বিশ্বের অনেক মানুষ অল্প বয়সে মৃত্যু হওয়ার সবচেয়ে বড় কারণ কি জানেন? তা হলো স্ট্রোকের কারণ-এ বলা যেতে পারে। তাছাড়া স্ট্রোক হলে একজন ব্যক্তির শারীরিক দিক দিয়ে বিভিন্ন সমস্যায় পড়ার আশঙ্কা থাকে।
আপনি যদি আজকে আমাদের সাইট Right News BD-তে প্রথম এসে থাকেন, তাহলে স্ট্রোকের কারণ, লক্ষণ ও ঝুঁকি এড়ানোর বিষয়গুলো জানতে পোস্টটির A টু Z পর্যন্ত পড়তে থাকুন।
ব্রেন স্ট্রোকের কারণ কি এবং কেন হয়?
সাধারণ ভাষায় স্ট্রোক বলতে মস্তিস্কে রক্ত চলাচলে ব্যাঘাত ঘটাকেই বোঝানো হয়। মস্তিস্কের কোন অংশে রক্ত সরবরাহের ঘাটতি দেখা দিলে সেই অংশের কোষ কার্যক্ষমতা হারায়। আর এই অবস্থাটাই স্ট্রোক বলে ধরা হয়।
স্ট্রোক মূলত দুই ধরণের হয় যেমন-
(১) রক্তক্ষরণ জনিত বা হেমোরেজিক স্ট্রোক
(২) স্কিমিক স্ট্রোক, এতে রক্তক্ষরণ হয় না।
তাছাড়া স্ট্রেক মৃত্যুর কারণ হতে পারে। সে কারণে স্ট্রোকের লক্ষণ দেখা দিলে জরুরিভিত্তিতে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।
কাজ করার জন্য শরীরের অন্যান্য অঙ্গের মত রক্তের মাধ্যমে মস্কিস্তের অক্সিজেন ও পুষ্টির প্রয়োজন হয়। কিন্তু এই রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে গেলে ব্রেনের সেলগুলো মারা যেতে শুরু করে। এর ফলেই ব্রেন ইঞ্জুরীর শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যাওয়া এমনকি মৃত্যুর আশঙ্কা বেশি থাকে।
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এনএইচএস (NHS) জানিয়েছে স্ট্রোক প্রধানত ২টি কারণে হয়ে থাকে।
স্কিমিক স্ট্রোক: রক্ত জমাট বাঁধার কারণে রক্ত প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়।
হেমোরেজিক স্ট্রোক: মস্কিস্কে রক্ত সরবরাহকারী দূর্বল রক্তনালী ফেটে যায়, যার ফলে রক্তক্ষরণ হয়। এই অবস্থাকেই হেমোরেজিক স্ট্রোক বলা হয়।
এছাড়া আর একটি কারণ রয়েছে সেটা হলো সাময়িক সময়ের জন্য মস্তিস্কে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। এটাকে অনেকে মিনি স্ট্রোক বা মাইল্ড স্টোকও বলা হয়।
এটি ১৫ সেকেন্ড থেকে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে বলে এনএইচএস জানাচ্ছে। এই অবস্থায় খুব দ্রুতই চিকিৎসার পরামর্শ দিচ্ছে ব্রিটেনের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগ কারণ স্ট্রোকের ফলে কোন ব্যক্তি বড় ধরণের স্ট্রোকের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।
লক্ষণগুলো দেখা মাত্র দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। এরপর সিটি স্ক্যান বা এমআরআই করে দেকতে হবে এটি কোন ধরণের স্ট্রোক। আর এর উপরেই মূলত সঠিক চিকিৎসা নির্ভর করে। রক্ত জমাট বাঁধা দূর করতে, রক্তচাপ এবং কোলেস্ট্রেরলের পরিমাণ কমাতে অনেকের ক্ষেত্রে ওষুধ ও ফিজিওথেরাপি কাজ করে। তবে কিছু ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বেশি বাঁধলে রোগীর সার্জারিও করাতে হয়। স্ট্রোকের ক্ষেত্রে ডায়াগনোসিস বা রোগ নির্ণয় করা খুবই জরুরী। যত তাড়াতাড়ি এই রোগের চিকিৎসা শুরু হবে রোগীর সুস্থ হওয়ার সুযোগ তত বেশি থাকবে।
স্ট্রোকের লক্ষণ কি কি?
ব্রিটেনের জাতীয় স্বাস্থ্য সেবা এনএইচএস (NHS) স্ট্রোকের লক্ষণ সম্পর্কে বেশ কিছু কথা উল্লেখ করেছে যেমন-
- স্ট্রোক হলে ব্যক্তির একপাশে মুখ ঝুলে যেতে পারে।
- হয়তো হাসতে পারবেন না বা ভালোভাবে কথাও বলতে পারবেন না।
- মুখের একপাশ বেঁকে যেতে পারে বা অবশ হয়ে যেতে পারে।
- কারো কারো ২ হাত অবশ হয়ে যেতে পারে।
- অবশ না হলেও হাত নাড়াতে দূর্বল মনে হতে পারে।
- আবার কারো কারো শরীরের এক পাশ অবশ হয়ে যায়।
- আস্তে কথা বলা বা কথা জড়িয়ে যাও।
- কথা বললেও সেটা অস্পষ্ট শোনা যায়।
- অনেক সময় বুঝতেও পারেন না অনেক রোগী।
স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে নিজেকে রক্ষা করার উপায়
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেকোনো ব্যক্তি যদি চর্বি জাতীয় খাবার ও ধূমপান এড়িয়ে চলেন, হাইপার টেনশন থাকলে সেটি নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারলে তাহলে স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকটাই এড়ানো সম্ভব।
এছাড়াও উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস থাকলে তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখার চেস্টা করতে হবে। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামও করতে হবে।
পরিশেষে:
গত ২০২০ সালে বিশ্বে প্রায় ৬৬ লক্ষেরও বেশি মানুষ স্ট্রোকের কারণে মারা যায়। গবেষণায় আরো জানা যায় আগামী ২০৫০ সালে এই সংখ্যা বেড়ে দাড়াবে ৯৭ লক্ষ। তাছাড়া পুরো বিশ্বে মৃত্যুর জন্য স্ট্রোকের কারণ হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে।