মমতা ব্যানার্জি মুসলিমদের মন নতুন করে বুঝতে চেয়েছেন। বেশ কয়েকদিন ধরে দেখা যাচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাবিরোধী আন্দোলনের গতিবিধি জোরদার হয়েছে। এদিকে মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘিতেও তৃণমূল কংগ্রেসের বামফ্রন্ট-কংগ্রেস জোটের কাছে প্রায় ২৩,০০০ ভোটে পরাজয়ের পর, পশ্চিমবঙ্গে মমতাবিরোধী আন্দোলনের গতিবিধি দেখা যাচ্ছে। ১০ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) বিরোধীরা রাজ্যের বিভিন্ন স্তরে মিটিং, মিছিল ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে।
এদিকে সাগরদীঘির ক্ষয়ক্ষতি পশ্চিমবঙ্গে একটি বড় ধরণের ঘটনার পরিবেশ হিসেবে প্রচারিত হয়েছে। এর মূল বিষয় হল কংগ্রেস তেমন একটি আসনে জয়লাভ করেছে, যেখানে প্রায় ৭০ শতাংশ মুসলিম জনগণ । অস্বীকার করার কোনও পথ নেই যে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস সহ কোনও দলই প্রথমত বাঙালি মুসলমানদের ভোটের সাথে ক্ষমতায় রয়েছে।
সে জন্য তৃণমূলের ছত্রভঙ্গের পর প্রকৃতভাবে বিষয়টি নিয়ে বক্তব্য শুরু হয়েছে। এই বক্তব্যে সিপিআইএম-কংগ্রেস এর নেতারা বলেন, মুসলিমদের ভোট তৃণমূল পর্যায় থেকে ততক্ষনাৎভাবে দূরে সরে যাচ্ছে।
![মমতা ব্যানার্জি মুসলিমদের মন নতুন করে বুঝতে চান](https://i0.wp.com/rightnews-bd.com/wp-content/uploads/2023/03/মমতা-ব্যানার্জি-মুসলিমদের-মন-নতুন-করে-বুঝতে-চান-1.jpg?resize=512%2C176&ssl=1)
কেবল এই বক্তব্যের অনুযায়ী কিছু মূলসুত্র থাকতে পারে। মমতা ব্যানার্জির এ বিষয়ে একটি জরুরী প্রশ্ন হল, কেন সাগরদিঘি আসনে ‘উচ্চ বর্ণের হিন্দু’ দেবাশীষ ব্যানার্জিকে প্রার্থী করলেন? তার বিপরীতে সাগরদিঘীর সকল ভোটারদের দুটি মন্তব্য ছিল। (১) তিনি মমতা ব্যানার্জির মামার আত্মীয়। আর (২) বিক্ষোভটি অত্যাধিক জোরালো। তিনি এতদিন বিজেপিতে ছিলেন। সেই প্রেক্ষিপ্তে পশ্চিমবঙ্গে কেন মমতা ব্যানার্জিকে এমন একটি কেন্দ্রে প্রার্থী করলেন যেখানে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটার মুসলিম।
এই আলাপের দুটি গতিপথ রয়েছে। পঞ্চায়েত নির্বাচনের পূর্বেই বিভিন্ন কারণে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিম সম্প্রদায় তৃণমূল কংগ্রেসের বিপরীতে বেশ ক্ষুব্ধ। সে জন্য তারা ঐক্যবদ্ধভাবে মমতা ব্যানার্জির বিরুদ্ধে ভোট দেন।
পুনরায় তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ মমতা ব্যানার্জির পক্ষে যুক্তি দিচ্ছেন, মমতা ব্যানার্জি আসনটি হারাতে চেয়েছিলেন। মুল বিষয় হচ্ছে, এই বিজয়ের কারণে পশ্চিমবঙ্গে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের কিছুটা হলেও চাঙ্গা হয়ে উঠলে তৃণমূল কংগ্রেস অনেকটা লাভবান হবে। যেকালে, বিজেপির ভোট অনেকটা কমেছে। যেমনটি ঘটেছে সাগরদিঘিতে।
গত ২০২১ সালের নির্বাচনে, বিজেপি সেখানে ২৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল, ২ মার্চ এটি ১৪ শতাংশ ভোট পেয়েছিল। উদাহরণস্বরুপ বিজেপির ভোট ১০ শতাংশ কমেছে এবং বাম-কংগ্রেসের জোটে ভোট ১৯ শতাংশ থেকে বেড়ে গিয়ে ৪৭ শতাংশে পৌছায়।
যথা সময়ে বিজেপির ভোট কমেছে তথা বাম-কংগ্রেসের ভোটও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা কিনা তৃণমূল কংগ্রেসের আশঙ্কা অনেক ভালো নিদর্শন। গত ২০২১ সালের নির্বাচনের সময় ৩৮ শতাংশ ভোট সংগ্রহে তৃণমূলের উপর নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করেছে বিজেপি। বাম-কংগ্রেস জোটের আর্বিভাবের সাথে সাথেই তারা আবারও ২০ শতাংশের দুর্দশায় নেমে গেছে।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস যতদিন ১ নম্বরে থাকবে ততক্ষণ এই সমীকরণ ভালো। সেক্ষেত্রে তা হয়নি। আর সেই কারণেই চার সদস্যের কমিটির সংযোজন করেছেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বর্তমান সময়ে মুসলমানদের মন নতুন করে বুঝতে চান। কমিটির এই পর্যায়ে আগামী সপ্তাহের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে তাদের বক্তব্য পেশ করবে।
সেই বক্তব্য অনুযায়ী তৃণমূলের সকল নীতির উত্থান হবে কি না এবং তা হলে সংখ্যাগরিষ্ঠের ওপর কীরকম প্রভাব পড়বে? তার উপরে পঞ্চায়েত নির্বাচনের পূর্বেও সেদিকেই ভালোভাবে নজর থাকবে।
সূত্র:- Right News BD