্যকর পনির সিঙাড়া তৈরির পদ্ধতি
১. পুর তৈরি: প্রথমে একটি প্যানে তেল গরম করে পেঁয়াজ কুচি দিন। পেঁয়াজ সোনালী বাদামী হয়ে এলে আদা-রসুন বাটা এবং কাঁচা মরিচ কুচি দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। এরপর চটকানো আলু, পনির, জিরা গুঁড়া, ধনে গুঁড়া, গরম মশলা এবং লবণ দিয়ে ভালো করে মেশান। ধনে পাতা কুচি মিশিয়ে পুর তৈরি করুন।
২. খোল তৈরি: একটি পাত্রে ময়দা, সামান্য লবণ এবং তেল মিশিয়ে জল দিয়ে মেখে ডো তৈরি করুন। ডো থেকে ছোট ছোট লেচি কেটে পাতলা করে বেলে ত্রিভুজ আকারে কেটে নিন।
৩. সিঙাড়া তৈরি: ত্রিভুজ পেস্ট্রির মধ্যে পনিরের পুর ভরে চারপাশ ভালো করে মুড়ে দিন।
৪. ভাজা: একটি কড়াইতে তেল গরম করে সিঙাড়াগুলো সোনালী বাদামী হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
৫. পরিবেশন: পুদিনা চাটনি এবং তেঁতুলের সসের সাথে পরিবেশন করুন গরম গরম পনির সিঙাড়া।
স্বাস্থ্যকর সিঙাড়া তৈরির কিছু টিপস
- তেলের পরিবর্তে এয়ার ফ্রায়ারে ভাজলে সিঙাড়া আরও স্বাস্থ্যকর হবে।
- ময়দার পরিবর্তে আটা ব্যবহার করা যেতে পারে।
- পুর তৈরিতে বিভিন্ন সবজি যোগ করা যেতে পারে, যেমন মটরশুঁটি, গাজর ইত্যাদি।
- সিঙাড়ার পুরে কাজুবাদাম বা কিসমিস যোগ করলে স্বাদ আরও বাড়বে।
- সিঙাড়া পরিবেশনের সময় পুদিনা চাটনি বা তেঁতুলের সসের সাথে পরিবেশন করলে স্বাদ আরও ভালো লাগবে।
পনির সিঙাড়ার বিভিন্ন প্রকারভেদ
- আলু পনির সিঙাড়া: এটি সবচেয়ে জনপ্রিয় প্রকারভেদ, যাতে আলু এবং পনিরের পুর ব্যবহার করা হয়।
- ভেজিটেবল সিঙাড়া: এতে বিভিন্ন সবজি যেমন মটরশুঁটি, গাজর, ফুলকপি ইত্যাদি ব্যবহার করা হয়।
- চিকেন সিঙাড়া: এটি আমিষভোজীদের জন্য একটি জনপ্রিয় বিকল্প, যাতে মুরগির মাংসের পুর ব্যবহার করা হয়।
- মাটন সিঙাড়া: এটিও আমিষভোজীদের জন্য একটি জনপ্রিয় বিকল্প, যাতে খাসির মাংসের পুর ব্যবহার করা হয়।
- মিষ্টি সিঙাড়া: কিছু অঞ্চলে মিষ্টি সিঙাড়াও তৈরি করা হয়, যাতে নারকেল এবং চিনির পুর ব্যবহার করা হয়।
বাঙালি খাবারে সিঙাড়ার গুরুত্ব
বাঙালি খাবারে পনির সিঙাড়ার জনপ্রিয়তা অপরিসীম। এটি যেকোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে পরিবেশন করা যায়। অতিথি আপ্যায়নেও পনির সিঙাড়া একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এটি বাঙালি সংস্কৃতির একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ।
কিছু সতর্কতা
- সিঙাড়া ভাজার সময় তেল যেন খুব বেশি গরম না হয়, নাহলে সিঙাড়া পুড়ে যেতে পারে।
- পুর তৈরির সময় মশলার পরিমাণ নিজের স্বাদ অনুযায়ী ঠিক রাখতে হবে।
- সিঙাড়ার খোল তৈরির সময় ময়দা ভালোভাবে মাখতে হবে, নাহলে খোল মচমচে হবে না।
কিছু সাধারণ জিজ্ঞাসা
এই সাধারণত ডুবো তেলে ভাজা হয়, তাই এটি খুব বেশি স্বাস্থ্যকর নয়। তবে, এয়ার ফ্রায়ারে ভাজলে এটি স্বাস্থ্যকর হতে পারে।
এটি তৈরি করার পর ২-৩ দিন পর্যন্ত ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়।
এটি তৈরির জন্য সয়াবিন তেল বা সরিষার তেল ব্যবহার করা যেতে পারে।
পনির সিঙাড়ার সাথে পুদিনা চাটনি এবং তেঁতুলের সস খেতে খুবই ভালো লাগে।
পনির সিঙাড়া শিশুদের জন্য একটি পুষ্টিকর খাবার, তবে এটি পরিমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
সূত্র: Right News BD