আজকের এই আর্টিকেলে আমরা বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ি তৈরি করার সহজ পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করবো।
বাসমতি চাল দিয়ে তৈরি এই ভুনা খিচুড়িটি একটি জনপ্রিয় বাঙালি রান্না যা মসলাযুক্ত এবং সুগন্ধি চালের মিশ্রণে তৈরি করা হয়।
বিশেষত শীতকাল এবং বৃষ্টির দিনে এটি বাঙালি পরিবারের জন্য একটি কমফোর্ট ফুড হিসেবে পরিচিত।
বাঙালি রান্নার মধ্যে খিচুড়ি এক ধরনের ঐতিহ্যবাহী খাবার, যা পোলাও বা সাধারণ সাদা খিচুড়ির তুলনায় একটু মসলাযুক্ত এবং সুগন্ধি হয়ে থাকে।
বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ি কি?
এই ভুনা খিচুড়ি একটি সুগন্ধি এবং মসলাযুক্ত খিচুড়ি, যা বিশেষভাবে বাসমতি চাল দিয়ে তৈরি করা হয়।
এতে সাধারণত মুগ ডাল, পেঁয়াজ-রসুন, মসলার মিশ্রণ এবং সুগন্ধি বাসমতি চাল ব্যবহার করা হয়।
ভুনা রান্নার মাধ্যমে চাল এবং ডাল একসাথে রান্না করা হয়, যার ফলে একটি বিশেষ ধরনের খিচুড়ি তৈরি হয় যা মসলা এবং চালের পুরোটা স্বাদ উপভোগ করা যায়।
বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ির উপকরণ
মূল উপকরণ:
- বাসমতি চাল (Basmati Rice) – সুগন্ধি এবং দীর্ঘ দানার চাল।
- মুগ ডাল (Moong Dal) – সহজে রান্না হওয়া এবং পুষ্টিকর ডাল।
- পেঁয়াজ (Onion) – মসলা তাজা করার জন্য।
- রসুন (Garlic) – রান্নায় অতিরিক্ত সুগন্ধ আনে।
- আদা (Ginger) – খিচুড়ির স্বাদ বাড়ায়।
- তেল (Oil) – রান্নার জন্য।
- ঘি (Ghee) – সোনালী রং এবং স্বাদ দেয়।
মসলা:
- জিরা (Cumin Seeds) – ভুনা রান্নার জন্য মূল মসলা।
- ধনে গুঁড়ো (Coriander Powder) – বিশেষ স্বাদ আনে।
- লঙ্কা গুঁড়ো (Chili Powder) – মসলার তাপ বৃদ্ধি করে।
- হলুদ গুঁড়ো (Turmeric Powder) – রং এবং সুগন্ধের জন্য।
- কালো গোলমরিচ (Black Pepper) – মশলা তেজী করে।
- বাড়তি মিষ্টি মশলা (Sweet Spices) – শুকনো মশলা যেমন দারচিনি, এলাচ ইত্যাদি।
সিজনিং:
- লবণ (Salt) – স্বাদ অনুযায়ী।
- গরম মসলা (Garam Masala) – খিচুড়ির শেষের স্বাদ।
বাসমতি চালের খিচুড়ি তৈরি করার পদ্ধতি
ধাপ ১: চাল ও ডাল ধোয়া
প্রথমে, বাসমতি চাল এবং মুগ ডাল আলাদা করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
চাল এবং ডাল ধুয়ে পানি ঝরিয়ে রাখুন।
এটি খিচুড়ি তৈরির আগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যাতে রান্নার সময় চাল এবং ডাল ঝরঝরে এবং আলাদা আলাদা থাকে।
ধাপ ২: মসলা প্রস্তুতি
একটি কড়াইয়ে তেল বা ঘি গরম করুন। এতে প্রথমে জিরা দিন এবং কিছু সেকেন্ডের জন্য ভাজুন। তারপর পেঁয়াজ কুচি দিয়ে সোনালি হওয়া পর্যন্ত ভাজুন।
এরপর আদা ও রসুন বাটা বা কুচি যোগ করুন এবং হালকা বাদামী রঙ হওয়া পর্যন্ত ভাজতে থাকুন।
ধাপ ৩: মসলা মেশানো
এখন, ধনে গুঁড়ো, লঙ্কা গুঁড়ো, হলুদ গুঁড়ো, কালো গোলমরিচ, এবং অন্যান্য মশলা যোগ করুন। ভালভাবে মেশান এবং কিছু সময় ভুনা করুন যাতে মসলা পুরোপুরি মিশে যায়।
ধাপ ৪: চাল ও ডাল যোগ করা
এখন, ধুয়ে রাখা বাসমতি চাল এবং মুগ ডাল যোগ করুন।
মসলা এবং চাল-ডাল ভালভাবে মেশান যাতে মসলা চালের সঙ্গে ভালোভাবে মিশে যায়।
ধাপ ৫: পানি যোগ করা
চালের সঙ্গে মসলা মেশানো হলে, এবার পরিমাণমতো গরম পানি যোগ করুন। সাধারণত, ১ কাপ চালের জন্য ২ কাপ পানি প্রয়োজন হয়, তবে আপনি নিজস্ব পছন্দ অনুযায়ী পানি কম বা বেশি দিতে পারেন। লবণ দিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিন।
ধাপ ৬: রান্না করা
