বসন্তের প্রথম দিন কেটেছে ফুল বিক্রি করে

বসন্তের প্রথম দিন এদের মধ্যে কেউই পেশাদার ফুল বিক্রেতা নয়। যে সময়ে আপনি ফুল বিক্রি করছেন, সেই সময়ে হয়তো কেউ ক্লাসে পড়ার কথা, বা বাসন্তী রঙের শাড়ি-পাঞ্জাবি পরে বের হওয়ার কথা। কিন্তু বসন্তের প্রথম দিন ফুল বিক্রি করে কাটিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা ।

আপনি যদি মনে করেন যে এই উদ্যোগটি কোনও বাণিজ্যিক, তাহলে আপনি ভুল ভাববেন। বন্ধুকে ভালোবাসে, শিক্ষার্থীরা তাদের এক বন্ধুর জন্য ফুল বিক্রি করতে নেমেছিল।

গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ছিল আন্তর্জাতিক বিভাগের বার্ষিক বনভোজন। প্রথমে সবকিছু ভালোভাবেই চলছিল। তবে বনভোজনের সময় ওই বিভাগের ছাত্রী খাদিজা জাকির অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিষয়টি কতটা শোচনীয় তা কেউই বুঝে উঠতে পারেনি। কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ করে রক্ত বমি শুরু হয় খাতিজার। পরে তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

পরীক্ষা করে জানা যায়, খাদিজা লিভারের সিরোসিসে ভুগছেন। তার পরিবারটি চরম সংকটে রয়েছে। আর্থিক সমস্যাকে পাশে রেখে তারা চিকিৎসাকে গুরুত্ব দেন। খাদিজার উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে।

বসন্তের প্রথম দিন কেটেছে ফুল বিক্রি করে

এমতবস্থায় ঢাকা হাসপাতালের ডাক্তাররা জানিয়েছেন, ১ থেকে দেড় মাসের মধ্যে লিভার পরিবর্তন করতে হবে, এজন্য তাকে ভারতে যেতে হবে। এই চিকিৎসায় খরচ হবে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ লাখ টাকা। তবে খাদিজার বাবা জাকির হোসেন, যিনি একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে কর্মরত, তার খরচ বহন করা প্রায় অসম্ভব বলে মনে করেন। তাই খাতিজার এ রকম বিপদের দিনে তখন সহপাঠী আর বড় ভাইবোনেরা এগিয়ে আসে। তার চিকিৎসার জন্য প্রত্যেকে তহবিল সংগ্রহ করতে শুরু করে।

তহবিল সংগ্রহ সর্বত্র সঞ্চালিত হয় – এটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাম্পাস অবস্থান বা আবাসিক হল হোক। ফেব্রুয়ারিতে, খাদিজার বন্ধুরা একটি অসাধারণ কর্মপ্রচেষ্টার ধারণা নেয়। তারা তাদের সহপাঠীদের ভালবাসার প্রতীক হিসাবে ফুল বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

১৪ ফেব্রুয়ারির পূর্বেই একদল শিক্ষার্থী কম দামে ফুল কিনতে যশোরে গিয়েছিল। যাদের গ্রাম যশোর তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব নেয়। বাকিরা তিন দলে বিভক্ত ছিল। প্যারিস রোডের সৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ভবন ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সামনের চত্বরে তাদের ফুলের দোকান বসানো হয়। এর পূর্বেও বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় জোরপূর্বক প্রচারণা চলছিল। এর ফলে দোকানগুলোতে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে বসন্তের প্রথম দিনেই।

খাদিজার এক সহপাঠী মারিয়া বিনতে মতিন বলছিলেন, ‘যেহেতু আমরা ইতিমধ্যে ফেসবুকে জোরপূর্বক প্রচারণা চালিয়েছি, সেক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে যে অনেকেই ফুল কিনতে এসে প্রথমে ফুল কিনে পরে দোকানে উপহার দিয়েছেন। আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে মানুষের এই ভালোবাসা। এই অনুপ্রেরণা আমরা আমাদের বন্ধুকে দিয়ে যাচ্ছি।

আন্তর্জাতিক বিভাগের সভাপতি সৈয়দ মো. আবদুল্লাহ আল মামুন চৌধুরী ফুলের দোকানে উদ্যোক্তাদের শুভকামনা জানান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘সাধারণত আমরা দেখি, এ ধরনের দিনে শিক্ষার্থীরা হৈচৈ করে, আনন্দ উল্লাস করে।

কিন্তু আজ সে আনন্দ উল্লাস না করে সুদূর যশোর থেকে ফুল নিয়ে নিজ উদ্যোগে কয়েকটি স্টল দিয়েছেন। তবে ভালোবাসা দিবস পালনের উদ্দেশ্য সেটাই। ভালবাসা ছড়িয়ে মানুষের বিপদে এগিয়ে আসছে তারা। সেই থেকে আমার ছাত্রদের কাজ একটি নিদর্শন হয়ে ওঠে।

আবদুল্লাহ আল মামুন আরো বলেন, শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভাগের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। আমাদের বিভাগ নতুন হওয়ায় তেমন কোনো তহবিল নেই। তারপরও আমরা ব্যক্তিগতভাবে এবং বিভাগের পক্ষ থেকে সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যসহ প্রতিটি বিভাগে চিঠি দিয়ে সাহায্য চেয়েছি।

শিক্ষার্থী খাদিজার সুস্থ্যতার জন্য সবাই দোয়া করবেন।

সূত্র:- Right News BD

Write for usHiring writer

Bangla or English

It does not matter which language you are writing in, your writing is meaningful or not that is matters.

Signup Newsletter

Get our update instantly. Subscribe to our newsletter

bn_BDবাংলা