জানেন কি? ঘুম আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য কতটা জরুরি? কিন্তু বর্তমান জীবনের চাপ, কাজের ব্যস্ততা, এবং প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারের কারণে অনেকেই রাতে পর্যাপ্ত ঘুম পেতে ব্যর্থ হন। চলুন জেনে নেওয়া যাক, পর্যাপ্ত ঘুম না হলে কী কী করণীয়।
কেন রাতে পর্যাপ্ত ঘুম জরুরি?
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। এটি আমাদের মনোযোগ কমায়, সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দুর্বল করে এবং মানসিক চাপ বাড়ায়।
বিশেষ করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি ভালো ঘুমের গুরুত্বকে নষ্ট করে।
পর্যাপ্ত ঘুম না হলে করণীয়:
একটি নির্দিষ্ট রুটিন মেনে চলুন
প্রতিদিন যথা সময়ে ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে ওঠার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
আমি নিজে একটা সময় অগোছালো রুটিনের কারণে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারতাম না। পরে নির্দিষ্ট সময় মেনে চলা শুরু করি এবং এর সুফল পেয়েছি।
প্রযুক্তির ব্যবহার সীমিত করুন
ঘুমানোর ১ থেকে ২ ঘণ্টা আগে মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, বা ল্যাপটপের স্ক্রিন এড়িয়ে চলুন।
এসব ডিভাইসের স্ক্রিন থেকে নির্গত ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদনে বাধা দেয়, যা ঘুমের প্রক্রিয়াকে ব্যাহত করে।
স্ক্রিন এড়ানোর জন্য আমি ঘুমানোর আগে পডকাস্ট শুনি বা মৃদু সুরের গান শুনি। এতে মানসিক শান্তি আসে এবং ঘুম সহজ হয়।
আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশ তৈরি করুন
ঘরের তাপমাত্রা, আলো, এবং শব্দের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন।
ঠান্ডা ও আরামদায়ক পরিবেশে ঘুমাতে সুবিধা হয়। সম্ভব হলে, মৃদু আলো ব্যবহার করুন এবং ঘরের বাইরে থেকে আসা অতিরিক্ত শব্দ বন্ধ করার চেষ্টা করুন।
ঘুমানোর আগে আমি একটি সুগন্ধি মোমবাতি জ্বালাই, যা ঘুমের পরিবেশ তৈরি করতে সাহায্য করে।
সঠিক খাদ্যাভ্যাস বজায় রাখুন
ঘুমানোর আগে ক্যাফেইনযুক্ত পানীয়, যেমন চা বা কফি এড়িয়ে চলুন। পাশাপাশি, হালকা খাবার খান। অতিরিক্ত ভারী খাবার ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
রাতে আমি হালকা স্যুপ বা ফল খেতে পছন্দ করি, যা ঘুমানোর সময় আরাম দেয়।
শারীরিক ব্যায়াম করুন
প্রতিদিন নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। তবে ঘুমানোর আগে ভারী ব্যায়াম এড়িয়ে চলুন।
আমি সকালে ৩০ মিনিট হাঁটি, যা শুধু স্বাস্থ্যই ভালো রাখে না বরং রাতে ভালো ঘুম আনতেও সাহায্য করে।
মেডিটেশন বা শিথিলকরণ অভ্যাস গড়ে তুলুন
স্ট্রেস এবং মানসিক চাপ কমাতে মেডিটেশন বা ডিপ ব্রিদিং এক্সারসাইজ কার্যকর হতে পারে। এটি মনকে শান্ত করে এবং দ্রুত ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করে।
আমি প্রতিদিন ঘুমানোর আগে ১০ মিনিট গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের অনুশীলন করি, যা আমাকে মানসিক শান্তি দেয়।
ডাক্তারের পরামর্শ নিন
যদি দীর্ঘদিন ধরে ঘুমের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তবে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সঙ্গে পরামর্শ করুন। কারণ এটি কোনো স্বাস্থ্য সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।
ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা
আমারও কিছুদিন আগে ঘুমের অভাবের সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তখন বুঝতে পারি, ঘুমের অভাব শুধু শারীরিক নয়, মানসিক চাপও বাড়িয়ে তোলে।
আমি নির্দিষ্ট রুটিনে রাতে চা পান করি এবং ঘুমানোর আগে গল্প, কবিতার বই পড়ি। এতে ধীরে ধীরে ঘুমের মানোন্নতি হতে থাকে।
আপনাদের সঙ্গে এই অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিলাম যাতে আপনাদেরও উপকারে আসে।
পর্যাপ্ত ঘুম আমাদের জীবনযাত্রার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
ঘুমের অভাব শুধু দৈনন্দিন কাজকর্মকে ব্যাহত করে না, বরং দীর্ঘমেয়াদে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হতে পারে।
উপরের করণীয় গুলি মেনে চললে শরীর ও মন ভালো থাকবে। বিশেষ করে ভালো ঘুম মানেই ভালো স্বাস্থ্য।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন
উত্তর: প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য রাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম গুরুত্বপূর্ণ। এটি স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। শিশুদের জন্য ঘুমের প্রয়োজন আরও বেশি।
উত্তর: স্ক্রিন টাইম এড়িয়ে চলুন, হালকা বই পড়ুন, এবং গভীর শ্বাস নিন। শিথিলকরণ চর্চা ঘুম আনতে সাহায্য করে। সমস্যায় পড়লে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
উত্তর: মোবাইল ফোনের ব্লু লাইট মেলাটোনিন হরমোন উৎপাদন কমায়। এটি ঘুমের চক্রে বাধা দেয়, তাই ঘুমানোর আগে ফোন ব্যবহার এড়ানো উচিত।
উত্তর: ঘুমের অভাবে ক্লান্তি, মনোযোগের অভাব, এবং মানসিক চাপ দেখা দিতে পারে। এটি দীর্ঘমেয়াদে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, এবং উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি বাড়ায়।
উত্তর: নিয়মিত রুটিন মেনে চলুন, শারীরিক ব্যায়াম করুন, ক্যাফেইন এড়িয়ে চলুন, এবং ঘুমানোর আগে আরামদায়ক পরিবেশ তৈরি করুন।
সূত্র: Right News BD