কোমর ব্যথা এখনকার সময়ে খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। অফিসে দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, ভারী জিনিস তোলা বা অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রার কারণে অনেকেই এই সমস্যায় ভুগছেন। আমিও প্রায়ই কোমর ব্যথার সমস্যায় ভুগতাম, কিন্তু কিছু সহজ অভ্যাস ও ঘরোয়া সমাধান অনুসরণ করার পর এই সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। তাই আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করব কোমর ব্যথা দূর করার ৫টি কার্যকর ও সহজ উপায় নিয়ে, যা নিয়মিত অনুসরণ করলে আপনিও আমার মত কোমর ব্যথার প্রতিকার পাবেন।
কোমর ব্যথা দূর করার ঘরোয়া প্রতিকার
হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং
অনেকেই কোমর ব্যথা হলে নড়াচড়া কমিয়ে দেন, কিন্তু এটি আরও ক্ষতি করতে পারে।
নিয়মিত হালকা ব্যায়াম ও স্ট্রেচিং করলে পেশির শক্তি বাড়ে এবং ব্যথা কমে।
কোমর ব্যথার জন্য সেরা ব্যায়াম
- ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ: চার হাত-পায়ে ভর দিয়ে পিঠকে ধনুকের মতো বাঁকিয়ে ১০-১৫ সেকেন্ড ধরে রাখুন।
- নিতম্ব ও কোমরের স্ট্রেচ: চিত হয়ে শুয়ে এক পা ভাঁজ করে অন্য পায়ের ওপর রাখুন এবং কোমর মাটিতে ঠেকিয়ে রাখুন।
- কোমরের বৃত্তাকার ঘূর্ণন (Pelvic Tilts): শুয়ে থেকে কোমরকে হালকা ওপর-নিচ করুন, এতে ব্যথা কমবে।
ব্যায়াম করতে মাত্র ১০-১৫ মিনিট সময় লাগবে, কিন্তু এর উপকারিতা অনেক বেশি!
গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া
কোমর ব্যথার তীব্রতা অনুযায়ী গরম বা ঠান্ডা সেঁক দেওয়া দারুণ কার্যকর হতে পারে।
- ঠান্ডা সেঁক: নতুন ব্যথার ক্ষেত্রে বরফের প্যাক ব্যবহার করুন, এটি প্রদাহ কমায়।
- গরম সেঁক: পুরনো বা দীর্ঘমেয়াদী কোমর ব্যথার জন্য গরম পানির ব্যাগ বা গরম তোয়ালে ব্যবহার করুন, এটি পেশিকে শিথিল করে।
আমি নিজে এই পদ্ধতিটি ব্যবহার করি, এবং এটি দ্রুত কাজ করে।
সঠিক ভঙ্গিতে বসা ও শোয়া
আমরা অনেকেই দীর্ঘক্ষণ ভুলভাবে বসে বা শুয়ে থাকি, যা কোমর ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ।
- বসে থাকলে: পিঠ সোজা রাখুন, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসুন এবং পায়ের পাতা মাটিতে সমান রাখুন।
- শুয়ে থাকলে: নরম গদি বা খুব শক্ত বিছানায় না শুয়ে মাঝারি শক্তির গদি ব্যবহার করুন। পাশ ফিরে শুলে কোমরের ওপর চাপ কম পড়ে।
একটা ভালো চেয়ার বা বালিশ ব্যবহারের মাধ্যমে আমি নিজেই কোমর ব্যথা কমাতে সক্ষম হয়েছি!
ব্যথানাশক তেল
কিছু প্রাকৃতিক তেল ব্যথা কমাতে দারুণ কার্যকর।
বিশেষ করে, সরিষার তেল, নারকেল তেল, ইউক্যালিপটাস তেল বা অলিভ অয়েল দিয়ে ম্যাসাজ করলে পেশি শিথিল হয় এবং রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
কীভাবে ব্যথানাশক তেল কিভাবে ব্যবহার করবেন?
তেল হালকা গরম করুন এবং কোমর ব্যথা হওয়া স্থানে ১০ মিনিট ধীরে ধীরে ম্যাসাজ করুন।
দিনে ১-২ বার করলে দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায়।
পর্যাপ্ত বিশ্রাম
পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিলে কোমর ব্যথা কখনোই পুরোপুরি ভালো হবে না। তাই ঘুমের সময়সীমা এবং লাইফস্টাইল পরিবর্তন করা জরুরি।
- প্রতিদিন ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমান।
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখুন, কারণ অতিরিক্ত ওজন কোমরের ওপর চাপ ফেলে।
- অনেকক্ষণ বসে থাকলে মাঝে মাঝে উঠে হাঁটুন।
আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, যখন আমি ভালোভাবে ঘুমাতে শুরু করলাম আর তখনই কোমর ব্যথা কমতে শুরু করল!
কোমর ব্যথা দূর করা নিয়ে শেষ কিছু কথা
কোমর ব্যথা থেকে মুক্তি পেতে হলে আপনাকে নিয়মিত কিছু অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। উপরের এই ৫টি সহজ উপায় যদি আপনি মেনে চলেন, তাহলে কোমর ব্যথা ধীরে ধীরে কমে যাবে।
আমি নিজে এগুলো অনুসরণ করে উপকার পেয়েছি, আপনিও চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আপনারা কোমর ব্যথা কমানোর জন্য কী কী উপায় ব্যবহার করেন? কমেন্টে শেয়ার করুন!
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
উত্তর: কোমর ব্যথার সাধারণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে—দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ভারী ওজন তোলা, ভুল ভঙ্গিতে বসা বা শোয়া, মাংসপেশির টান বা আঘাত পাওয়ার কারণেও হয়ে থাকে।
উত্তর: প্রতি ৩০-৪৫ মিনিট পর উঠে হাঁটাহাঁটি করুন, সঠিক ভঙ্গিতে বসুন, আরগোনোমিক চেয়ার ব্যবহার করুন এবং মাঝে মাঝে স্ট্রেচিং করুন।
উত্তর: কোমরের ব্যথা কমাতে পেলভিক টিল্ট, ব্রিজ এক্সারসাইজ, ক্যাট-কাউ স্ট্রেচ ও লোয়ার ব্যাক রোটেশন স্ট্রেচ উপকারী।
উত্তর: নিয়মিত ব্যায়াম করা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, ভারী ওজন তোলার সময় সতর্ক থাকা এবং সঠিকভাবে বসা ও হাঁটার অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
উত্তর: যদি কোমর ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয়, পায়ে ব্যথা ছড়িয়ে পড়ে, দুর্বলতা বা অবশভাব দেখা দেয়, বা দৈনন্দিন কাজে সমস্যা হয়, তবে দ্রুত ডাক্তার দেখানো উচিত।
সূত্র: Right News BD