বেশ কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করে দেখেছি, সারাদিন কম্পিউটারে কাজ করলে আমার ঘাড়ে ব্যথা, চোখে চাপ, আবার কখনো শরীর ক্লান্ত অনুভুত হয়। এগুলো থেকে মুক্তি পেতে এখানে আমার নিজের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি , যা হয়তো একজন পেশাদারের জন্যও কাজে আসবে।
একটানা সারাদিন কম্পিউটারে কাজ করে এমন ব্যবহারকারীদের স্বাস্থ্য বার্তা
বসার ভঙ্গি পরিবর্তন
আমি আগে কম্পিউটারে দীর্ঘ সময় গড়িয়ে বসে কাজ করতাম। দিনের শেষে কোমর ব্যথায় নড়াচড়া করাও কষ্টকর হয়ে যেত।
এরপর আমি একটি আরামদায়ক চেয়ার কিনি এবং টেবিলের উচ্চতা সমন্বয় করি।
কম্পিউটারে কাজের সময় মনিটরটি চোখের থেকে প্রায় ২৫-৩০ ইঞ্চি দূরে রাখলাম। তারপর পিঠ সোজা করে কাজ করার অভ্যাস তৈরি করলাম।
এই অভ্যাস প্রথমে একটু অস্বস্তি লাগলেও কয়েকদিন পর আমার কোমর আর ঘাড় ব্যথা অনেকটাই কমে গেছে।
চোখের যত্ন
আমি জানি, দীর্ঘ সময় বা সারাদিন কম্পিউটারের দিকে তাকিয়ে কাজ করলে চোখের জন্য অনেক ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। প্রথম প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে ভাবতাম না।
হঠাৎ একদিন সন্ধ্যায় চোখ দিয়ে পানি পড়া সহ প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করি। তারপর থেকে আমি ২০-২০-২০ নিয়মটি মেনে চলি।
কম্পিউটারে কাজের ক্ষেত্রে প্রতি ২০ মিনিটে কম্পিউটার থেকে চোখ সরিয়ে ২০ সেকেন্ডের জন্য ২০ ফুট দূরের কোনো জিনিস দেখি। মূলত ছোট এই অভ্যাসটি আমার চোখকে অনেকটাই আরামদায়ক অনুভূতি ফিরিয়ে দেয়।
কিছু সময় বিরতি নেওয়া
আমি একসময় কম্পিউটারে কাজের মধ্যে এতটাই মগ্ন হয়ে যেতাম যে বিরতি নেয়ার কথা ভুলেই যেতাম। কিন্তু এখন প্রতিদিন কাজের ফাকে নির্দিষ্ট একটি টাইমার সেট করি।
সেই সময় অনুযায়ী আমি প্রতি ঘণ্টায় ৫ মিনিটের জন্য উঠে হাঁটি, পাশাপাশি জানালা দিয়ে বাইরের প্রাকৃতিক দৃশ্য দেখি।
বিরতি সময়ে এটা শুধু আমার শরীরের জন্য নয় পাশাপাশি মনের দিক দিয়েও চমৎকার কাজ করে।
ব্যায়ামের গুরুত্ব
ব্যায়াম শরীরের জন্য এতটা গুরুত্ব আগে আমি বুঝতাম না। সারাদিন কাজের পর মনে হতো, আর কিছু করার শক্তি নেই।
একদিন আমার বন্ধু বলল, “শরীর সুস্থ না থাকলে তুমি কাজ করবে কীভাবে?” সেদিন থেকে প্রতিদিন সকালে ২০ মিনিট যোগব্যায়াম শুরু করলাম।
ব্যায়ামের গুরুত্ব সময়টুকু আমার দৈনন্দির কাজের ক্ষেত্রে দিন শুরু করার অন্যতম প্রিয় অংশ। সারাদিন কাজ করার জন্য এটি আমাকে এনার্জি জোগায়।
পুষ্টিকর খাবার
বিভিন্ন সময় অতিরিক্ত কাজের চাপের কারণে অনেক সময় খাবার দেরীতে খেতে যেতাম অথবা সময় বাঁতে দ্রুত কিছু জাঙ্ক ফুড খেতাম।
বর্তমানে আমি কম্পিউটার টেবিলের পাশে পুষ্টিকর খাবার হিসেবে কিছু বাদাম, ফল, আর বিশুদ্ধ পানি রাখি।
আমার কাজের ফাঁকে এগুলো খাওয়ার পর মনটা সতেজ লাগে, কাজেও মনোযোগ বেড়ে যায়।
মানসিক চাপ কমানো
সপ্তাহের কোন কোন দিন কাজের চাপ খুব বেশি হলে নিজেকে খুব হতাশ বলে মনে হত।
এখন আমি প্রতিদিন সকালে অন্তত্য ৫ মিনিট ধ্যান করি।
প্রথমে ধ্যান করার সময় চোখ বন্ধ করে শুধু দীর্ঘ শ্বাস নিতে মনোযোগ দিই। এটি আমাকে মানসিক চাপ কমানোর জন্য সাহায্য করে পাশাপাশি মনে শান্তি এনে দেয়।
কম্পিউটারে কাজের ফাঁকে প্রিয় গান শোনা বা কবিতা পড়া অথবা মজার ছোট্ট গল্প পড়াও মানসিক চাপ কমাতে দারুণ কাজ করে।
নিয়মিত অভ্যাসের পরিবর্তন
আমাকে এই অভ্যাসগুলো শিখিয়েছে, নিজের প্রতি যত্ন নেওয়া। এই অভ্যাসগুলো কোনো বিলাসিতা নয়, নিজের শরীর সুস্থ্য রাখার ক্ষেত্রে এক ধরনের বড় দায়িত্ব বলা যায়।
বর্তমানে আমি সারাদিন কম্পিউটারে কাজ করলেও এখন আর কোন রকম ক্লান্ত অনুভুতি মনে হয় না।
আপনী যদি পেশাদারভাবে কাজ করেন তাহলে এমন সমস্যাগুলো থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে কমপেক্ষ একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন।
আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলছি এগুলো অভ্যাস আপনার জীবনে নতুন আনন্দ নিয়ে আসবে।
সূত্র: Right News BD