বর্তমানে অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি প্রযুক্তির সঙ্গে আমরা এত বেশি সম্পর্কিত যে, কিছুক্ষণ এ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকলে আমরা চিন্তায় পড়ে যাই।
কিন্তু এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা মোবাইলে কোনো নোটিফিকেশন ছাড়াই অন্তত ১৫ মিনিট পর পর একবার হলেও তাদের ফোন চেক করেন।
অনলাইন আর অফলাইনের এই ২ সময়ের মধ্যে অনেকেই বর্তমান সময়ে অনলাইনেই বেশি সময় অপচয় করেন। এর ফলে অফলাইনের পৃথিবী কেমন ক্রমেই তা অনেকের কাছে অচেনা হয়ে উঠছে।
আপনাকে যদি চ্যালেঞ্জ দেওয়া হয়, আগামী ১ সপ্তাহ কোনো ফোন চালাতে পারবেন না। তাহলে কি আপনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ছাড়া কাটাতে হবে সর্ব নিম্ন ১ সপ্তাহ।
বর্তমান প্রযুক্তির এই যুগে আমাদের মোবাইল ফোন ছাড়া এক মুহূর্ত চলা সম্ভব নয়। কারণ সেখানে পুরো সপ্তাহ ফোন ছাড়া কাটিয়ে দেওয়া বেশিরভাগ মানুষের পক্ষেই অসম্ভব।
ভার্চুয়াল ছেড়ে বাস্তব দুনিয়ায় পুরোপুরি মনোযোগ দেওয়ার এই পদ্ধতিকে ‘ডিজিটাল ডিটক্স’ বলে। এটি অনেকেই সঠিকভাবে জানেন না।
অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি থেকে মুক্তির উপায়
ডিজিটাল ডিটক্স কী?
ডিজিটাল ডিটক্স হলো ডিজিটাল গ্যাজেট, স্ক্রিন বা ইন্টারনেট থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়া।
বর্তমান সময়ে আমাদের জীবনকে জড়িয়ে রাখা এই ডিজিটাল গ্যাজেট থেকে বিরতি নিয়ে বাস্তব জগতে সময় দেওয়াই ডিজিটাল ডিটক্স।
গ্যাজেট ও স্ক্রিন থেকে সাময়িক বিরতি নেওয়াকেই ডিজিটাল ডিটক্স বলা হয়। আবার অনেকের কাছে এর অর্থ ভার্চুয়াল জগত থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যাওয়া।
ডিজিটাল ডিটক্স কেন দরকার?
আপনার নিজের ওপর ডিজিটাল ডিটক্সের উপকারিতা নির্ভর করে। মানুষের কোন কাজে হেরফের থাকলেও ডিজিটাল ডিটক্স আপনাকে বাস্তব জীবনে ফেরত আনবে।
মোবাইল ফোনের স্ক্রিনের জগত থেকে নতুন করে নিজেকে বাস্তব জগতে আবিষ্কার করবেন।
নিয়মিত স্বাস্থ্যকর অভ্যাস তৈরি হওয়া
সকালে ঘুম থেকে ওঠা থেকে শুরু করে রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত পুরোটা সময় আমরা আটকে থাকি ডিজিটাল দুনিয়ায়।
গুরুত্বপূর্ণ কোনো খবর ছুটে যাওয়ার ভয় থেকে সারাক্ষণই ডিজিটাল দুনিয়ায় ঘুরাফেরা করতে থাকি আমরা। ডিজিটাল ডিটক্সে গেলে বদভ্যাস থেকে বিরতি পাওয়া যায়।
অসুস্থ প্রতিযোগিতা
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের কল্যাণে আমরা প্রত্যেকেই যেন এক অসম প্রতিযোগিতার প্রতিযোগী।
অন্যের সাফল্য দেখে তাঁদের মতো হতে চাওয়া, সব মিলিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অসুস্থ এক প্রতিযোগিতা তৈরি করে আমাদের মধ্যে।
ডিজিটাল ডিটক্সের সেই প্রতিযোগিতা থেকে অবসরে যাওয়ার সুযোগ করে দেয়।
ভালো ঘুমের ব্যাঘাত
ঘুম থেকে ওঠার পর থেকে ঘুমাতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ডিজিটাল গ্যাজেট আমাদের সঙ্গী। সারা দিনের স্ক্রিনের সামনে থাকা শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের চক্রকে বাধাগ্রস্ত করে।
ডিজিটাল ডিটক্স করলে ঘুমের আগে ফোন চালানো অনেকাংশেই কমে আসে। ফলে ঘুমও তুলনামূলক অনেক ভালো হয়।
পুরানো শখ ছেড়ে নতুন কিছু আবিষ্কার করা
ডিজিটাল ডিটক্সের কল্যাণে আবারও পুনর্জীবিত হতে পারে পুরাতন কোন শখ। হতে পারে সেটা ছবি আঁকা, বই পড়া, বাগান করা কিংবা পোস্টকার্ড জমানো।
জীবনকে আরও রোমাঞ্চময় করে তুলতে পারে এই ছোট ছোট শখ।
ডিজিটাল ডিটক্স শুরু করবেন কীভাবে?
হুট করে কাউকে না জানিয়ে হারিয়ে যাবেন, ডিজিটাল ডিটক্সের অর্থ কিন্তু এটা নয়।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বন্ধন থেকে দূরে গিয়ে বাস্তব জীবনে মনোযোগ দেওয়াই হলো ডিজিটাল ডিটক্সের মূল লক্ষ্য।
ডিজিটাল ডিটক্সে যাওয়ার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করা জরুরি।
কাছের মানুষকে জানানো
আপনি যে কিছুদিনের জন্য বিরতি নিচ্ছেন, কাছের মানুষদের তা জানিয়ে রাখুন। এতে করে জরুরি প্রয়োজনে তারা আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন।
স্ক্রিন টাইম কমিয়ে দিলে অন্য কোন উপায়ে আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারবেন, সেটি জানান।
লক্ষ্য ঠিক করুন
ডিটক্স শুরু করার আগে লক্ষ্য ঠিক করা জরুরি। আপনি কি ডিজিটাল লাইফ থেকে পুরোপুরি বিরতিতে যাচ্ছেন, নাকি সময় কমিয়ে ফেলছেন, এই লক্ষ্য ঠিক করে কাজ শুরু করুন।
লক্ষ্য ঠিক থাকলে ডিটক্স করতে সুবিধা হবে, তেমনই জরুরি প্রয়োজনে আপনার সঙ্গে যোগাযোগের ব্যাপারেও অন্যান্য মানুষজনও সতর্ক হবে।
বর্তমান যুগে প্রতিটি মুহূর্তে আমাদের আগলে রয়েছে ডিজিটাল ডিভাইস। এই সময়ে এসে সত্যিই কি ডিজিটাল ডিটক্স করা সম্ভব? শুরু করলেও তা কি ধরে রাখা যায়? উত্তরটা লুকিয়ে আছে আপনার মাঝেই। চাইলে সবকিছুই সম্ভব। দৈনন্দিন কাজে চলতে-ফিরতে ফোন আমাদের সঙ্গী।
পরিশেষে
বিশেষ করে ডিজিটাল এই যুগে অতিরিক্ত মোবাইল আসক্তি ওপর নির্ভরতা অনেকগুণ বেড়ে গেছে।
যে কারণে পুরোপুরি ডিটক্সে যাওয়া হয়তো সম্ভব না। অন্তত ১ সপ্তাহ অথবা ১ ফোন ব্যবহার করা ছেড়ে দেখুন, বাস্তবে জীবনটা কতখানি পরিবর্তন হয়ে যাবে।
সূত্র:-Right News BD