এখন ঢাকনা দিয়ে ঢেকে, কম আঁচে খিচুড়ি রান্না করুন।
মাঝে মাঝে খিচুড়ি নেড়ে দিন যাতে এটি পুড়ে না যায়।
১৫-২০ মিনিট পর, খিচুড়ি ঝরঝরে হয়ে আসবে। রান্না হয়ে গেলে, একটু গরম মসলা ছড়িয়ে পরিবেশন করুন মজাদার বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ি।
কি ভাবে পরিবেশন করবেন
ভুনা খিচুড়ি সাধারণত গরম গরম পরিবেশন করা হয়। পরিপূর্ণ সাধের জন্য জলপাই অথবা আমের আঁচার দিয়ে পরিবেশন করতে পারেন বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ি।
অথবা সাথে টমেটো, খিরাই, বিট, পুদিনাপাতা, কাঁচামরিচ, পিয়াজ, ও গাঁজর দিয়ে তৈরি সালাদ দিয়েও পরিবেশন করতে পারেন, খেতে দারুন লাগবে।
বাসমতি চালের খিচুড়ি রান্নার সহজ টিপস
- চাল এবং ডাল সঠিক অনুপাতে মেশান – খিচুড়ির স্বাদ এবং সঠিক পরিমাণে রান্না হওয়া নিশ্চিত করতে চাল এবং ডাল সঠিক অনুপাতে মেশান।
- ভুনা রান্না ভালোভাবে করুন – মসলাগুলো ভুনা করার সময় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এটি খাবারের স্বাদ এবং সুগন্ধের জন্য দরকার।
- গরম মসলা যোগ করুন – রান্না শেষ হওয়ার আগে গরম মসলা দিয়ে খিচুড়ির স্বাদ বাড়িয়ে দিন।
- অতিরিক্ত জল না দিন – খিচুড়ির ভেতরের পানি একটু শুকনো রাখুন, যাতে ঝরঝরে খিচুড়ি তৈরি হয়।
- বিভিন্ন মসলা যোগ করতে পারেন – মসলা যেমন দারচিনি, এলাচ, তেজপাতা ইত্যাদি যোগ করতে পারেন।
বাসমতি চালের খিচুড়ি কেন খাবেন
এইটি একটি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর খাবার যা বাঙালি রান্নার অন্যতম জনপ্রিয় ঐতিহ্যবাহী অংশ।
এটি খাওয়ার বেশ কিছু কারণ রয়েছে। প্রথমত, বাসমতি চালের সুগন্ধ এবং মসলার সঠিক মিশ্রণ খিচুড়িকে বিশেষ স্বাদ দেয়।
ভুনা রান্নার মাধ্যমে মসলাগুলো চালের মধ্যে ভালোভাবে মিশে যায়, ফলে খিচুড়ির স্বাদ আরও গভীর ও তীক্ষ্ণ হয়।
দ্বিতীয়ত, মুগ ডাল এবং বাসমতি চালের সংমিশ্রণে প্রোটিন ও কার্বোহাইড্রেটের ভালো সমন্বয় থাকে, যা শরীরের জন্য পুষ্টিকর।
তৃতীয়ত, এটি সহজে তৈরি করা যায় এবং কম সময়ে একটি কমপ্লিট মিল (Complete Meal) হিসেবে খাওয়া যায়, বিশেষ করে বৃষ্টির দিনে বা শীতকালীন রাতে।
এর পাশাপাশি, ভুনা খিচুড়ি সাধারণত গরম গরম পরিবেশন করা হয়, যা শরীরকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে।
FAQs
বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ি রান্নায় সাধারণত ৩০-৪০ মিনিট সময় লাগে, যার মধ্যে চাল ও ডাল ধোয়া, মসলা ভুনা এবং রান্নার সময় অন্তর্ভুক্ত।
হ্যাঁ, বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে মাংস, যেমন মুরগির মাংস বা মটন, পরিবেশন করা যেতে পারে। এটি খিচুড়ির স্বাদ আরও বাড়িয়ে দেয়।
ভুনা খিচুড়ি সুগন্ধি হয় কারণ এতে ব্যবহৃত হয় সুগন্ধি বাসমতি চাল, মসলাযুক্ত রান্না এবং ঘি। ভুনা রান্নার মাধ্যমে মসলাগুলি চালের মধ্যে ভালোভাবে মিশে গিয়ে একটি বিশেষ সুগন্ধ তৈরি হয়।
হ্যাঁ, আপনি চাইলে মিষ্টি মশলা যেমন দারচিনি, এলাচ বাদেও বাসমতি চালের ভুনা খিচুড়ি তৈরি করতে পারেন। তবে মিষ্টি মশলা ব্যবহার করলে খিচুড়ির স্বাদ আরও উন্নত হয়।
ভুনা খিচুড়ি ঝরঝরে করার জন্য রান্নার সময় চালের পানি কম রাখুন এবং মাঝে মাঝে খিচুড়ি নেড়ে দিন। এতে চালগুলো আলাদা আলাদা হয়ে যাবে।
এই রেসিপিটি অনুসরণ করলে আপনি সহজেই একটি সুস্বাদু এবং সুগন্ধি ভুনা খিচুড়ি তৈরি করতে পারবেন,
যা আপনার পরিবার এবং অতিথিদের মন জয় করবে।
সূত্র: Right News BD