আজকের পোষ্টে আবারো চলে আসা মাহে রমজানের ফজিলত নিয়ে মুসলিম ভাই-বোনদের কিছু জেনে দিতে চলেছি। আশাকরি রমজান মাসের ফজিলতগুলো জানলে অনেক কিছুই জানতে পারবেন।
আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অশেষ মেহেরবানীতে সুস্থতার সাথে আবারো রমজান মাস আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।
আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের জন্য মাহে রমজান মুমিনদের প্রতি আল্লাহ তা’য়ালার এক বিশেষ নেয়ামত। রমজানের মাসে আল্লাহ তা’য়ালার পক্ষ থেকে কল্যাণের সকল দরজা খুলে দেয়া হয় এবং অকল্যাণের পথসমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়।
রমজানের মাস বিশেষ করে প্রত্যেক মুসলিম ভাই-বোনদের জন্য ধৈর্যের মাস, ত্যাগের মাস, গরীব-দুঃখী ও ক্ষুধা কাতর মানুষের কষ্ট অনুভব করার মাস। তাই রমজানের সময় বেশি বেশি সাদাকাহ করে আত্মশুদ্ধি ও সম্পদকে পরিশুদ্ধ করার মাস। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিশ্ববাসীর হেদায়াতের জন্য রমজান মাসেই নাযিল করেছেন মহাগ্রন্থ ‘‘আল কুরআন’’। আর রমজান মাসের মধ্যেই রয়েছে হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ রাত ‘লাইলাতুল ক্বদর’। আর মাহে রামজানের প্রতিটি আমলের বিনিময়ে অন্য মাসের চেয়ে বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়া হয়।
মাহে রমজানের ফজিলত মুসলমানদের জন্য ঐতিহাসিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয় হিজরী সনে ১৭ই রামজানে সংগঠিত হয় ঐতিহাসিক ‘বদর যুদ্ধ’। তিনগুণের অধিক সৈন্যের বিরুদ্ধে মুসলমানদেরকে আল্লাহ তা’য়ালা বিজয় দান করে দেখিয়ে দিয়েছেন। ইসলামের বিজয় সংখ্যা নয় বরং নৈতিক ভিত্তির উপর নির্ভরশীল।
তাই রমজানের এই মাসে আত্মশুদ্ধি ও আত্মত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হয়ে, বর্তমান প্রতিকূল অবস্থায় দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উন্নত নৈতিক গুনাবলী অর্জন করে ঈমানের পরিপূর্ণতা লাভে অগ্রগামী হতে হবে।
মুমিনদের জন্য মাহে রমজানের এই মাসে আল্লাহ পাকের অনুগ্রহ লাভের এক সুবর্ণ সুযোগ। আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনুল কারীমে ঘোষণা করেছেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরজ করা হয়েছে, যেমন ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারো”- [সুরা আল বাকারা-১৮৩]।
“রামজানের মাসে নাজিল করা হয়েছে আল কুরআন, মানবজাতির পথ প্রদর্শকরূপে, হেদায়াতের সুস্পষ্ট দলিল-প্রমাণরূপে এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী হিসেবে”- [সুরা আল বাকারা-১৮৫]
রাসূলুল্লাহ এরশাদ করেছেন, “যে ব্যক্তি সিয়ামরত অবস্থায় মিথ্যা কথা এবং অন্যায় কাজ ও আচরণ পরিহার করে না, তার পানাহার বর্জন করায় আল্লাহর কোন প্রয়োজন নেই [সহীহ আল বুখারী]
মাহে রমজানের ফজিলত মাসে প্রিয় মুসলিম ভাই-বোনদের উদ্দেশ্যে
মাহে রমজানের মাসে আত্মশুদ্ধি ও আত্মগঠনের লক্ষ্যে করণীয়:
আল কুরআন:
তাফহীমুল কুরআন ১৮ ও ১৯ তম খন্ড এবং সুরা আল বাকারা-১৮৩ ও ১৮৫ আয়াত। পুরো কুরআন অর্থ সহ তেলাওয়াতের চেষ্টা করা।
আল হাদিস:
তাহারাত, সালাত, সিয়াম, জিহাদ, আখেরাত ও চরিত্র গঠন সংক্রান্ত অধ্যায়।
ইসলামী সাহিত্য:
(১) নামাজ-রোযার হাকিকত (২) যাকাতের হাকিকত (৩) হেদায়াত
তা’লিমুল কুরআন:
সহীহ তেলাওয়াত শিক্ষার ব্যবস্থাকে পারিবারিকভাবে, মসজিদ ভিত্তিক, পাড়া-মহল্লা কেন্দ্রিক ব্যাপক রূপ দেয়ার চেষ্টা করা। পাশাপাশি মৌলিক বিষয়ে বাছাইকৃত আয়াত ও হাদিস মুখস্থ করা।
মাহে রামজানের রোজার প্রস্তুতিস্বরূপ শাবান মাসে কিছু রোজা রাখা:-
আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : রাসূলুল্লাহ ছাড়া অন্য মাসের গোটা অংশ রোজা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে অধিক সিয়াম পালন করতে দেখিনি” [সহীহ আল-বুখারী: ১৮৬৮]
যে কাজগুলো রামজানের এই মাসে ইবাদত বন্দেগীতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে, সেগুলো এই মাসের পূর্বে দ্রুত সমাপ্ত করার চেষ্টা করা।
রোজার মাসয়ালা-মাসায়েল জেনে নেয়া এবং রামজানের ফজিলত অবগত হওয়া। স্ত্রী-পুত্রসহ পরিবারের সকল সদস্যকে নিয়ে পারিবারিক বৈঠক করে রামাদানের মাসয়ালা-মাসায়েল আলোচনা করা এবং ছোটদেরকে রোজা পালনে উদ্বুদ্ধ করা।
জামায়াতের সাথে ফরয সালাত ও তারাবীহ আদায় করা। শেষ দশকে এ’তেকাফ পালনের চেষ্টা করা।
রামজানের মাসে রাসূলুল্লাহ ও জিব্রাইল (আ:) একে অপরকে কুরআন তেলাওয়াত করে শুনাতেন। কুরআন তেলাওয়াত করে শুনানোর সুন্নাতটি কমপক্ষে পরিবারে সদস্যদের মধ্যে চালু করার চেষ্টা করা।
কিয়ামুল লাইল বা তাহাজ্জুদ আদায়ের অপূর্ব সুযোগ কাজে লাগানো। হযরত আবু হুরায়রা (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ বলেন, আল্লাহ তা’য়ালা সেই স্বামীর প্রতি রহম করেছেন যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্ত্রীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তবে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ তা’য়ালা সেই স্ত্রীর প্রতি রহম করেছেন যে নিজে রাতে উঠে তাহাজ্জুদ পড়ে এবং তার স্বামীকে জাগায়। যদি সে উঠতে অস্বীকার করে তবে তার মুখমন্ডলে পানি ছিটিয়ে দেয়। [ আবু দাউদ ও নাসায়ী ]
পারিবারিকভাবে বা পারিবারিক ইউনিটের উদ্যোগে পরিস্থিতির আলোকে পাড়া-প্রতিবেশী ও বন্ধু বান্ধবদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা। পরিস্থিতির আলোকে সাংগঠনিকভাবে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা ।
বেশি বেশি দান-সাদাকাহ
রমজানের এই মাসে মজলুম ভাই-বোন ও নিকট আত্মীয়দের প্রতি খেয়াল রাখা, ইয়াতীমের লালন পালন ও ঋণগ্রস্তদের সহযোগিতা করা।
তওবাতুন নাসূহা (একনিষ্ঠভাবে তওবা করা): আল্লাহ তা’য়ালা বলেছেন: হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো, বিশুদ্ধ তওবা। [ আত-তাহরীম:৮]
“আর হে মুমিনগণ! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা করো, যাতে করে সফলকাম হতে পার।”[সূরা আন-নূর:৩১]
রাসূলুল্লাহ (বলেছেন “ হে মানবজাতী, তোমরা আল্লাহর কাছে তওবা করো। আমি প্রতিদিন তাঁর কাছে ১০০ বার তওবা করি।” [ সহীহ মুসলিম-২৭০২]
রমজানের মাসটি অন্য মাসের তুলনায় ব্যক্তিকে অধিক সাওয়াবের অধিকারী করবে, তাই জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার উপায় এবং অধিক পুরষ্কার লাভের আশায় এ ক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনে যত্নশীল হওয়া।
মাহে রমজান মাসে ধনীদের জন্য বাড়তি আর একটি ইবাদত হলো যাকাত। যাকাত ইসলামের একটি মৌলিক ইবাদাত ও দারিদ্র নিরসনে অর্থনৈতিক শক্তির অন্যতম উৎস- সূরা তওবার ৬০ নং আয়াতে বর্ণিত।
পরিশেষে:
সম্মানিত ভাই-বোনেরা মাহে রমজানের ফজিলত এর এই মাসটি মুমিনের জন্য আল্লাহ পাকের বিশেষ উপহার।
সুতরাং এ মাসে প্রতিটি মুহুর্ত আল্লাহ পাকের সন্তষ্টি লাভের জন্য সময় ব্যয় করার সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করি। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আমাদের ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন, সকল নেক আমল কবুল করুন। মাহে রামজান থেকে যথার্থ ফায়দা হাসিলের তৌফিক দান করুন। ‘আমীন’
সূত্র:- Right News BD