অর্জুন গাছ হল একটি ঔষধি গাছ যা ভারতে আদিকাল থেকে এখন পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে। অর্জুন গাছের ছালের বিশেষ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
আজকের আলোচনায় এই গাছের ছালের কিছু সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা ও পরিচিতি সম্পর্কে নিম্নে জেনে দেওয়া হলো-
জেনে নিন অর্জুন গাছের ছালের উপকারিতা
অর্জুন গাছের ছালে প্রচুর পরিমাণে অ্যালকালডীয় ও গ্লাইকোসাইডীয় (Alkaloid and glycosidic) উপাদান রয়েছে। বেশীরভাগ ক্ষেত্রে ঔষধি কাজে অর্জুন গাছের ছাল ব্যবহৃত হয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে পাতা ও ফল ব্যবহার করা হয়।
বাংলাদেশের বিভিন্ন কবিরাজ ও আয়ুর্বেদিক ঔষধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অর্জুন গাছের ছাল, পাতা ও ফল দিয়ে বিভিন্ন ঔষধ তৈরি করা হয় মানুষের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য।
অ্যাজমা থেকে মুক্তির উপায়
অনেক লোক আছেন যারা প্রতিনিয়ত আমাশয় ভোগেন। তাদের ক্ষেত্রে এই রোগ থেকে প্রতিকার পাওয়ার জন্য অর্জুন গাছের ছাল গুড়ো করে ছাগলের দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে আমাশয়ের সমস্যা অনেকটাই কমে যায়।
ক্যান্সার প্রতিরোধ
গবেষণায় দেখা গেছে অর্জুন গাছের ছালে গ্যালিক অ্যাসিড আর লুটেনোনিন রয়েছে। এই দুটি উপাদানের কারণে এই গাছের ছালের রস আপনি নিয়মিত খেলে ক্যান্সার থেকে কিছুটা দূরে থাকতে পারবেন।
হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে
আমাদের মধ্যে অনেক লোক আছে যাদের হজম ক্ষমতা বা হজম শক্তি খুবই কম। তারা প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম অর্জুনের ছালের রস খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে।
হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধের উপায়
অর্জুন গাছের ছালের রসে কো-এনজাইম কিউ-১০ সমৃদ্ধ। এইকো-এনজাইম কিউ-১০ হৃদরোগ এবং হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়। তাছাড়াও এই গাছের ছালের রস ব্লাডপ্রেসার এবং কোলেস্টেরল লেভেল কমায়।
হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়াতে
অর্জুনের ছাল বেটে রস খেলে হৃদপিন্ডের পেশি শক্তিশালী হয় এবং হৃদযন্ত্রের ক্ষমতা বাড়ে। বাকলের ঘন রস দুধের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে খেতে হবে। বাকলে রস না থাকলে শুকনো বাকলের গুঁড়া ১-২ গ্রাম দুধের সাথে মিশিয়ে সকালে খালিপেটে খেতে হবে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করতে
রক্তে নিম্ন চাপ থাকলে অর্জুনের ছালের রস নিয়মিত সেবন করলে দ্রুত উপকার পাওয়া যায়। বিশেষ করে রক্তক্ষরণ হলে ৫ থেকে ৬ গ্রাম এই গাছের ছাল রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেকে খেলে রক্তের এই সমস্যা থেকে উপকার পাওয়া যায়।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধির উপায়
অর্জুন গাছের ছাল ত্বকের সমস্যা দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে অর্জুন গাছের ছাল, বাদাম, হলুদ এবং কর্পূর সমান পরিমাণ মিশিয়ে পেস্ট করে ত্বকের উপর লাগালে মুখের যেকোন কালো দাগ দূর হয় এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
অর্জুন গাছ পরিচিতি
এর পাতা অনেকটা পেয়ারা গাছের পাতার মত ।
প্রচলিত নাম- অর্জুন
ইউনানী নাম- লেসানুল ইনসান
আয়ুর্বেদিক নাম- অর্জুন
ইংরেজী নাম – Arjuna
বৈজ্ঞানিক নাম – Terminalia arjuna (Roxb.)
পরিবার – Combretaceae
সাধারণত অর্জুন গাছ ২০ থেকে ২৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। এর পাতা দেখতে অনেকটা পেয়ারা গাছের পাতার মত। শীতের সময় এই গাছের পাতা ঝরে যায় এবং বসন্তের সময় নতুন পাতা গজায়। অর্জুন গাছের ফুল হলুদ বর্ণের হয়। এর ফল দেখতে ছোট জাতের কামরাঙ্গার মত হয়।
পরিশেষে:
অর্জুন গাছের ছালের সম্ভাব্য স্বাস্থ্য উপকারিতা পেতে হলে উপরে থাকা সমস্ত নিয়মগুলো মেনে চললে আপনার সমস্যা দূর করতে সাহায্য করবে।
সূত্র:- Right News BD